‘হাইকোর্টে দণ্ড স্থগিতের বিধান নেই’
২৬ নভেম্বর ২০১৮ ১৩:১৩
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: বিচারিক আদালতে দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় তা ‘স্থগিতের বিধান নেই’ বলে আদেশ দিয়ে এক আইনজীবীর করা আবেদন খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট।
আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ‘চাইলে আবেদনকারী আপিল বিভাগে যেতে পারেন। আপিল বিভাগ এ ব্যাপারে একটা প্রিন্সিপাল স্যাটেল করতে পারে। পরবর্তীতে হাইকোর্ট সেটা অনুসরণ করতে পারে।’
সোমবার (২৬ নভেম্বর) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
মানতাবিরোধী অপরাধে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় ফাঁসের মামলায় ১০ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামের দণ্ড স্থগিত চেয়ে করা আবেদন খারিজ করে দিয়ে আদালত এ আদেশ দেন।
আবেদনের পক্ষে ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোর্শেদ।
পরে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোর্শেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘দণ্ড স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল। আজ এটা খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। যার ফলে তার দণ্ড বহাল আছে। যদি আজকে তার সাজাটা স্থগিত হতো তাহলে রাজনৈতিকভাবে যারা দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আছে তারা আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারতো। আজকের আদেশের ফলে তাদের আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগটা থাকলো না।’
তিনি জানান, ‘আদালত বলেছেন, আপনারা ইচ্ছা করলে এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যেতে পারেন। আপিল বিভাগ এ ব্যাপারে একটা প্রিন্সিপাল স্যাটেল করতে পারেন। পরবর্তীতে হাইকোর্টও সেটা অনুসরণ করতে পারে।’
এই সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এর মধ্যে যাদের সুপ্ত ইচ্ছা ছিলো যে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ খালেদা জিয়াসহ অন্যরা নির্বাচন অংশ গ্রহণ করতে পারবেন। সেই ইচ্ছাটা আপাতত বাতিল হয়ে গেলো।’
তিনি বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির এমন কোনো সেকশন নেই যেটা অনুসরণ করে সাজাটা স্থগিত করা যাবে। যার কারণে আদালত পর্যবেক্ষণ দিয়ে তার আবেদন খারিজ করেছেন।’
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর রায় ফাঁসের মামলার ১০ বছর কারাদণ্ড দিয়ে রায় দেন বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের বিচারক কে এম শামসুল আলম।
রায়ে সাকা চৌধুরীর আইনজীবী ব্যারিস্টার এ কে এম ফখরুল ইসলামকে ১০ বছর এবং ম্যানেজার মাহবুবুল হাসান, ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামের জুনিয়র আইনজীবী মেহেদী হাসান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কর্মচারী ফারুক আহমেদ ও নয়ন আলীকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অন্য দুই আসামি সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী ও ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী খালাস পান।
ব্যারিস্টার ফখরুলকে দশ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ছয়মাস এবং অন্য চারজনকে দশ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে ছয়মাস করে কারাদণ্ডও দেওয়া হয়।
এ দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিলের পর ২০১৬ সালের ৪ এপ্রিল কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আইনজীবী ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলামকে জামিন দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এদিকে তার আপিল বিচারাধীন রয়েছে। এ অবস্থায় তিনি দণ্ড স্থগিত চেয়ে আবেদন করেন। যেটা সোমবার খারিজ হয়ে যায়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। তবে রায়ের আগেই সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্য এবং আইনজীবীরা রায় ফাঁসের অভিযোগ তোলেন। তারা ‘রায়ের খসড়া কপি’ সাংবাদিকদের দেখান এবং স্পাইরাল বাইন্ডিং করা কপি নিয়ে ট্রাইব্যুনালের এজলাস কক্ষে যান। এ রায় ফাসেঁর অভিযোগে তৎকালীন ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন।
সারাবাংলা/এজেডকে/এমআই