নাইকো দুর্নীতি মামলার পরবর্তী চার্জ শুনানি ১৪ নভেম্বর
৮ নভেম্বর ২০১৮ ১৬:২৬
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অন্যান্য আসামির বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলায় চার্জ শুনানির জন্য আগামী ১৪ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) দুপুরে মামলাটির চার্জ গঠন বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। এদিন এ মামলার আসামি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে চার্জ শুনানির জন্য সময়ের আবেদন করা হয়।
এ দিন খালেদা জিয়াকে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে পিজি হাসপাতাল থেকে পুরান ঢাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত বিশেষ জজ ৯ নম্বর আদালতের অস্থায়ী আদালতে আনা হয়।
এদিন মওদুদ আহমদের পক্ষে আংশিক চার্জ শুনানি করা হয়। এরপর শুনানি মুলতবি চান তিনি। চার্জ শুনানিতে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমার বষয় ৮১, আমি শারীরিক ভাবে অসুস্থ, আজ শুনানির জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলাম না। তারপরও শুনানি করেছি, একটা সময়ের আবেদন দাখিল করেছি সেটা মঞ্জুরের জন্য আবেদন জানাই।’
বিচারক এর পরিপ্রেক্ষিতে বলেন, ‘আপনাকে সময় দেওয়া হচ্ছে এই শর্তে যে, আগামী ধার্য তারিখে আপনার চার্জশুনানি শেষ করতে হবে। শুনানি যদি না করেন তাহলে ধরে নেবেন আপনি শুনানি করেছেন এবং খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের জন্য সুযোগ দেওয়া হবে।’
মওদুদের কথার বিরোধিতা করে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘মামলা দীর্ঘায়িত করার জন্য উনি বার বার সময় নিয়েছেন। এই মামলায় সব চাইতে বেশি সময় নিয়েছেন উনি। আমি মওদুদ আহমেদের কথার বিরোধিতা করে আজকে শুনানি শুরু করেন তা শেষ হলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের সুযোগ করে দিবেন বিচারক।’
খালেদা জিয়া আদালতে বলেন, ‘আদালতে শুধু আমি একা কেন? এ মামলাতে তো বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আসামি ছিলেন, তাহলে তিনি কোথায়?’ তারাই নাইকোকে কাজ দেওয়ার সব বন্দোবস্ত করে যান। আমরা শুধু ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছি মাত্র। তখন অনুমোদন না দিলে, অনুমতি দিলাম না সেজন্যও আমার বিরুদ্ধে মামলা করা হতো।’
শুনানি শেষে ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বিচারক মাহমুদুল কবীর আগামি ১৪ নভেম্বর চার্জ শুনানির জন্য নতুন করে দিন ঠিক করেন।
পরে কাজল সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করছিল সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার। হাইকোর্ট বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন। খালেদা জিয়াও হাইকোর্টে গিয়েছিলেন তবে তার মামলা খারিজ করেননি আদালত।’
মামলার প্রধান আসামিরা হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া ও ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন।
পলাতক অন্য ৩ আসামি হলেন- সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, বাপেক্সের সাবেক মহা-ব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ। চলতি বছরের ৫ মে এই মামলায় অভিযুক্ত আরেক আসামি সাবেক সচিব শফিউর রহমান মারা যাওয়ার ফলে বর্তমানে আসামি সংখ্যা- ১০।
গত বছরের ২০ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ মামলার ১১ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আবেদন জানান।
কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় মামলাটি করেন। ২০০৮ সালের ৫ মে এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দেন দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম সাহেদুর রহমান।
অভিযোগপত্রে প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।
নাইকো ছাড়াও গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা বাতিলের আবেদন জানিয়ে পৃথক রিট করেছিলেন খালেদা জিয়া। এসব রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি মামলাগুলোর কার্যক্রম স্থগিত ও রুল জারি করেন হাইকোর্ট। কয়েক বছর ধরে স্থগিত থাকার পর মামলাগুলো সচলের উদ্যোগ নিয়ে রুল নিষ্পত্তির আবেদন জানায় দুদক। পরে গতবছর পৃথক পৃথক শুনানি শেষে মামলা তিনটি সচলের রায় দেন হাইকোর্ট।
সারাবাংলা/এআই/এমও