ধর্মঘটের মধ্যেও হঠাৎ বাস-টেম্পু, ট্রেনে প্রচণ্ড ভিড়
২৯ অক্টোবর ২০১৮ ১২:৪১
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো : ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় গাড়ির অভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা। গাড়ি পেলেও সেখানে ওঠার জন্য ধাক্কাধাক্কি। কোনোমতে গাড়িতে উঠতে পারলেও প্রচণ্ড ভিড়ে নাকাল হয়ে গন্তব্যে পৌঁছানো।
এই অবর্ণনীয় ভোগান্তিতে পরিবহন ধর্মঘট নিয়ে প্রচণ্ড ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
তবে পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে রিকশা-অটোরিকশার বাইরে মাঝে মাঝে দেখা মিলছে দু’য়েকটি বাসের। টেম্পু-রাইডারসহ হিউম্যান হলারের চলাচলও আগের দিনের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। সড়কে গাড়ি না থাকায় অস্বাভাবিক ভিড় তৈরি হচ্ছে দূরপাল্লা এবং অভ্যন্তরীণ রুটের ট্রেনগুলোতে।
সোমবার (২৯ অক্টোবর) সকাল ৮টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর টাইগার পাস মোড়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন বেশ কয়েকজন কর্মজীবী নারীপুরুষ। ধর্মঘটের মধ্যে অটোরিকশা কিংবা টেম্পুর জন্য অপেক্ষমাণ এসব কর্মজীবীদের সামনে আকস্মিকভাবে হাজির হয় সিটি সার্ভিসের একটি বাস। দ্রুত বাসে উঠে তারা রওনা দেন সিইপিজেডের দিকে।
একই ঘটনা দেখা গেছে নগরীর জিইসি মোড়েও। সেখানেও অফিসগামী যাত্রীদের জটলার সামনে এসে হঠাৎ হাজির হয় সিটি সার্ভিসের বাস। ধর্মঘট উপেক্ষা করে পেটের তাগিদে বের হওয়া এই সাধারণ পরিবহন শ্রমিকরা অবশ্য এসব বিষয়ে কিছুই বলতে আগ্রহী নন।
কাজির দেউড়ির মোড়ে চকবাজার অভিমুখী একটি টেম্পুর চালক মো. শাহেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘ধর্মঘট হচ্ছে। পেট তো চলছে না। সেজন্য কয়েকজন বাস নিয়ে বেরিয়েছেন। তবে নেতারা জানলে সমস্যা হবে।’
ঢাকা কিংবা দেশের অন্যান্য স্থানের মতো চট্টগ্রাম নগরীর কোথাও চলাচলরত যানবাহনে শ্রমিকদের বাধা দেওয়ার কোন খবর পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়গামী তিন নম্বর রুটের সিটি সার্ভিসের বাস চলাচল করছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের পূর্বাঞ্চলীয় শাখার সভাপতি মৃণাল চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধর্মঘট হচ্ছে। কোথাও কোথাও ধর্মঘট উপেক্ষা করে বাস বের হওয়ার যেসব কথা বলা হচ্ছে সেটা সঠিক নয়। তবে আমরা কাউকে কোথাও বাধা দিচ্ছি না।’
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম সারাবাংলাকে বলেন, প্রথমদিন বন্দর এলাকায় টেক্সি-টেম্পু চলাচলে শ্রমিকরা বাধা দিয়েছিল। আজ (সোমবার) এই ধরনের কোন খবর পাওয়া যায়নি।
নগরীর শাহ আমনত সেতু মোড়, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, জিইসি, ইস্পাহানি, টাইগারপাস,
দেওয়ান হাট ও বাদামতলী এলাকায় সকাল ১০টা পর্যন্ত অফিসমুখো মানুষের জটলা দেখা গেছে। টেম্পু-হিউম্যান হলার কিংবা রিকশা-অটোরিকশা পেলেই হুমড়ি খেয়ে পড়তে দেখা গেছে লোকজনকে।
টাইগার পাস এলাকায় সিইপিজেড এলাকার একটি গার্মেন্টস কারখানার কর্মী শিউলি বেগম সারাবাংলাকে বলেন, ‘অফিসে যাবার সময় কোনোভাবে যেতে পারি। কিন্তু সন্ধ্যায় কারখানা ছুটির পর সমস্যা বেশি হয়। গতকাল (রোববার) সন্ধ্যায় ইপিজেড মোড়ে দেড় ঘন্টা দাঁড়িয়েছিলাম। তারপর ২০-২২ জন মিলে টেম্পু একটা ভাড়া করে নিউমার্কেট আসি।’
তবে অভিযোগ পাওয়া গেছে, গণপরিবহন চলাচল না করায় অটোরিকশা-টেম্পুসহ সব ধরনের পরিবহনে প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে ট্রেনগুলোতে হঠাৎ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে যাত্রী। বিভিন্ন রুটের সব ট্রেনেই নির্ধারিত সিটের বাইরে দ্বিগুণ পরিমাণ যাত্রী পরিবহন করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মিজানুর রহমান।
নতুন পাশ হওয়া সড়ক পরিবহন আইনের কিছু ধারায় আপত্তি তুলে রোববার সকাল ছয়টা থেকে সারাদেশে ৪৮ ঘন্টার পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।
তবে পরিবহন শ্রমিক নেতারা বলছেন, তারা দাবি আদায়ে কর্মবিরতি পালন করছেন।
সারাবাংলা/আরডি/এসএমএন