সিরাজগঞ্জে ৩ হাজার শিক্ষার্থীর ভরসা বাঁশের সাঁকো
২৮ নভেম্বর ২০১৮ ০৮:৩৪
।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা থানার নলকা ইউনিয়নের মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে ফুলজোড় নদী। এই নদী নলকা ইউনিয়নকে দুই ভাগে ভাগ করেছে। নদীর দুই পাড়ের মানুষদের চলাচলের জন্য এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে একটি সেতু নির্মাণের দাবি করে এলেও চার যুগেও সে দাবি পূরণ হয়নি। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে স্থানীয়দের। আর বেশি ভোগান্তিতে পড়ছে এই এলাকার শিক্ষার্থীরা। কারণ নলকা ইউনিয়নের ১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন এই নদী পেরিয়েই যাতায়াত করতে হয়।
ফুলজোড় নদীর পশ্চিম পার ঘেঁষে রয়েছে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক। অথচ নদীর উল্টো পার থেকে এপারে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম সাহেবগঞ্জ ও কেসি ফরিদপুর খেয়াঘাট। ৭০০ ফুট প্রস্থের এই নদীর পাড়ি দিতে বর্ষা মৌসুমে খেয়া নৌকাতেই ভরসা রাখতে হয় স্থানীয়দের। তবে শুকনো মৌসুমে ভোগান্তিটা বাড়ে, যখন নদীতে খেয়া পারাপারের জন্য যথেষ্ট পানি থাকে না। এমন সময়ের জন্য স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর স্থাপন করা ২০০ ফুট দীর্ঘ বাঁশের সাঁকোই পরিণত হয় একমাত্র ভরসায়।
ঠিক একই চিত্র এখনকার ফুলজোড় নদীতে। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় খেয়া ঘাট পড়েছে নাব্য সংকটে। ফলে আবারও তৈরি হয়েছে বাঁশের সাঁকো। সেমাউল উংডং নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবার উদ্যোগ নিয়ে তৈরি করেছে সাঁকোটি। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম জানান, এ বছর সাঁকোটির পেছনে খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। আর সেই সাঁকো দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হচ্ছে নলকা ইউনিয়নের ২৫ গ্রামের মানুষ ও ১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থীকে।
ফুলজোড় নদীর পূর্ব পাশে রয়েছে চরফরিদপুর, পূর্ব ফরিদপুর, আঙ্গারু, বিষ্ণপুর, কাঠালবাড়ি, বোয়ালিয়ারচর, রামপুর, চরগাতী, সেনগাতী, ঝাকড়ি, হাটকান্দা, এরান্দহ, মনোহরপুর, রামপুর, মথুরাপুর ও চররগুনাথপুর গ্রাম। অন্যদিকে, পশ্চিম পাশে রয়েছে সাহেবগঞ্জ, দাদপুর, রায়েরপাড়া, আলমচাদপুর, শেওড়াবাড়ি, মোহৎপুর, দত্তকুশা, কালিপুর ও দাসপাড়া। এই ২৫টি গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। এ পথ দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৭ হাজার মানুষ যাতায়াত করে থাকে।
এদিকে, নদীর পূর্ব প্রান্তে রয়েছে আঙ্গারু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফরিদপুর ফোরকানিয়া মাদ্রাসা, কেসি ফরিদপুর দাখিল মাদ্রাসা, বিষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কেসি ফরিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কেসি ফরিদপুর কওমিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা, কেসি ফরিদপুর দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও পূর্ব ফরিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
আর পশ্চিম প্রান্তে রয়েছে সাহেবগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দাদপুর জিআর (স্নাতক) ডিগ্রি কলেজ, মুরাদপুর ফাজিল মাদ্রাসা, সাহেব উচ্চ বিদ্যালয়, দাদপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ।
সব মিলিয়ে নদীর দুই পারে অবস্থান ১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি দফতর আর বেসরকারি সংস্থা তো রয়েছেই। সবকিছুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকেই শেষ পর্যন্ত ওই বাঁশের সাঁকো দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে একটি সেতুর দাবি করে এলেও সে দাবি পূরণ হয়নি।
জানতে চাইলে নলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার সারাবাংলাকে বলেন, একটি সেতুর জন্য আমরা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে দিনের পর দিন ধরনা দিয়েছি। তবে তাতে কোনো কাজ হয়নি।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ তাড়াশ ও সলঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব গাজী ম ম আমজাদ হোসেন মিলন সারাবাংলাকে বলেন, সাহেবগঞ্জ-কেসি ফরিদপুরে ফুলজোড় নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। সেতুটির জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
সারাবাংলা/জেডএফ