চলনবিলে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে ২৩টি ভাসমান স্কুল
২৩ অক্টোবর ২০১৮ ০৮:৫৮
।। রানা আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
সিরাজগঞ্জ: চলনবিল। একনামে এর পরিচয় দেওয়া সম্ভব। তবে বিল অঞ্চলে শিক্ষার হার কেমন, ক’বছর আগেও এককথায় এর উত্তর দেওয়া সম্ভব ছিল না। বর্ষাকালে বিলের বাড়িগুলো প্রায় তলিয়ে থাকায় পুরো বিল এলাকার শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ত। এ সময় বিল অঞ্চলের শিশুরা স্কুলে যেতে পারত না। ফলে চলনবিলের কোমলমতি শিশুরা শিক্ষা থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছিল। কিন্তু সেই সমস্যা সমাধান করতে এগিয়ে আসেন চলনবিলের সন্তান রেজোয়ান।
১৯৯৮ সালের দিকে চলনবিলের শিক্ষা বঞ্চিত শিশুদের জন্য গড়ে তোলেন ‘সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থা’। ওই সংস্থার মাধ্যমে ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ভাসমান নৌস্কুল। সেই স্কুলগুলোই এখন শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে চলনবিলের বন্যাকবলিত এলাকার শতশত কোমলমতি শিশুদের মাঝে।
সরেজমিনে দেখা যায়, দেশীয় প্রযুক্তিতে বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে এসব নৌস্কুল। বন্যায় প্লাবিত এলাকায় অল্প পানিতে স্বাভাবিকভাবে চলাচলের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে চলনবিলের এসব ভাসমান স্কুল। শিশুদের পাঠদানে উপযোগী করতে বই-খাতা, চক-পেন্সিলসহ সব ধরনের শিক্ষা উপকরণও দিয়ে থাকে ওই সংস্থাটি। এর পাশাপাশি এতে রয়েছে সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে আলো ও ফ্যানের বাতাসের ব্যবস্থা। শুধু তাই নয়, প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে শিশুদের জন্য রাখা হয়েছে প্রজেক্টরের ব্যবস্থাও। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের আনন্দ দেওয়ার জন্য রয়েছে পড়ালেখার পাশাপাশি খেলাধুলাসহ বিনোদনের ব্যবস্থা।
তাড়াশ, সিংড়া, সিধুলাই, গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রামসহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এসব নৌস্কুলে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত চলে পাঠদান। স্কুলগুলো শিশুদের বাড়ির ঘাটে গিয়ে তাদের নৌকায় তুলে নেয়। এরপর নৌকা স্কুলটি বিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও নিরিবিলি পরিবেশের কোনো এক স্থানে গিয়ে শুরু করে পাঠদান। এ নৌকা স্কুল সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তিন স্পটে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। প্রতিটি ভাসমান নৌকা স্কুলে রয়েছে পৃথক স্পটে তিন জন করে শিক্ষক।
চলনবিলের সিংড়া উপজেলার সিধুলাই এলাকার নৌ-স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র রিফাত হোসেনের বাবা রবিউল করিম জানান, বন্যায় রাস্তা-ঘাট ডুবে গেলে শিশুরা স্কুলে যেতে পারে না। এ সময় শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে এ ভাসমান স্কুল।
এ ব্যাপারে ‘সিধুলাই স্বনির্ভর সংস্থা’র নৌকা স্কুলের প্রোগ্রাম ম্যানেজার সুপ্রকাশ পাল বলেন, চলনবিলে শিশুদের শিক্ষার আলো ছড়াতে ২৩টি নৌকা স্কুল কাজ করে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে দুই হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী শিক্ষার আলো পাচ্ছে।
সিংড়া প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মইনুল হাসান জানান, চলনবিলের বিভিন্ন স্থানে নৌকার স্কুলগুলো সরকারের পাশাপাশি যেভাবে শিশুদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে, তা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।
সারাবাংলা/এমএইচ/এমএস