মানবতাবিরোধী অপরাধ: দুই আসামির বিরুদ্ধে রায় পড়া শুরু
৫ নভেম্বর ২০১৮ ১০:৫৭
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় দুই আসামির বিরুদ্ধে রায় পড়া শুরু হয়েছে। এরা হলেন লাখাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা লিয়াকত আলী অপর আসামি হলেন কিশোরগঞ্জের আমিনুল ইসলাম ওরফে রজব আলী।
সোমবার (৫ নভেম্বর) সকাল পৌনে ১১টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ৩১২ পৃষ্ঠার রায় পড়া শুরু করেন।
এর আগে রোববার তাদের রায় দেওয়ার দিন ঠিক করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল।
গত ১৬ আগস্ট এ মামলার শুনানি সমাপ্তি করে যে কোনো দিন রায় ঘোষণা করা হবে মর্মে সিএভি (অপেক্ষমাণ) রাখেন আদালত।
ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষে আছেন প্রসিকিউটর রানা দাস গুপ্ত ও রেজিয়া সুলতানা চমন। আসামিপক্ষে আছেন গাজী এমএইচ তামিম।
দুই আসামির বিরুদ্ধে গণহত্যা, লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী সাতটি অভিযোগ বিচার কাজ শেষ হয়।
তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী জানা যায়, ২০০৩ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত লিয়াকত আলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। সভাপতি থাকা অবস্থাতেই যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১০ সালে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। এছাড়া একই ধরনের অপরাধ সংঘটনের অভিযোগে রজব আলীর বিরুদ্ধে মামলা হয়।
২০১৬ সালের ১৮ মে এই দুজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল
আসামিদের বিরুদ্ধে সাত অভিযোগ
প্রথম অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর পাকিস্তানি সেনা সদস্য ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে লাখাই থানার কৃষ্ণপুর গ্রামে গণহত্যা, লুটপাট। ওইদিন কৃষ্ণপুর গ্রামে নৃপেণ রায়ের বাড়িতে রাধিকা মোহন রায় ও সুনীল শর্মাসহ ৪৩ জন হিন্দুকে গুলি করে হত্যা।
দ্বিতীয় অভিযোগ: হবিগঞ্জের লাখাই থানার চণ্ডিপুর গ্রামে গণহত্যা ও লুটপাট।
তৃতীয় অভিযোগ: লাখাই থানার গদাইনগর গ্রামে গণহত্যা ও লুটপাট।
চতুর্থ অভিযোগ: অষ্টগ্রাম থানার সদানগর গ্রামে শ্মশানঘাটে হত্যা।
পঞ্চম অভিযোগ: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানার ফান্দাউক গ্রামের বাচ্চু মিয়াকে অপহরণ এবং রঙ্গু মিয়াকে অপহরণ ও হত্যা।
ষষ্ঠ অভিযোগ: অষ্টগ্রাম থানার সাবিয়ানগর গ্রামে চৌধুরী বাড়িতে হামলা চালিয়ে হত্যা
সপ্তম অভিযোগ: সাবিয়ানগর গ্রামে খাঁ বাড়িতে হত্যাকাণ্ড
দুই আসামি
তদন্ত সংস্থার তথ্য অনুসারে, একাত্তরে লিয়াকত ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজের ছাত্র ছিলেন। মুসলিম লীগের সদস্য হিসেবে ফান্দাউক ইউনিয়নে রাজাকার বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দীর্ঘদিন পালিয়ে থেকে লিয়াকত পরে এলাকায় ফেরেন এবং আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে এক সময় দলটির লাখাই থানা কমিটির সভাপতি হন বলে উল্লেখ করা হয়েছে অভিযোগপত্রে।
বর্তমানে তিনি ওই পদে নেই। মামলার তদন্তকালেই লিয়াকত পালিয়ে যান বলে প্রসিকিউশনের ভাষ্য।
আর কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম থানার আলীনগর গ্রামের রজব আলী ১৯৭০ সালে ভৈরব হাজী হাসমত আলী কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় ইসলামী ছাত্র সংঘের কলেজ শাখার সভাপতি হন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ভৈরবে পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে তিনি অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেন এবং পরে এলাকায় ফিরে আল বদর বাহিনী গঠন করেন।
তদন্ত সংস্থা বলছে, দেশ স্বাধীন হওয়ার সময় মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে আটক হয়েছিলেন রজব। ১৯৭২ সালে তার বিরুদ্ধে দালাল আইনে তিনটি মামলাও হয়েছিল, যাতে তার যাবজ্জীবন সাজা হয়।
কিন্তু দালাল আইন বাতিলের সুযোগে ১৯৮১ সালে রজব ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্ত হন। পরে ‘আমি আল বদর বলছি’ নামে একটি বইও তিনি প্রকাশ করেন।
ওই বইয়ে রজবের মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত অভিযোগের আত্মস্বীকৃতি রয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়।
সারাবাংলা/এজেডকে/একে