সোহরাওয়ার্দীতে কওমি বোর্ডের শোকরানা মাহফিল, অতিথি প্রধানমন্ত্রী
৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৮:৫৭
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা : কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস সনদকে স্নাতকোত্তরের সমমান দেওয়ায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শোকরানা মাহফিল শুরু হয়েছে। সকাল সোয়া ৯টার দিকে আল হাইয়াতুল উলা লিল জামিয়াতুল কওমিয়া’র আয়োজনে শুরু হয় মাহফিলের আনুষ্ঠানিকতা।
এই শোকরানা মাহফিলে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করছেন হেফাজতে ইসলামের আমির ও আল হাইয়াতুল উলা লিল জামিয়াতুল কওমিয়ার চেয়ারম্যান আল্লামা শাহ আহমদ শফী।
মাহফিলে সারাদেশ থেকে লক্ষাধিক মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক যোগ দেবেন বলে আশাা করছেন আয়োজকরা।
সকাল ৯টায় মাহফিলের কার্যক্রম শুরু হয়ে দুপুর সাড়ে ১২টায় এ অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। শোকরানা মাহফিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মাননার পাশাপাশি একইসঙ্গে আহমদ শফীকেও ক্রেস্ট দেওয়া হবে। এছাড়া বেশ কিছু দাবি-দাওয়া তুলে ধরা হবে এ অনুষ্ঠান থেকে।
আয়োজকদের একটি সূত্র জানিয়েছে, শোকরানা মাহফিল সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। হাইআতুল উলয়াভুক্ত ছয়টি বোর্ডের শিক্ষক-ছাত্র ছাড়াও আলেমরা এ মাহফিলে যোগ দেবেন। এ মাহফিলে যোগ দিতে চট্টগ্রাম থেকে এরই মধ্যে ঢাকায় এসেছেন আহমদ শফী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
অনুষ্ঠানে মঞ্চে হাইআতুল উলয়াভুক্ত ছয়টি বোর্ডের নেতারা উপস্থিত থাকবেন। এদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের চারপাশের সড়কে যান চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
দীর্ঘ চার দশক দাওরায়ে হাদিসের সনদের স্বীকৃতি দাবি করছেন কওমির শিক্ষার্থীরা। ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় এ দাবিতে তারা রাজপথে নামেন। তবে বিএনপি দাবি পূরণ করেনি। ক্ষমতা ছাড়ার কয়েক দিন আগে ২০০৬ সালের অক্টোবরে স্বীকৃতির প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু আইন না করায় তা কার্যকর হয়নি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কওমি শিক্ষাকে স্বীকৃতি দিতে ২০১২ সালের ৫ এপ্রিল আহমদ শফীকে চেয়ারম্যান করে কমিশন করে। পরের বছর ২০১৩ সালে হেফাজতের ১৩ দফা নিয়ে সরকারের সঙ্গে তাদের বিরোধ সৃষ্টি হয়। ওই বছরের ৫ মে শাপলা চত্বরের ঘটনায় সম্পর্কের আরও অবনতি হয়। আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর স্বীকৃতির বিষয়টি আবারও আলোচনায় আসে। গত বছরের এপ্রিলে স্বীকৃতির প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। দাওরায়ে হাদিসকে আরবি সাহিত্য ও ইসলাম শিক্ষায় মাস্টার্সের সমমান দিয়ে গত ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে আইন পাস হয়। আহমদ শফীকে চেয়ারম্যান করে গঠিত আল হাইয়াতুল উলা লিল জামিয়াতুল কওমিয়ার অধীনে সনদ দেওয়া হবে।
আইন পাসে খুশি আলেমরা প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দিতে উদ্যোগ নেন। তবে প্রধানমন্ত্রী এতে রাজি না হওয়ায় শোকরানা মাহফিল আয়োজন করা হয়।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, সারাদেশে প্রায় ১৭ হাজার কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫ লাখের বেশি। কওমির বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীর সংখ্যা অন্তত ৬০ লাখ। তাদের একটি অংশ আসবে মাহফিলে। এছাড়াও শিক্ষক ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন পরিচালিত মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও মাহফিলে আসবেন।
দেশে কওমি মাদ্রাসার ছয়টি আঞ্চলিক বোর্ড রয়েছে। মাহফিল আয়োজনে ছয়টি বোর্ডের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত ১৭ সদস্যের প্রস্তুতি কমিটি সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে।
শনিবার (৪ নভেম্বর) সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সরেজমিনে দেখা যায়, মাহফিলের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। উদ্যানের দক্ষিণ-পূর্বপাশে স্বাধীনতা স্তম্ভের লেক ঘেঁষে বিশালাকারের মঞ্চ ও প্যান্ডেল করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে মাহফিলস্থল পরিদর্শন করেন জাতীয় দ্বীনি বোর্ডের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ।
আয়োজকরা আরও জানান, শোকরানা মাহফিলে প্রায় দশ লক্ষাধিক লোকসমাগম করে শক্তির মহড়া দেওয়া হবে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর সাহসী ও দুরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বাকীর করে তাকে শুকরিয়া জানানো হবে। পাশাপাশি শুকরানা মাহফিলে বেশি কিছু দাবিও তুলে ধরা হবে।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ‘কওমি মাদ্রাসাসমূহের দাওরায়ে হাদিসের (তাকমীল) সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান প্রদান আইন, ২০১৮’ পাস হয়।
সারাবাংলা/এনআর/এসএমএন
আরও পড়ুন
শোকরানা মাহফিল ঘিরে কড়া নিরাপত্তা
শোকরানা মাহফিল থেকে পিপার স্প্রেসহ ২ জন আটক