ভোটে নৌকায় ১০, ধানের শীষে ১১, লাঙ্গলে ৩ দল
১৬ নভেম্বর ২০১৮ ১৫:০৩
।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশনে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়ও এগিয়ে আসছে। এরই মধ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) জানিয়েছে, তারা এককভাবে নাকি জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে এবং তাদের প্রতীক কী হবে। সে তথ্য থেকে দেখা যায়, নিবন্ধিত ৩৯টি দলের মধ্যে ২৪টি দল অংশ নেবে মূলত জোটগতভাবে। এর মধ্যে ১০টি দল আওয়ামী লীগের নৌকা, ১১টি দল বিএনপির ধানের শীষ ও তিনটি দল জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকে লড়াই করবে ভোটের মাঠে। নিবন্ধিত বাকি ১৫টি দল জানিয়েছে, তারা নিজ নিজ প্রতীকে নির্বাচনের মাঠে থাকবে একক দল হিসেবে। আইনি কোনো বাধা না থাকায় এসব দল ও জোটের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইসিকে তাদের চাহিদা মোতাবেক প্রতীক বরাদ্দ দিতে হবে।
জানতে চাইলে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘নিবন্ধিত দল ইচ্ছা করলে কোনো জোটের যেকোনো নিবন্ধিত দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবে। তবে নির্ধারিত সময়ে তা ইসিকে অবহিত করতে হবে।’ দলের প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে সংশ্লিষ্ট দলের ন্যূনতম তিন বছর সদস্য থাকার বিধান গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ থেকে ২০১৩ সালে তুলে দেওয়ায় এমন সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে জানান তিনি।
নিবন্ধন নেই বা নিবন্ধন বাতিল হয়েছে— এমন দলের কোনো সদস্য নিবন্ধিত দলের প্রার্থী কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন বলে জানান ইসি সচিব। তিনি বলেন, অনিবন্ধিতদের নির্বাচন থেকে দূরে রাখার কোনো আইন নেই। এমন দলের সদস্যরা যেকোনো নিবন্ধিত দলের প্রার্থী হতে পারবেন। সে অনুযায়ী, নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামী বংলাদেশের নেতারা যেকোনো নিবন্ধিত দল থেকে ভোটে দাঁড়াতে পারবেন কিংবা তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।
ইসি সূত্র জানায়, বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৩৯টি। নিবন্ধিত এই ৩৯টি দলের মধ্যে ২৪টি দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতৃত্বাধীনে দুই জোটে রয়েছে। এর মধ্যে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের ১১টি দল বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করার কথা জানিয়েছে ইসিতে। অন্যদিকে, বাকি ১৩টি দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে থাকলেও এর মধ্যে ১০টি দল অংশ নেবে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে। বাকি তিনটি দলের প্রতীক হবে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল। বিকল্পধারা বাংলাদেশ আবার ইসি জানিয়েছে, নৌকার পাশাপাশি নিজস্ব কুলা প্রতীকেও তারা নির্বাচন করতে আগ্রহী।
নৌকায় ১০ দল
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মোট ১৭ শরিক দল। এর মধ্যে অবশ্য সাতটি দলের নিবন্ধন নেই। আওয়ামী লীগকে বাদ দিলে নিবন্ধন থাকা ১০ দলের মধ্যে রয়েছে— বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল (এমএল), গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, জাতীয় পার্টি (জেপি), ইসলামিক ফ্রন্ট (বাহাদুর শাহ) ও বিকল্পধারা বাংলাদেশ।
এছাড়াও আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে আগ্রহী নিবন্ধন না থাকা সাতটি দল হলো— বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ, রেজাউর রশীদ খান), গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর লীগ, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, বাংলাদেশ জাসদ (আম্বিয়া) কৃষক শ্রমিক পার্টি ও তৃণমূল বিএনপি (হুদা)।
ধানের শীষে ১১ দল
এদিকে, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের মোট ১১টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই দুই জোটের বৃহত্তম শরিক দল বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করতে চিঠি দিয়েছে ইসিতে। এর মধ্যে নির্বাচনের পুনঃতফসিল ঘোষণার আগেই ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে ইসিতে জানানো হয়, তাদের আটটি নিবন্ধিত দল নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক চায়। এই দলগুলো হলো— লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বাংলাদেশ জাতীয় পাার্ট (বিজেপি), জাতীয় গণতান্ত্রিক দল (জাগপা), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ), খেলাফত মজলিশ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। পরে ঐক্যফ্রন্টের তিন দলও ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানায়। এই তিনটি দল হলো— ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, আ স ম আবদুর রবের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) ও কাদের সিদ্দিকীর কৃষিক শ্রমিক জনতা লীগ।
এই ১১টি দলের বাইরেও নিবন্ধন না থাকা আরও ১০টি দলও ধানের শীষের প্রতীকে অংশ নেবে বলে জানিয়েছে। এসব দলের মধ্যে রয়েছে ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য ও নূরুল আমিন ব্যাপারীর বিকল্পধারা বাংলাদেশ। এছাড়া ২০ দলীয় জোটের ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), লেবার পার্টি, ইসলামিক পার্টি, ন্যাপ (ভাসানী), পিপলস লীগ, ডেমোক্রেটিক লীগ, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), নিবন্ধন বাতিল হওয়া জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরাও ধানের শীষ প্রতীকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।
লাঙ্গলে ৩ দল
এদিকে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অংশীদর হলেও জোটের বৃহত্তম শরিক দল আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের বদলে নিজস্ব লাঙ্গল প্রতীকেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছে ইসিকে। তাদের সঙ্গে লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করবে এরশাদের নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের (ইউএনএ) আরও দুইটি দলও নির্বাচনে যাবে লাঙ্গল নিয়ে। দল দুইটি হলো বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ ও ইসলামি ফ্রন্ট।
জোটের বাইরে নিবন্ধিত ১৫ দল
ইসি জানিয়েছে, নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ১৫টি দল ইসিকে জানিয়েছে, তারা নিজস্ব প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে আলাদাভাবে অংশ নেবে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) প্রতীক টেলিভিশন; বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) প্রতীক হাত (পাঞ্জা); বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির প্রতীক কোদাল; বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের (মুক্তিজোট) প্রতীক ছড়ি; ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রতীক হাত পাখা; বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের প্রতীক রিকশা; ইসলামী ঐক্যজোটের প্রতীক মিনার; প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিপি) প্রতীক বাঘ; গণফ্রন্টের প্রতীক মাছ; ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) প্রতীক আম; বাংলাদেশ মুসলিম লীগের প্রতীক হারিকেন; বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) প্রতীক মই; বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রতীক কাস্তে ও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোনে প্রতীক বটগাছ।
উল্লেখ্য, ২৩ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের তারিখ ঠিক করে গত ৮ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। পরে অবশ্য ভোটগ্রহণের তারিখ একসপ্তাহ পিছিয়ে দিয়ে ১২ নভেম্বর পুনঃতফসিল ঘোষণা করা হয়। পুনঃতফসিল অনুযায়ী, আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৮ নভেম্বর। এরপর কমিশন ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করবে। যোগ্য প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে পারবেন ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরদিন ১০ ডিসেম্বর ইসি প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করলে শুরু হবে নির্বাচনি প্রচারণা।
সারাবাংলা/জিএস/টিআর