‘ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল চীনের প্রতি পাল্টা জবাব নয়’
২২ অক্টোবর ২০১৮ ২২:১৪
।। এম এ কে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ‘ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল (ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি) সমমনা দেশ জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারত এবং বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়েই বাস্তবায়ন করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এই অঞ্চলের উন্নয়নে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল কোনোভাবেই চীনের নেওয়া উন্নয়ন কৌশলের পাল্টা জবাব নয়। তবে এই অঞ্চলের উন্নয়নে চীনের নেওয়া ভূমিকা খুবই জটিল।’
বাংলাদেশ সফররত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক প্রিন্সিপাল উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস সারাবাংলার এক প্রশ্নের জবাবে সোমবার (২২ অক্টোবর) এমন মন্তব্য করেন।
প্রিন্সিপাল উপসহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস জানান, যুক্তরাষ্ট্রের ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলকে সমর্থন করায় এরই মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশকে ৪ কোটি ডলার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। যে কারণে বেশ কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের রাতারাতি উন্নতি ঘটেছে। এই অঞ্চলের চালকের আসনটি চীনও নিতে চায়, এ জন্য তারাও এই অঞ্চলের উন্নয়নে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক প্রিন্সিপাল উপসহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বিস্তারিত আলাপ (এক্সট্রা কনভারসেশন) হয়েছে। এই কৌশল একটি সমন্বিত উদ্যোগ, যেখানে জাপান, ভারত, অস্ট্রেলিয়াসহ অনেকেই এই উদ্যোগের সঙ্গে রয়েছে। এই কৌশলের অন্যতম বিষয় হচ্ছে বাণিজ্য এবং উন্নয়নের জন্য ভারত মহাসাগরের নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করা। এই উদ্যোগের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিষয় রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই উদ্যোগকে সফল করতে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাত সংশ্লিষ্টরা ৮৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। যেখানে দ্বিপক্ষীয়ভাবে ১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হবে। এই বাণিজ্য থেকে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি দেশই লাভবান হবে। এই উদ্যোগের ফলে বেসরকারি খাতের উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।’
প্রিন্সিপাল উপসহকারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস বলেন, ‘আমি গর্বের সঙ্গে বলতে চাই, বাংলাদেশে অন্যতম এক নম্বর বিনিয়োগকারী দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আবার বাংলাদেশের এক নম্বর রপ্তানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্র। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমাদের দুদেশের মধ্যে খুব চমৎকার সম্পর্ক বিরাজ করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুই সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আন্তর্জাতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে নতুন একটি আইনের ঘোষণা দিয়েছে। এই আইনের অধীনে এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য ৬০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা দেওয়া হবে। এই সব কিছুই করা হচ্ছে এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য। আমরা সবাই মিলে এই কৌশলকে সফল করতে চাই। তার মানে এই নয় যে এই কৌশল চীনের নেওয়া উন্নয়ন কৌশলের পাল্টা জবাব। এই অঞ্চলের উন্নয়নে চীনের নেওয়া ভূমিকা খুবই জটিল। আর ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল বাস্তবায়নের জন্য আগামী ১০ বছরে শুধুমাত্র অবকাঠামো উন্নয়নের জন্যই ব্যয় করতে হবে ২৬ ট্রিলিয়ন ডলার, যা একক কোনো দেশের পক্ষে সম্ভব নয়।’
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশলে অংশ নিতে বাংলাদেশ নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এই কৌশলে বাংলাদেশ কোনো প্রকার যুদ্ধ-বিগ্রহে অংশ নেবে না। বাংলাদেশের কৌশল হচ্ছে বৈশ্বিক অঙ্গন থেকে শান্তিপূর্ণ উপায় উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
এর আগে বাংলাদেশ সফরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের উপমন্ত্রী ড্যান রোজেনব্লুম বলেন, ‘আঞ্চলিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে, আমরা জোট এবং অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠায় আমাদের প্রতিশ্রুতি দ্বিগুণ করতে চাই। নতুন অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক বিস্তার ও গভীর করতে চাই, যারা সার্বভৌম, ন্যায্য ও পারস্পরিক বাণিজ্য, এবং আইনের শাসনকে সম্মান করে। আমাদের দীর্ঘস্থায়ী সামরিক সম্পর্ক দৃঢ় করবো এবং আমাদের মিত্র ও অংশীদারদের সাথে একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্ক তৈরি করতে উৎসাহিত করব। বাংলাদেশ এবং অন্যান্য সমমানসিকতার দেশগুলোর সাথে কাজ করতে আগ্রহী। যাতে সমৃদ্ধশালী, নিরাপদ এবং আন্তঃযোগাযোগের ক্ষেত্রে শক্তিশালি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল বাস্তবায়ন করা যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম সমুদ্রসীমা রয়েছে এবং বেশ কয়েকটি দীর্ঘ মেয়াদী মৈত্রী-জোটের সাথে চুক্তি রয়েছে। এই অঞ্চলে আমাদের রয়েছে বিশ্বের অন্যতম অত্যাধুনিক নৌইউনিট, প্যাসিফিক ফ্লিট, যা এই অঞ্চলের সমমনা দেশগুলোর সঙ্গে অসংখ্য যৌথ মহড়া করেছে এবং প্রায় প্রতিটি দেশের সামরিক বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেছে।’
সারাবাংলা/জেআইএল/এমআই