Tuesday 29 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অবৈধ অটোরিকশা ‘বৈধ’ বানিয়ে কোটিপতি কবির-মিজান


২৪ নভেম্বর ২০১৮ ১৯:০৪
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম শহর ও আশপাশের এলাকা থেকে চুরি করা সিএনজি চালিত অটোরিকশা খোলনলচে পাল্টে দেয় তারা। ইঞ্জিন ও চেসিস নম্বর পাল্টে দেয় চট্টগ্রাম নগরীর একটি অটোরিকশা গ্যারেজের মালিক মো. কবির হোসেন। আর মো. মিজানুর রহমানের কাছে রেডি থাকে নিবন্ধন নথি। মিজানুর রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) দালাল হিসেবেও পরিচিত। কবির এবং মিজান মিলে চোরাই অটোরিকশাকে ‘বৈধ’ বানিয়ে ইতোমধ্যে পরিণত হয়েছেন কোটিপতিতে।

এর আগে চট্টগ্রাম নগরীতে পাঁচটি চোরাই অটোরিকশাসহ দুজনকে গ্রেফতারের পর তাদের কাছ থেকে কবির-মিজানসহ বেশ কয়েকজনের তথ্য পান নগর গোয়েন্দা পুলিশ। যারা এতদিন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

নগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানিয়েছে, অটোরিকশা চুরি, চোরাই অটোরিকশা বৈধ করা এবং বেচা-কেনার সঙ্গে জড়িত চক্রের মূল হোতা কবির ও মিজান।

চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (দক্ষিণ) মো. ইলিয়াছ খাঁন সারাবাংলাকে বলেন, ‘কবির ও মিজানের অধীনে অনেক চোর কাজ করে। চুরির পর তারা একেকটি গাড়ি ৬০-৭০ হাজার টাকায় কিনে নেয়। এরপর ইঞ্জিন ও চেসিস নম্বর পাল্টে ফেলে। বৈধ গাড়ির ডকুমেন্ট ব্যবহার করে চোরাই গাড়ির ডকুমেন্ট বানিয়ে দেয়। তারপর গ্যারেজে রেখে এক থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করে।’

কবির হোসেন কবির মিস্ত্রি নামে পরিচিত। নগরীর পাঁচলাইশ থানার বাদুরতলায় রঞ্জু মিয়া লেনে কবির মিস্ত্রির অটোরিকশার গ্যারেজ আছে। ‍শুক্রবার (২৩ নভেম্বর) রাতে কবির মিস্ত্রির গ্যারেজে অভিযান চালিয়ে সুমন ও আরাফাত নামে দুই যুবককে গ্রেফতার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ, যারা কবির-মিজানসহ বেশ কয়েকজনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়।

দ্রুততম সময়ের মধ্যে অটো রিকশার ইঞ্জিন ও চেসিস নম্বর চট্টগ্রামে একমাত্র কবির মিস্ত্রির গ্যারেজেই সম্ভব বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ইলিয়াছ খাঁন।

সুমন ও আরাফাতসহ অনেক পেশাদার সিএনজি অটোরিকশা চোর কবির মিস্ত্রির গ্যারেজে কাজ শিখে তারপর চুরিতে জড়িয়েছে বলেও জানান ইলিয়াছ।

‘গ্রেফতারের পর সুমন ও আরাফাত জানিয়েছে- কবির মিস্ত্রি কাজ শেখালেও ইঞ্জিন ও চেসিস নম্বর উঠানো এবং নতুন করে বসানোর কাজ কাউকে শেখায় না। এই কাজ একমাত্র তিনিই জানেন বলে চট্টগ্রাম নগরীসহ আশপাশের জেলা থেকে চুরির পর অটোরিকশা চলে আসে তার গ্যারেজে।’

চোরাই অটোরিকশা নিয়ে মিজানুর রহমানের কার্যক্রমের আরও চমকপ্রদ তথ্য পাওয়া গেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে। বিআরটিএ’র দালাল হিসেবে পরিচিত মিজানের সুসজ্জিত অফিস আছে নগরীর বাদুরতলায় কে বি হোটেলের ওপরে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা ইলিয়াছ খাঁন সারাবাংলাকে বলেন, ‘যেসব অটোরিকশা দুর্ঘটনার শিকার হয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে যায়, অথবা পুড়ে যায় সেগুলোর নথিপত্র সংগ্রহ করে মিজান। চুরি করে আনা অটোরিকশার সেসব নথিতে থাকা তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে পরিবর্তন করে নেয়। বিআরটিএ-তে তো আগের গাড়ির তথ্য আছে। কিন্তু সেই বৈধ নথি অনুযায়ী যে আরেকটি অবৈধ গাড়ি চলছে সেটা তো বিআরটিএ’র বোঝার কোনো উপায় নেই। এমনকি পুলিশেরও বোঝার কোনো সাধ্য নেই। আমরা পাঁচটি গাড়ি উদ্ধার করেছি। এরকম শত, শত গাড়ি তারা বৈধ বানিয়ে বাজারে বিক্রি করেছে।’

রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা কবির ও মিজানের এসব কার্যক্রম এতদিন অজানা ছিল প্রশাসনের। অটোরিকশা চোর চক্র ধরা পড়লেও কবির-মিজানদের চক্রটি ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে কোটি কোটি টাকা আয় করে গেছে বলে জানান ইলিয়াছ খাঁন।

নগর গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, কবির-মিজানদের সঙ্গে দেলোয়ার ও মিঠু নামে আরও দুজন দুর্ধর্ষ চোর আছে। নগরীর বাকলিয়া থানার চান্দাপুকুর পাড়ের পূরবী আবাসিকের রিজিয়া অটোপার্টস অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের মালিক মানিক মিস্ত্রিও আছে তাদের দলে। সেই গ্যারেজেও চোরাই অটোরিকশার রঙ-বডি পরিবর্তন করা হয়। এ ছাড়া জাহাঙ্গীর আলম, সৈয়দ নূর, রশিদ, আব্বাস, মজিদসহ আরও কয়েকজন আছে যারা চোরাই অটোরিকশার ক্রেতা ধরে আনে। বিক্রির পর প্রত্যেক ব্রোকার ১০১৫ হাজার টাকা পায়।

গ্রেফতার হওয়া সুমন ও আরাফাতের তথ্যে যাদের নাম এসেছে সবাইকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

সারাবাংলা/আরডি/এমআই

অটোরিকশা সিএনজি

বিজ্ঞাপন

কুয়েটে ক্লাস শুরু
২৯ জুলাই ২০২৫ ১১:৪০

আরো

সম্পর্কিত খবর