Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তরিকুল ইসলাম আর নেই


৪ নভেম্বর ২০১৮ ১৭:২৯

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম মারা গেছেন।

রোববার (৪ নভেম্বর) বিকেল ৫টায় রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৭২ বছর।

তরিকুল ইসলামের পরিবারের সদস্য শেখ ওয়াহিদুজ্জামান বাদশা সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে, তরিকুল ইসলামের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ১০ অক্টোবর পুরান ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তার অবস্থার আরও অবনতি ঘটলে ১২ অক্টোবর অ্যাপোলো হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

তরিকুল ইসলামের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতা, ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট, উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন।

তরিকুল ইসলামের প্রথম জানাজা সকাল ১০টায়, দাফন যশোরে

এর আগে, গত বছর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে সিংগাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এছাড়া, গত কয়েকবছরে তিনি একাধিকবার সিংগাপুরে চিকিৎসা নিয়েছেন।

তরিকুল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সমবেদনা জানান।

তরিকুল ইসলাম বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য। দলের বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করেছেন তিনি। বিএনপিতে সর্বজনশ্রদ্ধেয় হিসেবে পরিচিত এই নেতা বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় তথ্য এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। অসুস্থতার কারণে গত কিছুদিন ধরে দল থেকে দূরে রয়েছেন তিনি।

তরিকুল ইসলামের জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৬ নভেম্বর, যশোরে। রাজনীতিতে হাতেখড়ি ছাত্রজীবনেই। যশোর এমএম কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। কলেজের শহীদ মিনার জরাজীর্ণ হওয়ায় ১৯৬২ সালে সহপাঠীদের শহীদ মিনার তৈরি করে পাকিস্তান সামরিক সরকারের রোষানলে পড়েন, গ্রেফতারও হন। কারাগারে কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের সঙ্গে পরিচয়। সেই সূত্রে দীক্ষা বাম রাজনীতিতে। ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে ছাত্র ইউনিয়নের প্রার্থী হিসেবে যশোর এমএম কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৮ সালে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনের জন্য রাজবন্দি হিসেবে যশোর ও রাজশাহীতে কারাভোগ করেন দীর্ঘ ৯ মাস। ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় গ্রেফতার হন।

বিজ্ঞাপন

কমিউনিস্ট পার্টির নীতি-আদর্শের সঙ্গে পুরোপুরি একমত হতে না পেরে তরিকুল পরে বেছে নেন নতুন পথ। ১৯৭০ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিতে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। পাকিস্তান সরকারের রোষানলে পরে কারাভোগ করেছেন, দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী হিসেবেও তাকে কারাবরণ করতে হয়েছে।

ভাসানী ন্যাপ থেকে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) হয়ে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন বরেণ্য এ রাজনীতিক। জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির ৭৬ সদস্যের প্রথম আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য তরিকুল ইসলাম। সেই সঙ্গে বিএনপির যশোর জেলা আহ্বায়কের দায়িত্ব পান। ১৯৮০ সালে জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরে পর্যায়ক্রমে তিনি দলের যুগ্ম মহাসচিব, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, ভাইস চেয়ারম্যান ও ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত দলের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে স্থায়ী কমিটির সদস্য পদ পান।

এরশাদ আমলে গ্রেফতারের পর তিন মাস অজ্ঞাত স্থানে আটক ছিলেন তরিকুল ইসলাম। পরে তাকে এক ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। রাজনৈতিক জীবনে তিনি এমন মিথ্যা মামলা ও কারাভোগের শিকার হয়েছেন বারবার। যশোরে উদীচী হত্যা মামলা, অধুনালুপ্ত রানার পত্রিকার সম্পাদক সাইফুল আলম মুকুল হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন মামলায় আসামির তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে তার নাম। ওয়ান-ইলেভেনের সময় অন্য সিনিয়র রাজনীতিকদের মতো গ্রেফতার হন তরিকুল ইসলাম। কারাভোগ করেন দীর্ঘ দেড় বছর। মহাজোট সরকারের আমলেও নতুন নতুন মামলার আসামি হয়ে গ্রেফতার ও কারাভোগ করেছেন। বিএনপিতে তার প্রভাব ও গুরুত্বের কারণে মামলা ও গ্রেফতারে বারবার টার্গেট হয়েছেন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

দু’দিনে ভারতে ৯৯ টন ইলিশ রফতানি
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৩৪

সম্পর্কিত খবর