Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সংলাপে সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে নির্বাচনের বার্তা দেবে আ.লীগ


৩ নভেম্বর ২০১৮ ১০:২৭

।। হাসান আজাদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: চলমান সংলাপে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সাংবিধানিক কাঠামো নির্দিষ্ট করার ওপর জোর দেবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। এক্ষেত্রে পৃথিবীর বড় গণতান্ত্রিক দেশগুলোর নির্বাচনী ব্যবস্থাকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা হবে। এজন্য ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য সব দল ও জোটকে আহ্বান জানাবে সরকারি জোট।

বিজ্ঞাপন

এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে এ বিষয়টিই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের নেতারা। শুক্রবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপেও একই বার্তা দেওয়া হয়েছে সরকারি জোটের পক্ষ থেকে। এছাড়া অন্য জোটগুলোর সঙ্গে যে সংলাপ হবে, তাতেও এই বিষয়টিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগ ও শরিক ১৪ দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

১৪ দলের অন্যতম শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, আমরা চাইছি সংবিধানের ভেতরে থেকে জাতীয় নির্বাচনের একটি স্থায়ী সমাধান করতে। এজন্য আমরা যেসব জোট বা দলের সঙ্গে সংলাপে বসেছি এবং সামনে বসব, তাদের সবাইকে একই বার্তা দেওয়া হবে।

‘সংলাপ আশাবাদের দিকে যাচ্ছে’

তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন এলে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রতিটি দলের মধ্যে বির্তক শুরু হয়। ১৯৯১ সালের পর থেকে প্রতিটি নির্বাচনে এই বিতর্ক হয়েছে। এর একটা সমাধান হওয়া জরুরি।

বিজ্ঞাপন

বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশের উদাহরণ টেনে দিলীপ বড়ুয়া বলেন, চলমান সরকারের অধীনেই বড় বড় সব গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আমাদের এখানে হতে সমস্যা কোথায়? বিষয়টি এখনই নির্দিষ্ট করা না গেলে প্রতিটি নির্বাচনের আগেই নির্বাচন নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম তৈরি হয়। এতে করে দেশের উন্নয়ন ব্যাহত হয়।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক সারাবাংলাকে বলেন, নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। এটাকে নির্দিষ্ট করতে আমরা সংলাপে অংশ নেওয়া সব দলকে এই বার্তা দিতে চাই— সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিন। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। পৃথিবীর বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশে এই ফর্মুলাতেই নির্বাচন হয়।

তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে নির্বাচনী সরকার কাঠামো, কার অধীনে নির্বাচন হবে— এসব বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলে আসছে। এগুলোর স্থায়ী সমাধান দরকার। নইলে আমরা এগুতে পারব না।

১৪ দলের নেতারা জানান, ১৯৯১ সাল থেকে দেশে প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের আগে কার অধীন নির্বাচন, নির্বাচনকালীন সরকার গঠন ইত্যাদি ইস্যুতে রাজনৈদিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হয়ে আসছে। কিন্তু ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের নির্বাচনী পদ্ধতিতে একটা আমূল পরিবর্তন আনা হয়। ওই বছর চলমান সরকারের অধীনে নির্বাচন করার কথা বলা হয়। পাশাপাশি ওই সময়ের বিরোধী দল বিএনপিকেও সরকারে প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়। কিন্তু সে প্রস্তাব বিএনপি প্রত্যাখ্যান করে। তাই এবার সংবিধানের ভেতরে থেকে নির্দিষ্ট ফর্মুলায় অধীনে নির্বাচন করার বিষয়ে বদ্ধপরিকর সরকারি দল।

সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে রাজি, সংলাপ শেষে যুক্তফ্রন্ট

নেতারা জানান, এর পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ রাজনীতির সৌন্দর্য। এতে করে দলগুলোর মধ্যে পারস্পারিক বোঝাপড়া জায়গাগুলো তৈরি হয়, দেশ এগিয়ে যায়। এ কারণেই সরকারি দল সংলাপে বসার আহ্বান পাওয়ার পরপরই দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসেছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। আর এই সংলাপের মাধ্যমে দেশের সব দলকে সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার ভেতরে থেকে রাজনৈতিক সরকারে অধীনে নির্বাচন করার বার্তা দিচ্ছে।

আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতারা বলেন, রাজনৈতিক সরকারের বাইরে নির্বাচনের সময় একটি অরাজনৈতিক সরকার গঠন করা কোনো অবস্থাতেই যুক্তিসঙ্গত নয়। এতে করে রাজনীতির বাইরে তৃতীয় শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ পায়, যার প্রমাণ ওয়ান-ইলেভেন সরকার। এতে করে দেশের অগ্রযাত্রাও ব্যাহত হয়।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপেও ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেন ও অন্যান্যদের বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সংবিধানকে সমুন্নত রাখতে হবে। ১৯৭২ সালের সংবিধান রচনায় ড. কামাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। আওয়ামী লীগ সেই সংবিধান পুনঃস্থাপিত করার চেষ্টা করছে। এখন একটি স্থায়ী নির্বাচনী ব্যবস্থা, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করা, সংসদকে চালু রেখে তা কার্যকর করার জন্য স্থায়ী সাংবিধানিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনোভাবেই কোনো অগণতান্ত্রিক-অনির্বাচিত কেউ সরকারে আসতে না পারে।

যুক্তফ্রন্টের দাবিগুলো মেনে নেওয়া হয়েছে: কাদের

এদিকে, বৃহস্পতিবার জাতীয় এক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপের পর শুক্রবার সন্ধ্যায় সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোট যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে বসে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল। এছাড়া, আগামী ৫ নভেম্বর সন্ধ্যায় সরকারি জোটের সংলাপ রয়েছে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে। এছাড়া বাম গণতান্ত্রিক জোট এবং ইসলামী শাসনতন্ত্রও ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সংলাপের জন্য সময় চেয়েছে। এরই মধ্যে বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে সংলাপে বসার জন্য ১৬ জনের একটি তালিকাও দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগকে।

সারাবাংলা/এইচএ/টিআর

আওয়াম লীগ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সংলাপ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর