‘ইসি ও সরকারের ওপর নির্ভর করছে বিরোধী দল নির্বাচনে থাকবে কি না’
১৪ নভেম্বর ২০১৮ ১৮:১৪
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: বিরোধী দল নির্বাচনে টিকে থাকবে কি না, তা নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও নির্বাচনকালীন সরকারের আচরণের ওপর নির্ভর করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের বিভিন্ন দাবি ইসি’র কাছে তুলে ধরেছি। তারা সবকিছুই শুনেছেন, আশ্বাসও দিয়েছেন। তারা সবসময় আশ্বাস দেন। সেই আশ্বাস কতটা বাস্তবায়ন হবে, সেটাই দেখার বিষয়।
বুধবার (১৪ নভেম্বর) আগারগাঁওয়ে ইসি সচিবালয়ে ইসির সঙ্গে বৈঠকের পর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এক ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, আমরা তিন সপ্তাহ নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছি ইসির কাছে। তারা আমাদের দাবি শুনছেন এবং আশ্বাস দিয়েছেন, কমিশন বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নেবে।
ব্রিফিংয়ে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, আজ বিএনপি কার্যালয়ের সামনে যে ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনা ঘটেছে, তাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা দুঃখপ্রকাশ করেছেন।
ড. কামাল বলেন, কমিশনের সঙ্গে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। আমাদের দাবিগুলে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন তারা। ভোটের জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ভোটের আগ পর্যন্ত আমাদের কাছে সহায়তা চেয়েছে ইসি। আশা করি, আমাদের পক্ষ থেকেও সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
পরে ব্রিফিংয়ে ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা আগামী সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) একেবারেই ব্যবহার না করার কথা বলেছি। কমিশন আমাদের বলেছে, তারা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অল্প কিছু স্থানে ইভিএম ব্যবহার করে ভালো ফল পেয়েছে। এই ইভিএম ব্যবহার করে ভোটে ম্যানিপুলেশন করা যায়, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম মেশিন ব্যবহার করা হবে না বলে জানিয়েছে।
ইসির সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনে প্রতিটি কেন্দ্রে সেনামোতায়েনের দাবি জানিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। এছাড়া জনপ্রশাসন ও পুলিশে রদবদলের বিষয়েও বলেছে। মির্জা ফখরুল বলেন, ইসি আমাদের জানিয়েছে, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নির্বাচনে সেনামোতায়েন করার সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছে। তবে প্রতিটি কেন্দ্রে সেনামোতায়েন করা হবে কি না, সে বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছে। জনপ্রশাসন ও পুলিশে রদবদলের বিষয়েও আমাদের আশ্বাস দিয়েছে ইসি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা নেতাকর্মীদের হয়রানি ও গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের কথা বলেছি। তারা এ বিষয়ে শুনেছেন এবং খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন। ভোটকেন্দ্রে এজেন্টদের নিরাপত্তার বিষয়ে বললে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলেও জানিয়েছেন।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ছাড়া ফলপ্রসূ নির্বাচন হবে না বলে কমিশনকে জানানো হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তাকে ছাড়া ছাড়া এটা (নির্বাচন) ফলপ্রসূ হবে না। এটা আমরা বলেছি। উনারা (ইসি) বলছেন, তারা দেখবেন।
নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ‘নির্বাচনি পরিবেশের জন্য শুভ লক্ষণ নয়’ বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি আরও বলেন, আমরা ইসিকে বলেছি, সরকারি দল থেকে প্রিজাইডিং ও সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা বলছে, বিষয়টি তারা খতিয়ে দেখবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আন্তরিকভাবে মনে করি, সংবিধান ইসিকে যে ক্ষমতা দিয়েছে, ইসি সেটা প্রয়োগ করতে পারলে দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব।
এর আগে, বিকেল সাড়ে ৩টায় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রতিনিধি দল পৌঁছায় ইসিতে। বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে সিইসি কে এম নূরুল হুদাসহ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম ও কবিতা খানম উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের শুরুতেই ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘পুলিশি হামলা’র ঘটনার নিন্দা জানান। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে সরকার ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করেছে। এ সময় এ ধরনের পরিস্থিতি না ঘটানোর আহ্বান জানান জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই মুখপাত্র।
আরও পড়ুন-
ভোটের পরিবেশ নষ্ট করতেই হামলা : ফখরুল
সারাবাংলা/জিএস/টিআর