বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দেশের হাতে
৯ নভেম্বর ২০১৮ ১৮:২৭
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: উৎক্ষেপণের ছয় মাসের মাথায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মালিকানা ও দেখভালের দায়িত্ব বুঝে নিয়েছে বাংলাদেশ। এখন থেকে বাংলাদেশ কমিউনেকশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএসসিএল)’র অধীনে স্যাটেলাইটির সম্পূর্ণ কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
শুক্রবার (৯ নভম্বর) বিকালে রাজধানীর বাংলামোটরের বিসিএসসিএল কার্যালয়ে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মালিকানা বাংলাদেশকে সম্পূর্ণরূপে বুঝিয়ে দেয় ।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’আমাদের সময়ের শ্রেষ্ঠ সংযুক্তি
স্যাটেলাইটটির টাইটেল স্পন্সর প্রথমে বিটিআরসির কাছে এবং পরে বিটিআরসি বিসিএসসিএল’র কাছে টাইটেল স্পন্সর হস্তান্তর করে।
অনুষ্ঠানে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার , বাংলাদেশ কমিউনেকশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটিড (বিসিএসসিএল)’র চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ, বিটিআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক, থ্যালেস আলেনিয়ার পোগ্রাম ম্যানেজার জিল ওবাদিয়াসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আজকের দিনটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গর্বের। আজ থেকে স্যাটেলাইটের পুরো মালিকানা বাংলাদেশের। এর আগে প্রাথমিকভাবে দায়িত্ব বুঝে নেয় বাংলাদেশ।
গত ১২ মে বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ২ টা ১৪ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে দেশের প্রথম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’র সফল উৎক্ষেপণ হয়। নিজ কক্ষপথ ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রিতে পৌঁছানোর পর এর ইন অরবিট টেস্টসহ (আইওটি) নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ হয়৷ পাওয়া যায় সফল সংকেত। পরে সেপ্টেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাফ চাম্পিয়নশিপ সরাসরি সম্প্রচারের ক্ষেত্রেও সফলতা দেখিয়েছি দেশের এই স্যাটেলাইট।
আরও পড়ুন: মাইলফলক: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে খেলা বিটিভিতে, বাংলাদেশ ২-০ ভুটান
এছাড়া কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশনের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের পরীক্ষাও শেষ হয়েছে। গত ৩১ জুলাই এ স্যাটেলাইটের জন্য গাজীপুর ও রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় দুটি ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি : প্রধানমন্ত্রী
গাজীপুর গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে সার্বক্ষণিক মহাকাশে থাকা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর গতিবিধি ও অবস্থান পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণের পর গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে সংকেত দিচ্ছে ও নিচ্ছে। গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে ট্র্যাকিং ও কন্ট্রোলিংয়ের কাজ হচ্ছে এবং পুরো সিস্টেমটিকে টেস্ট করা হচ্ছে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, আজকের দিনটি শুধু বাংলাদেশের জন্যই গর্বের না, থ্যালেস অ্যালেনিয়াসহ আরও অনেকের। যখন এটি আকাশে উড়েছে আমাদের শিশুরা পর্যন্ত উল্লাসিত হয়েছে। ব্যবসায়িক লাভের চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, আমরা একটি স্যাটেলাইটের গর্বিত মালিক।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ম্যারি আনিক বুখডা বলেন, বাংলাদেশের জন্য এটি অনেক বড় অর্জন। এই প্রকল্প আমাদের জন্য সত্যিই খুব খুশির এবং সন্তোষজনক।
দায়িত্ব বুঝে নিয়ে বিসিএসসিএল’র চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে আমাদের স্যাটেলাইট ব্যবসায়িক লাভের মুখ দেখবে বলে প্রত্যাশা করি। বক্তব্যে স্যাটেলাইট নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদ জয়ের অবদানের কথা তুলে ধরেন তিনি।
বিটিআরসি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জহুরুল হক বলেন, আজকের দিনটি আমাদের জন্য গর্বের ও ঐতিহ্যের। মহাকাশ জয় করতে পেরেছি বাঙালি হিসেবে এটা অত্যন্ত গর্বের।
এর আগে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে ৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইট ক্লাবে নাম লেখায় বাংলাদেশ। স্যাটেলাইটির সফল উৎক্ষেপণের খবর দেশে ছড়িয়ে পড়লে আনন্দে মেতে উঠে পুরো জাতি। সেদিন ফ্লোরিডায় যে উচ্ছ্বাসের ঢেউ উঠেছিল তা এসে লেগেছিল বাংলাদেশেও। মালিকানা বুঝে নেওয়ার দিনেও বক্তারা স্মরণ করেছেন তা। বলেন, আজ আমাদের উৎসবের দিন। আনন্দের দিন।
সারাবাংলা/ইএইচটি/জেডএফ