Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দুর্নীতিবাজদের আমলনামা দুদকের হাতে: দুদক চেয়ারম্যান


২২ নভেম্বর ২০১৮ ২০:৪৭

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: দুর্নীতিবাজদের আমলনামা দুদকের হাতে রয়েছে জানিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, ‘অনেকের আমলনামা আমরা সংগ্রহ করেছি। এগুলো সময়মতো প্রকাশ করবো। আমরা রসদ তৈরি করেছি। দুর্নীতিবাজ হিসেবে পরিচিত যারা তাদের তালিকা হয়েছে। সমাজে সৎ হিসেবে পরিচিত কিন্তু দুর্নীতিবাজ, তাদের আমলনামাও বিশাল।’

বৃহস্পতিবার (২২ নভেম্বর) বিকালে দুদক কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠানটির ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিয়ম সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বক্তব্যে দুদকের অর্জনের পাশাপাশি সমালোচনাও তুলে ধরেন তিনি। সভায় দুদক কর্মকর্তরাও নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুদক যে উদ্দেশে গঠন করা হয়েছিল আমরা সেক্ষেত্রে পুরোপুরি সফল হইনি। এটা ব্যর্থও বলবো না। তবে আংশিক ব্যর্থ। কেন আমরা আংশিক ব্যর্থ তার অনেক ব্যাখ্যা রয়েছে। তবে সত্য সত্যই। আমরা আংশিকভাবে ব্যর্থ।’

দুর্নীতি প্রতিরোধে কোনো প্রতিষ্ঠানের সংস্কার চেয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হলে দুদককে প্রতিপক্ষ মনে করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘২৫টি প্রাতিষ্ঠানিক টিম করেছিলাম। সুপারিশ যদি করতে হয় অনেক সময় লাগে। ৫ থেকে ৬ মাস। দুর্নীতির উৎস আমরা উদঘাটন করতে পেরেছি। কিন্তু রিফর্মের কথা বলতে গেলেই আমলাতন্ত্রের লোকেরা আমাদের প্রতিপক্ষ মনে করে।’

নিজের প্রতিষ্ঠানের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ‘সময়মতো তদন্ত শেষ করা যায় না, অনুসন্ধানেও সময় লাগে। জনগণের বিশ্বাস আমরা সে মাত্রায় অর্জন করতে পারিনি। পেশী শক্তি ও দৈরাত্ম্যের কারণে আমরা তা পারিনি। কালো টাকার দৈরাত্ম্যের কারণে আমরা জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারিনি। তবে সমাজের প্রতিটি স্তরের দুর্বৃত্ত দুর্নীতিবাজদের ধরেছি। আইনের আওতায় এনেছি, বার্তা দিয়েছি আপনাকে ধরা সম্ভব।’

বিজ্ঞাপন

দুদক কর্মকর্তাদের দুর্নীতি প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘দুদকের দুর্নীতির হার অনেকাংশে কমেছে। অনেকেই চাকুরী হারিয়েছেন। কী করলে দুদকের দুর্নীতির উৎস বন্ধ হবে, এই তকমা কেটে যাবে, সেই পরামর্শ আপনারা (জনগণ) দেন। আপনাদের জন্য দরজা খোলা।’

সম্প্রতি পাস হওয়া সরকারি চাকরি আইনের কারণে ফাঁদ মামলা কমে যাচ্ছে দুদকের এক কর্মকর্তার এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘সরকারি চাকরি আইন পাস হয়েছে। এখনও তা কার্যকর হয়নি। বলবৎ হয়নি। ঘুষখোর দুর্নীতিবাজদের ধরতে বাধা নেই। বলবৎ হলে আমরা বসবো। কী করা যায় তা নিয়ে তখন পরামর্শ করা হবে।’

অনুষ্ঠানে আগামী এক বছরের পরিকল্পনাও তুলে ধরেন দুদক চেয়ারম্যান। দুদক প্রধান জানান, আগামী এক বছর একই সুরে কথা বলবে দুদক। জনসম্মুখে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক মূল্যায়ণ প্রতিবেদন তুলে ধরা হবে। কার্যকর করা হবে প্রতিটি প্রতিরোধ কমিটি। সবগুলো সততা সংঘকে পুনঃকার্যকর করা হবে। পাঠ্যপুস্তকে দুর্নীতি বিরোধী মূল্যবোধ সৃষ্টিকারী কবিতা-গল্প-প্রবন্ধ অন্তভূর্ক্তের ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর গঠনতন্ত্রে দুর্নীতিবিরোধী ধারা সংযোজনেরও প্রচেষ্টা চালানো হবে।

দুদক চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘সংবিধান লঙ্ঘন করে যারা কালো টাকা অর্জন করেছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো ব্যক্তির রাজনৈতিক, সামাজিক বা পেশাগত পরিচয় কমিশনের কাছে বিবেচ্য বিষয় নয়। কেউ যদি সংবিধান লঙ্ঘন করে কালো টাকা বা অবৈধ সম্পদ অর্জন কিংবা পেশিশক্তি ব্যবহার করে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিজ্ঞাপন

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘কমিশন দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে কোনো কালো টাকা বা অবৈধ সম্পদ অর্জনকারীদের দেশের জনগণ নির্বাচিত করবে না।’

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তবে নির্বাচনী ব্যায়ের নামে কালো টাকা ব্যয়ের বিষয়টি দুদক পর্যবেক্ষণ করবে। কমিশন প্রত্যাশা করে নির্বাচনী ব্যায়ের ক্ষেত্রে সবাই স্বচ্ছতা বজায় রাখবেন এবং নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন কমিশনে ব্যয় বিবরণী জমা দেবেন। হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিবেন না, এখানে অবৈধ সম্পদের কোনো বিষয় থাকলে দুদক আইনি প্রক্রিয়া অবলম্বন করবে।’

মতবিনিময় সভায় দুদক কমিশনার এ এফ এম আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আগে দুদককে নখদন্তহীন বাঘ মনে করা হতো। এখন সে অবস্থা নেই। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করার জন্য আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। ফাঁদ মামলার কারণে দুর্নীতিবাজদের বুকের সাহস কমে যায়। তবে বর্তমানে সেটি থেকে পিছিয়ে গেছি। সরকারি কর্মচারী আইনের কারণে আমরা কতোটুকু কী করতে পারবো তা নিয়ে আমার সন্দেহ রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ব্যুরোর কিছু মামলা এখনও রয়ে গেছে। এখনও একটি বিভাগ চলছে। আমার মতে সেটি বন্ধ করে দেয়া উচিৎ। দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্তে অনেক ত্রুটি রয়েছে। এটা থেকে বের হতে হবে। দুদক এখনও ডিজিটাল সেবা চালু করতে পারেনি। অনলাইনে অভিযোগ দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। দুর্নীতি আমাদের দেশের প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ করে খেয়ে ফেলছে। দুর্নীতি না থাকলে প্রবৃদ্ধি ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে যেত। দুর্নীতি দূর করতে পারলে বাজেটের সঠিক ব্যবহার হবে। ৫ বছরেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হয়ে যাবে।’

মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কমিশনের সচিব ড. মো. শামসুল আরেফিন, পরিচালক শিরিন পারভীন, উপ-পরিচালক মো. গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী, সহকারী পরিচালক সেলিনা আখতার মনি প্রমুখ।

সারাবাংলা/ইএইচটি/এমও

দুদক দুদক চেয়ারম্যান

বিজ্ঞাপন

মাদকের টাকার জন্য মা'কে খুন
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৭

আরো

সম্পর্কিত খবর