সংলাপ শেষ, ১০ সদস্যের উপদেষ্টা সরকারের প্রস্তাব ঐক্যফ্রন্টের
৭ নভেম্বর ২০১৮ ১৪:১৩
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দ্বিতীয় দফা সংলাপ শেষ হয়েছে। এই সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে সংসদ ভেঙে দিয়ে ১০ সদস্যের নির্দলীয় উপদেষ্টা সরকার গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের প্রস্তাবও ছিল ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ঐক্যফ্রন্টের এমন প্রস্তাব সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে পড়ে না।
বুধবার (৭ নভেম্বর) দুপুর ২টার কিছু পর এই সংলাপ শেষ হয়। এর আগে, সকাল ১১টার দিকে শুরু হয় এই সংলাপ।
সংলাপের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সবাইকে স্বাগত জানান গণভবনে। পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে তাদের মঙ্গলবারের (৬ নভেম্বর) সমাবেশের জন্য অভিনন্দনও জানান। এরপর একে একে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা কথা বলতে থাকেন। আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতারাও ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের বক্তব্যে জবাব, পাল্টা-জবাব দিতে থাকেন।
আরও পড়ুন- সমাবেশ করায় ঐক্যফ্রন্টকে অভিনন্দন প্রধানমন্ত্রীর
সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে সংসদ ভেঙে দিয়ে ১০ সদস্যের একটি নির্দলীয় উপদেষ্টা সরকার গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়। পাশাপাশি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিও জানান ঐক্যফ্রন্ট নেতারা। এসময় তারা নির্বাচন কমিশনও ভেঙে দিয়ে পুনর্গঠনের প্রস্তাব রাখেন।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতারা সংলাপে বলেন, ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় উপদেষ্টা সরকার গঠনের প্রস্তাব সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে পড়ে না।
আরও পড়ুন- আ.লীগ-ঐক্যফ্রন্ট দ্বিতীয় দফা সংলাপ শুরু
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, আমাদের সরকারের মেয়াদ ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। আমরা তো সাংবিধানিকভাবে জানুয়ারি পর্যন্ত বৈধ সরকার। তাহলে আমরা বৈধতা থাকার পরও কেন সংবিধান অমান্য করে সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন করব?
আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন বক্তব্যে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা সংবিধানের ভেতরে থেকেই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন করা সম্ভব বলে যুক্তি উপস্থাপন করেন।
আরও পড়ুন- দ্বিতীয় দফা সংলাপে ‘প্রত্যাশা’ পূরণের আশাবাদ
গণভবন সূত্রে জানা গেছে, সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন খুব বেশি কথা বলেননি। সংলাপে বেশি কথা বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদসহ অন্যরা সরব ছিলেন।
এর আগে, বুধবার সকাল ১১টার দিকে গণভবনের ব্যাংকুয়েট হলে শুরু হয় আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দ্বিতীয় দফার এই সংলাপ। সংলাপে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের পক্ষে অংশ নেন— দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের; উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ; সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম; সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম; ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন; জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু; আইনমন্ত্রী আনিসুল হক; আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মণি ও আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম এবং দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবাহান গোলাপ।
অন্যদিকে, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে অংশ নেন বিএনপি মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর; বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ; জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন; গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু ও নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী; নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও এস এম আকরাম এবং জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর আহমেদ।
এর আগে, ১ নভেম্বরের সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে তাদের সাত দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। সংলাপ শেষে গণভবন থেকে বেরিয়ে উভয় পক্ষের নেতাদের বড় একটি অংশই গণমাধ্যমে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানান। তাতে একদিকে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোট এই সংলাপকে ‘খোলামেলা’ ও ‘ফলপ্রসূ’ বলে অভিহিত করলেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সংলাপে ‘আশাপ্রদ’ কিছু দেখেননি বলেই জানান।
আরও পড়ুন-
দ্বিতীয় দফা সংলাপে আজ যাচ্ছেন ঐক্যফ্রন্টের ১১ সদস্য
দ্বিতীয় দফার সংলাপে অংশ নিতে গণভবনে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা
সারাবাংলা/এনআর/টিআর