Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘জবাব দিতে হবে, বিচার হবে’


২৭ অক্টোবর ২০১৮ ২০:০৮

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

চট্টগ্রাম ব্যুরো: সব ধরনের অসাংবিধানিক কর্মকাণ্ডের জন্য বর্তমান সরকারের বিচার করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। একই সমাবেশে ঐক্যফ্রন্টের আরেক শীর্ষ নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ১০ দিনের মধ্যে দেশের পরিস্থিতি পাল্টে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন।

শনিবার (২৭ অক্টোবর) বিকেলে চট্টগ্রামে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিভাগীয় সমাবেশে এসব বক্তব্য রাখেন তারা।

ড. কামাল হোসেন বলেন, ২০১৪ সালে নির্বাচনের আগে বলেছিলেন, ছয় মাস পর আবার নির্বাচন দেবেন। আমি ভেবেছিলাম, ছয় মাসের জন্যই নির্বাচন করছে। সেজন্য আমি আদালতে যাইনি। কিন্তু ছয় মাসের জন্য নির্বাচন করে তারা পাঁচ বছর কাটিয়ে দিয়েছে। এটা গুরুতর অপরাধ। এটার জন্য সরকারকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।

তিনি বলেন, এবার জনগণের ন্যূনতম দাবি সাত দফা দিয়েছি। সরকারকে বলছি, সময় থাকতে সাত দফা মেনে নিন। এই দাবি অমান্য করলে বিচার হবে। সংবিধান অমান্য করার জবাব জনগণ আদায় করে ছাড়বে। জনগণ যখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, তখন অসম্ভবকে সম্ভব করে ছাড়বেই।

‘সরকার একটার পর একটা অসাংবিধানিক কাজ করছে। সকাল, বিকেল, সন্ধ্যায় সরকার সংবিধান রক্ষার শপথ ভঙ্গ করছেন। সংবিধান লঙ্ঘনের জন্য অবশ্যই তাদের জবাবদিহি করতে হবে এবং বিচার হবে।‘

লালদিঘীর মাঠে সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ড. কামাল বলেন, লালদিঘী ময়দান আমরা কেন পেলাম না, এটা তো কারও পৈতৃক সম্পদ না। এজন্য সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে। চারঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে জনগণকে কেন কষ্ট করতে হচ্ছে, এটার জন্য সরকারকে শাস্তি পেতে হবে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, সিলেটেও জনসভায় নিষেধাজ্ঞা দিলো। পরে কোর্ট থেকে নোটিশ দিলাম। তখন নিষেধাজ্ঞা বাতিল হলো। তারপরও জনসভা করতে আমাদের কম কষ্ট করতে হয়নি। একদিন না একদিন এসবের বিচার আমাদের করতে হবেই হবে।

জনসভা আমাদের মৌলিক অধিকার। সংবিধানে বলা আছে, জনসভা করার মৌলিক অধিকার সব নাগরিকের আছে। দেশের মালিক ১৬ কোটি মানুষ। দেশের মালিকদের চারঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। এখানে (সমাবেশস্থল) এতটুকু বসারও জায়গা নেই। আজ হোক, কাল হোক, আমি যদি বেঁচে থাকি মামলা করব। বিচার হতেই হবে, বলেন তিনি।

ড. কামালের বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু দাঁড়িয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবির বিষয়টি মনে করিয়ে দেন।

এ সময় কামাল বলেন, ‘এটা তো দাবি করার কোনো বিষয় নয়। এটা দেওয়ার বিষয়। সরকারকে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। মুক্তি যদি না দেয়, ভবিষ্যতে এটার জন্যও জবাবদিহি করতে হবে এবং বিচার হবে।’

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে কামাল হোসেন বলেন, ‘অনেক অপরাধ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধাপরীদেরও ক্ষমা করা হয়েছিল। এরপর কিছু যুদ্ধাপরাধীর বিচার হয়েছে। অনেকের বিচার হয়নি।’

সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সাত দফা দাবি আদায় করে ঘরে ফিরব। মামলা অনেক হয়েছে, ভৌতিক মামলা অনেক দিয়েছে। কিন্তু সাত দফা দাবি আদায় না করে আমরা ঘরে ফিরব না।

তিনি বলেন, সরকার নিজেরা নাশকতা-সহিংসতা করে। তারপর বিরোধীদলের ওপর দোষ দেয়। আমরা অন্যায়ের কাছে মাথানত করব না। আমাদের অনেক ভাই চলে গেছে। অনেক ভাই গুম হয়েছে। হাজার হাজার মামলা। কিন্তু জনগণকে দমিয়ে রাখা যায়নি। আজকের সমাবেশ সেটাই প্রমাণ করে।

বিজ্ঞাপন

ফখরুল বলেন, জনগণের কণ্ঠরোধ করে বন্দুকের জোরে বিশ্বের কোনো দেশে কোনো সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি। বাংলাদেশেও পারবে না। বাংলাদেশে গত ১০ বছর ধরে গণতন্ত্রের জন্য যে লড়াই শুরু হয়েছে, সেই লড়াইয়ে জনগণ অবশ্যই জিতবে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, পুলিশ-প্রশাসন এখন সরকারের কথা শুনছে না। তারা নিরপেক্ষ হয়ে গেছে। এই সরকার পালাবার পথ পাবে না। জনগণ বিনা বিচারে তাদের পালাতে দেবে না। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী একজন বৃদ্ধ মানুষকে বিনা বিচারে নিঃসঙ্গ কারাগারে আটকে রেখেছে সরকার। জনগণ কোনোদিন এই সরকারকে ক্ষমা করবে না। সরকার ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বাধ্য হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রশাসনের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা আওয়ামী লীগের কর্মচারী নন। আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। আওয়ামী লীগের সময় শেষ হয়ে এসেছে। হুঁশিয়ার হয়ে যান। বেআইনি হুকুম না মেনে জনগণের পাশে দাঁড়ান।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেন, গত দেড় মাসে এই সরকার সারাদেশে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে পাঁচ হাজার মামলা দিয়েছে। সরকার একদলীয় নির্বাচন করতে চায়। আমরা সরকারকে সংলাপে বসতে বাধ্য করব।’

এদিকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ১০ দিনের মধ্যে দেশের পরিস্থিতি পরিবর্তন হবে। ১০ দিনের মধ্যে দেশের সব বুদ্ধিজীবী ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেবেন। বামপন্থী, আওয়ামীপন্থী সব বুদ্ধিজীবী আসবেন।

‘শুধু ১০ দিন অপেক্ষা করেন, দেখেন কী হয়।’ বলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। সাবেক রাষ্ট্রপতি বি. চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্প ধারাও ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেবে, এমন মন্তব্যও করেছেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী নিজের ছায়া দেখে ভয় পাচ্ছেন মন্তব্য করে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ভয় পাবেন না। ড. কামাল হোসেন আছেন, তিনি আপনাকে রক্ষা করবেন। কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার মইনুল আপনাকে আইনি সহায়তা দেবেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কথা ও কাজে মিল নেই। বর্তমান সরকার পাকিস্তানের চেয়েও খারাপ শাসন চালু করেছেন। ভবিষ্যতে ক্ষমতায় এলে আইনের শাসন দেওয়ার জন্য বিএনপি নেতাদের আহ্বান জানান তিনি।

অন্যদিকে সরকারকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামানোর ঘোষণা দিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও ঐক্যফ্রন্টের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, সরকার ঐক্যের পথে বিভ্রান্তি ছড়াবে। আমরা অনেকগুলো দল এক হয়েছি। আমাদের লক্ষ্য একটাই- সরকারের পতন। তারা হঠাৎ তফসিল ঘোষণা করতে পারে। আমরা লড়াই করব এবং ভোটে জিতব। ভোটকেন্দ্রে, ভোটের মাঠে, রাজপথে ঐক্যবদ্ধ থাকব। জয় আমাদের হবেই।

তিনি আরও বলেন, আমাদের স্লোগান একটাই- গদি ছাড়ো, তুমি যাও। গদি না ছাড়লে কিভাবে ছাড়াতে হয়, সেটা আমাদের জানা আছে।

আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর বলেছেন, এই ঐক্য ক্ষমতার ঐক্য নয়, জনতার ঐক্য।

তিনি বলেন, এই আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ নয়। এটা তাজউদ্দীনের আওয়ামী লীগ নয়। এটা লুটপাটের আওয়ামী লীগ। আমরা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করি। গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য তাই ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য করেছি। এই ঐক্য ক্ষমতার ঐক্য নয়, জনতার ঐক্য।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশের আরও বক্তব্য রাখেন গণফোরামের সদস্য সচিব মোস্তাফা মহসিন মন্টু, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও আবদুল মঈন খান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, জেএসডি’র সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, নাগরিক ঐক্যের সদস্য সচিব মোস্তাফা আমিন, এলডিপি মহাসচিব রেদোয়ান আহম্মেদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাজহাজান ও মীর মো. নাছির উদ্দীন, জেএসডির সহ-সভাপতি তানিয়া রব, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভুইয়া, জয়নাল আবেদীন ফারুক, ড. সুকোমল বডুয়া, গোলাম আকবর খন্দকার, এস এম ফজলুল হকসহ ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোর নেতারা।

সমাবেশ পরিচালনা করেন নগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এস এম সাইফুল আলম ও কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশীদ।

সারাবাংলা/আরডি/এমএইচ/এটি

সাত দফা দাবি আদায় করে ঘরে ফিরব: ফখরুল

সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর হুঁশিয়ারি ড. কামালের

‘শুধু ১০ দিন অপেক্ষা করেন, দেখেন কী হয়’

ভোটকেন্দ্রে, ভোটের মাঠে, রাজপথে ঐক্যবদ্ধ থাকব: মান্না

এই ঐক্য ক্ষমতার ঐক্য নয়, জনতার ঐক্য

ফুটপাতে সমাবেশ মঞ্চ, আসতে শুরু করেছেন নেতাকর্মীরা

চট্টগ্রামে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে নির্বাচনী আমেজ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

চট্টগ্রামে খালে ভাসছিল অর্ধগলিত লাশ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:৩৩

বিএসইসি‘র চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:৫১

সম্পর্কিত খবর