রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বন্ধের আহ্বান জাতিসংঘের
১৪ নভেম্বর ২০১৮ ১৮:৪১
।। সারাবাংলা ডেস্ক।।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান। মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর) মিশেল ব্যাচেলেট বলেন, রোহিঙ্গারা ফেরত যাওয়া নিয়ে আতঙ্কিত। কিন্তু বাংলাদেশী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহেই মিয়ানমারে ২ হাজার ২০০’র বেশি রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন শুরু হবে। খবর রেডিও ফ্রি এশিয়ার।
গত বছরের আগস্টে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার বলেন, মিয়ানমারে থেকে যাওয়া রোহিঙ্গাদের অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ পেয়েছে তার কার্যালয়।
জেনেভায় দেওয়া এক বিবৃতিতে ব্যাচেলেট বলেন, আমরা কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ও ভয় প্রত্যক্ষ করছি। তারা নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে মিয়ানমারে ফেরত যেতে বাধ্য হওয়ার ঝুঁকিতে আছে।
তিনি বলেন, শরণার্থীদের বা আশ্রিতদের জোরপূর্বক নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে ‘নন-রিফাউলমেন্ট’ নীতির পরিষ্কার লঙ্ঘন। এই নীতি অনুসারে, শরণার্থী বা আশ্রিতদের এমন কোন জায়গায় যেতে বাধ্য করা যাবে না যেখানে তারা নিপীড়নের শিকার হতে পারে বা যেখানে তাদের জীবন গুরুত্বর ঝুঁকিতে থাকবে।
এদিকে, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সরকার নিশ্চিত করেছে যে, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ রোহিঙ্গাদের নিজ ইচ্ছার ওপর নির্ভর করবে। কাওকেই তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে রাখাইনে ফেরত যেতে বাধ্য করা হবে না।
বৃস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) থেকে একটানা ১৫ দিন প্রথম ব্যাচের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চলবে। প্রথম ব্যাচে ৪৮৫ পরিবারের ২ হাজার ২৬১ জন রোহিঙ্গা কক্সবাজারের শিবির থেকে তাদের নিজেদের বসত ভিটা মিয়ানমারে ফিরে যাবে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত উ লুইন ও সোমবার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় এ তথ্য জানান।
লুইন ও বলেন, আগামী ১৫ নভেম্বরের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রথম ব্যাচে ২ হাজার ২৬১ জন রোহিঙ্গা ১৫ দিনে মিয়ানমার ফিরে যাবে। কক্সবাজারের একাধিক শিবির থেকে প্রতিদিন দেড়শ জন করে রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে মিয়ানমারে।’
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ‘নৌপথে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ফিরে যাবে। প্রতিদিন ফিরে যাওয়ার সময় নির্ভর করবে জোয়ার-ভাটার ওপর।’
এর আগে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশ সফররত জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত ক্রিস্টিন এস বার্গনার। বৈঠক শেষে বিশেষ দূত ক্রিস্টিন এস বার্গনারের কাছে প্রত্যাবাসন নিয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীও কোনো মন্ত্য করেননি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মো. দেলোয়ার হোসেন সারাবাংলা’কে বলেন, ‘প্রত্যাবাসনের জন্য ঢাকার পক্ষ থেকে নেপিডো’কে (মিয়ানমারের রাজধানী) দুইটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। প্রথম তালিকায় ৮ হাজার ৩২ এবং দ্বিতীয় তালিকায় ২২ হাজার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নাম হয়েছে।’
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার বাংলাদেশকে জানিয়েছে যে প্রথম ব্যাচের ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গারা খুব বেশি সময় ক্যাম্পে থাকবে না। ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গারা আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাদের বাড়িতেই উঠতে পারবে।
ঢাকাকে নেপিডো’র পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, এরই মধ্যে ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গা নাগরিকদের বসবাসের জন্য ভারত সরকার ২৮৫টি বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছে। আর চীন সরকার এক হাজার বাড়ির কাঠামো পাঠিয়েছে, যেগুলো সংযোগ করলেই পূর্ণ বাড়িতে রূপ নেবে।
সূত্র আরও জানিয়েছে, প্রথম ব্যাচের ২ হাজার ২৬১ জন রোহিঙ্গার মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে ২৩ জনের বিরুদ্ধে আপত্তি দিয়েছে মিয়ানমার।
সারাবাংলা/ আরএ