অযত্নে হারিয়ে যাচ্ছে জাবির পদ্ম-শাপলা
১০ নভেম্বর ২০১৮ ১০:২৮
।। তহিদুল ইসলাম, জাবি করেসপন্ডেন্ট ।।
জাবি: অপরূপ সৌন্দর্য্যকে সঙ্গে নিয়েই বেড়ে ওঠা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এখানের শ্যামল প্রকৃতি, লেকের দৃষ্টিনন্দন লাল শাপলা, শীতের অতিথি পাখি প্রভৃতির সুনাম দেশব্যাপী। এছাড়া বেশ কয়েক বছর ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য্যে নতুন পালক যুক্ত করেছে গোলাপি পদ্ম। তবে সংরক্ষণ উদ্যোগের অভাবে সেই গোলাপি পদ্ম এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। এছাড়া অযন্তে এরইমধ্যে হারিয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি জলাশয়ের দুর্লভ নীল শাপলা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি লেকে দৃষ্টিনন্দন গোলাপি পদ্ম ফোটে। এর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌরঙ্গী মোড় সংলগ্ন পদ্ম ফোয়ারা লেক ও অন্যটি জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনের একটি লেক। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পদ্ম ফোটানোর চেষ্টা ছিল বহুদিনের। প্রথমে জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনের লেকে পদ্ম ফোটানোর দীর্ঘ চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ২০১৩ সালে চৌরঙ্গী মোড় সংলগ্ন স্থানে সদ্য খনন করা একটি ছোট লেকে গাজীপুর ও বরিশাল থেকে সংগৃহীত ৩০টি পদ্ম লাগানো হয়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রতিবছর দৃষ্টিনন্দন পদ্ম ফুল উপহার দিয়ে যাচ্ছে এই লেক।
এরপর ২০১৬ সালে এই লেক থেকে বেশ কিছু পদ্ম নিয়ে জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনের একটি লেকে লাগানো হয়। এতে সেখানে সুফল পাওয়া যায়। গোলাপি পদ্ম ফোটে ওই লেকে। এরপর গত বছরও এই লেকে প্রচুর দৃষ্টিনন্দন পদ্ম ফুল ফোটে। তবে সংরক্ষণের অভাবে দু’বছরের মধ্যে হারিয়ে যেতে বসেছে জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনের লেকের পদ্ম।
সরেজমিনে দেখা যায়, জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনের মাঝারি আয়তনের লেকের প্রায় পুরোটাই কচুরিপনা ও আগাছায় ভরে গেছে। এসবের ভিড়ে দু’একটি পদ্ম গাছ কোনোরকমে টিকে আছে। কিছু কিছু পদ্ম গাছের মরা পাতা দৃশ্যমান। তবে চৌরঙ্গী মোড় সংলগ্ন পদ্ম ফোয়ারা লেকে গোলাপি পদ্ম শোভা পাচ্ছে। এই লেকের পুরোটাই পদ্মে ভরা।
এদিকে বছর দু’য়েক আগে নতুন রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে একটি ছোট জলাশয়ে দুর্লভ নীল শাপলা দেখা যায়। ন্যাচার কনজারভেশন ইনিশিয়েটিভ নামক একটি সংগঠন এই জলাশয়ের নীল শাপলা সংরক্ষণ ও বিস্তারের উদ্যোগ নেয়। এছাড়া সে সময় জলাশয়ের পাশে নীল শাপলার পরিচিতি সম্বলিত একটি বিলবোর্ডও স্থাপন করা হয়। তবে নীল শাপলা সংরক্ষণের উদ্যোগ ওই বিলবোর্ড স্থাপনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে। যে কারণে বিলুপ্ত হয়ে গেছে এখানকার নীল শাপলা। লেকটিও বর্তমানে আগাছায় ভরে গেছে।
ওই সংগঠনটির উপদেষ্টা প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই শাপলা অন্য শাপলার মতো না। এটা এপ্রিলের দিকে বৃষ্টি শুরু হলে জন্মায়। বছরের প্রায় ৬-৭ মাস মাটির নিচে থাকে। এজন্য এটা দেখা যায় না। আর অনেকে তুলে নিয়ে যায়, লেকে গরু গোসল করায়। এসব কারণে শাপলা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আর ন্যাচার কনজারভেশন ইনিশিয়েটিভ একটি ছোট সংগঠন। আমরা চেষ্টা করছি। যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়িত্ব না নেয় তবে আমাদের একার পক্ষে সম্ভব না।’
এ বিষয়ে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) রহিমা কানিজ বলেন, ‘জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনের লেকের কচুরিপনা পরিষ্কার করার জন্য আমি এস্টেটের সঙ্গে কথা বলেছি। আর নীল শাপলা নিয়েও কথা হয়েছে।’
সারাবাংলা/এমও