৪১ লাখ ৩৪ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন, ছাড়িয়েছে লক্ষ্যমাত্রা
১০ নভেম্বর ২০১৮ ০৯:১২
।। আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রথমবারের মতো মাছ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ১৬ কোটি জনগণের দৈনিক মাথাপিছু মাছের চাহিদা ৬০ গ্রাম ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন, কিন্তু উৎপাদিত হয়েছে ৪১ লাখ ৩৪ মেট্রিক টন। এর ফলে দেশে গ্রামীণ কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, দেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (BFRI) গবেষণা পরিচালনা করে এ যাবৎ ৫৭টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এর মধ্যে ৪৬টি মাছের প্রজনন, জিনপুল সংরক্ষণ, জাত-উন্নয়ন ও চাষাবাদ বিষয়ক এবং অপর ১১টি ব্যবস্থাপনা বিষয়ক। মাঠপর্যায়ে এসব প্রযুক্তি সম্প্রসারণের ফলে মাছের উৎপাদন উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে।
স্বাদুপানির ২৬০টি মৎস্য প্রজাতির মধ্যে ৬৪টি প্রজাতি বর্তমানে বিপন্ন হলেও এ সময় কৃত্রিম ও নিয়ন্ত্রিত প্রজননের মাধ্যমে টেংরা, গুজি আইড়, চিতল, ফলি, কুচিয়া মাছের পোনা উৎপাদনে সফলতা এসেছে।
এখন পর্যন্ত বিলুপ্তপ্রায় ১৬টি মাছকে পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি দেশের মাছ উৎপাদনে ব্যাপক আবদান রেখে চলেছে। পুনরুদ্ধারকৃত মাছের চাষাবাদ সম্প্রসারিত হওয়ায় বাজারে এদের প্রাপ্যতাও বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মূল্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে এসেছে।
বিজ্ঞানীরা জেনেটিক গবেষণার মাধ্যমে ২০০৯ সালে দেশীয় রুই মাছের নতুন উন্নত জাত-উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছেন। বিভিন্ন নদীর উৎস থেকে রুই মাছের বন্য জাত সংগ্রহ করে ক্রসডিং পদ্ধতিতে উদ্ভাবিত প্রথম প্রজন্মের উন্নতজাতের এই রুই বিদ্যমান জাত হতে ১৬ গুণ অধিক উৎপাদনশীল। ফলে এ মাছের উদ্ভাবিত জাতটি ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হলে দেশে অতিরিক্ত ৩০ থেকে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন মাছ পাওয়া সম্ভব হবে।
এদেশে দুর্লভ প্রজাতির কুচিয়া মাছ অত্যন্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ ও ঔষধি গুণসম্পন্ন। দেশে এর চাহিদা তেমন না থাকলেও আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা যথেষ্ট। আন্তর্জাতিক বাজারে কুচিয়ার চাহিদা থাকায় ২০১৫ সালে নিয়ন্ত্রিত প্রজননের মাধ্যমে কুচিয়ার পোনা-উৎপাদনে সফলতা এসেছে। এ পোনা উৎপাদনের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে নির্বিচারে কুচিয়ার আহরণ হ্রাস পেয়েছে এবং চাষাবাদ সহজতর হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় মৎস্য অধিদফতর ও মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের যৌথ প্রচেষ্টা বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে ১৬ কোটি জনগণের চাহিদাপূরণ করার পর অতিরিক্ত মৎস্য উৎপাদনেও সফলতা দেখিয়েছে। তারা বলছেন, “আমরা বহুবছর পর হারিয়ে যাওয়া ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ প্রবাদটিকে আবার পুনরুদ্ধার ও প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছি।’
মৎস্য অধিদফতরের পরিচালক (অভ্যন্তরীণ) কাজী শামস আফরোজ সারাবাংলাকে জানান, মৎস্য উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্ট অব্যাহত রয়েছে। শুধু তাই নয় এবছর বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিদেশে রফতানি করা হবে।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/এমও