জাবিতে সংকটে অতিথি পাখির বিচরণক্ষেত্র
৮ নভেম্বর ২০১৮ ০৮:৪৩
।। তহিদুল ইসলাম, জাবি করেসপন্ডেন্ট ।।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে(জাবি) প্রতি বছর শীতের শুরুতে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির আগমন ঘটে। হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে আসা নানা প্রজাতির এসব অতিথি পাখি আশ্রয় নেয় ক্যাম্পাসের কয়েকটি লেকে। যা দেখতে ভিড় জমায় দূর-দূরান্তের দর্শনার্থীরা।
তবে বর্তমানে নানামুখী সংকটে রয়েছে জাবিতে অতিথি পাখির বিচরণক্ষেত্র। স্থান সংকুচিত হয়ে যাওয়া, কচুরিপনা-আগাছা ভরা জলাশয়, দর্শনার্থীদের উৎপাত ও অতিথি পাখির জন্য নিরাপদ পরিবেশের অভাবে কয়েক বছর ধরে ক্যাম্পাসে অতিথি পাখি কমে যাচ্ছে।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম অতিথি পাখির আনাগোনা দেখা যায় ১৯৮৬ সালে। সে বছর শীতে পুরাতন রেজিস্টার ভবনের সামনের লেকে অতিথি পাখিরা আশ্রয় নেয়। এরপর থেকে একটা সময় পর্যন্ত ক্রমেই ক্যাম্পাসে আসা অতিথি পাখির সংখ্যা বেড়েছে। তেমনি বেড়েছে অতিথি পাখির বিচরণক্ষেত্রও। প্রথমে ১টি লেক থেকে এক পর্যায়ে ৪টি লেকে অতিথি পাখি বিচরণ বৃদ্ধি পায়। মূলত যেসব লেকে প্রাকৃতিক পরিবেশ বিদ্যমান ও খাবারের প্রাচুর্য আছে সেসব লেকেই অতিথি পাখি থাকে। তবে নানামুখী সংকট ক্যাম্পাসে এখন অতিথি পাখির সংখ্যা কমে যাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ছোট-বড় ডজন খানেক লেক রয়েছে। এর মধ্যে বিগত কয়েক বছরে ৪টি লেকে অতিথি পাখি দেখা যায়। এগুলো হলো, ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের অভ্যন্তরের লেক, সুইমিংপুল সংলগ্ন লেক, পুরাতন রেজিস্টার ভবনের সামনের লেক ও পরিবহন চত্বরের পেছনের লেক।
তবে এসব লেকের কোন কোনটি ভরাট হয়ে ছোট হয়ে যাচ্ছে। আবার কোনটি সংরক্ষণের অভাবে কচুরিপানা ও আগাছায় ভরে গেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, পুরাতন রেজিস্টার ভবনের সামনের লেক ভরাট হয়ে ছোট হয়ে গেছে। এ লেকের প্রায় চার পাশেই পাড় থেকে গভীর পর্যন্ত ক্রমেই ভরাট হয়ে গেছে। এছাড়া আগাছা জমেছে তিন পাশে। এতে লেকে অতিথি পাখি বিচরণের জায়গা কমে এসেছে।
সুইমিংপুল সংলগ্ন লেক কচুরিপানা ও আগাছায় ভরে গেছে। যে কারণে ওই লেকটিতে অতিথি পাখির বিচরণের পরিবেশ নেই। এছাড়া পরিবহন চত্বরের পেছনের লেক ও পুরাতন রেজিস্টার ভবনের সামনের লেকের বিভিন্ন জায়গায় কাঁটাতারের বেড়া নষ্ট হয়ে গেলেও এখনো তা মেরামত কিংবা নতুন করে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হয়নি।
বিভিন্ন লেকের পাশে দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিবার সচেতনতামূলক বিলবোর্ড টাঙ্গানো হয়। তবে এ বছর এখন পর্যন্ত নতুন বিলবোর্ড টাঙ্গানো হয়নি। তাছাড়া গত বছরের যেসব বিলবোর্ড ছিল তার অধিকাংশই নষ্ট হয়ে গেছে।
অতিথি পাখির বিচরণস্থল কমে যাওয়ার পেছনে সংরক্ষণের উদ্যোগের অভাবকে দায়ী করেছেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘পুরাতন রেজিস্টার ভবনের সামনের লেকটি কামাল উদ্দিন হলের সামনে থেকে ভরাট হয়ে গেছে। মূলত ঘাস চাষের কারণে এটা হয়েছে। এছাড়া লেকের পাশ খনন না করার ফলে এই লেক ভরাট হয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট না করে লেকের পাশ খনন করতে হবে। আবার এমনভাবে করা যাবে না যেন অতিথি পাখি আর আসবেই না।’
তিনি আরো বলেন, ‘গত দু’বছর বোটানিক্যাল গার্ডেনের পাশের লেকে অতিথি পাখি এসেছিল। মূলত এই দুই বছর ওই লেকে লিজ না থাকায় অতিথি পাখি এসেছিল। তবে লিজ না থাকার কারণে লেক পরিষ্কার করা হয়নি। যে কারণে কচুরিপানায় ভরে গেছে। যাতে অতিথি পাখি বিচরণ করতে পারছে না।’
এ বিষয়ে রেজিস্টার (ভারপ্রাপ্ত) রহিমা কানিজ বলেন, ‘শুনেছি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সুইমিংপুলের পাশের লেক পরিষ্কার করতে দেয়া হয় না। আমি একটু বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে দেখি। আর ভবিষ্যতে যেসব লেক ভরাট হয়ে যাচ্ছে সেগুলো খনন করা হবে। কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হচ্ছে। দর্শনার্থীদের নির্দেশনা সম্বলিত কিছু বিলবোর্ড আছে আর কিছু দেয়া হবে।’
প্রতিবছর অতিথি পাখি থাকার জন্য উপযোগী করে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলো প্রস্তুত করা হয়। যেন অতিথি পাখি অবাধে চলাচল করতে ও খাবার সংগ্রহ করতে পারে। সাধারণত আগস্টের শেষ থেকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে লেকগুলো পরিষ্কার করা হয়। এছাড়া লেকের পাশে দর্শনার্থীদের জন্য নির্দেশনা সম্বলিত বিলবোর্ড টাঙ্গানো হয়। দর্শনার্থীরা যেন অতিথি পাখিকে বিরক্ত করতে না পারে সেজন্য লেকের পাশে দেয়া হয় কাঁটাতারের বেড়া। এবছর পর্যন্ত লেকগুলোতে অতিথি পাখির উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা হয়নি। সেকারণে এবছর মাত্র দুইটি লেকে অল্প কিছু অতিথি পাখি দেখা যাচ্ছে।
সারাবাংলা/টিআই/এনএইচ