গণতন্ত্র মুক্তি দিবস আজ
৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৮:১৬
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: আজ ৬ ডিসেম্বর। ঐতিহাসিক গণতন্ত্র মুক্তি দিবস। স্বৈরাচার পতন দিবস, তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিবস বা সংবিধান সংরক্ষণ দিবস হিসেবেও কেউ কেউ পালন করে থাকে দিবসটি। ১৯৯০ সালের এই দিনে গণঅভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মহাবিজয় অর্জিত হয়।
বর্তমানে রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের অন্যতম শরিক দল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতীয় সংসদের একদশতম নির্বাচন, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় যার গুরুত্ব অপরিসীম।
দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বাণীতে বলেছেন, গণতন্ত্রের ভিত্তিকে আরও শক্তিশালী করে দেশের উন্নয়ন ও জনগণের কল্যাণে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। গণতন্ত্র মুক্তি দিবসে এই হোক আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার।
গণতন্ত্র মুক্তি দিবসকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ইতিহাসে তাৎপর্যপূর্ণ দিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৯০ সালের এই দিনে স্বৈরাচারের পতন হয়।
এ মহান দিবসে গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী সংগ্রামী দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯০ পরবর্তী দুই দশকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার রক্ষায় দায়িত্বশীল ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে অবৈধ ক্ষমতা দখলের পথ রুদ্ধ হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্র, সংবিধান, আইনের শাসন ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা দেশে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ করেছি। আমরা সপরিবারে জাতির পিতার হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করেছি। জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বৈরাচারী শাসন উৎখাত করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, জনগণের ভোট ও মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা দীর্ঘ সংগ্রাম করি। এ আন্দোলন-সংগ্রামে দেশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়। নূর হোসেন, বাবুল, ফাত্তাহ, ডা. মিলনসহ অগণিত গণতন্ত্রকামী মানুষ আত্মাহুতি দেন। স্বৈরাচারী শাসক গণআন্দোলনের কাছে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়। শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় গণতন্ত্র।
এ অর্জন ধরে রাখতে তার সরকার বদ্ধপরিকর উল্লেখ করে তিনি দেশবাসীর এই স্বতঃপ্রণোদিত ত্যাগ ও অধিকার রক্ষায় আপসহীনতার জন্য কৃতজ্ঞতা এবং গণতন্ত্র ও অধিকার আদায়ের সব আন্দোলন-সংগ্রামে জীবন উৎসর্গকারী দেশপ্রেমিক শহীদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান।
উল্লেখ্য, ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ জনগণের ভোটে নির্বাচিত বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে তৎকালীন সেনাপ্রধান এরশাদ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হন। ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার তার সামরিক লেবাস বদলে হন ‘গণতন্ত্রী’। কিন্তু দেশের মানুষ তাকে মেনে নেয়নি। তার বিরুদ্ধে লড়াই হয়েছে টানা প্রায় ৯ বছর। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৫ দল, বিএনপির নেতৃত্বে ৭ দল ও বামপন্থীদের নিয়ে গঠিত ৫ দলীয় জোট তীব্র আন্দোলনে নামে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেয়।
১৯৯০ সালের নভেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করে। এরশাদ সে সময় ছাত্র আন্দোলনে ভাঙন ধরানোর জন্য একটি চক্রকে ব্যবহার করে। পুলিশের ছত্রছায়ায় এই চক্রের গুলিতে ২৭ নভেম্বর টিএসসির সামনে তৎকালীন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. শামসুল আলম খান মিলন শহীদ হন। ডা. মিলনের তাজা রক্ত ছাত্র-গণআন্দোলনকে আরও বেগবান করে। সেদিন থেকে সাংবাদিকরা সব সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থায় অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট আহ্বান করেন।
৫ ডিসেম্বর রাতে এরশাদ পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেন। পরদিন রাজপথে নামে জনতার ঢল। যেন এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পাওয়ার আবেগপ্লুত গোটা জাতি। সংবাদপত্র আবার প্রকাশিত হয়। আন্দোলনরত দল ও জোটগুলোর ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে প্রথম নির্দলীয় নিরপক্ষে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। বিচারপতি শাহাবুদ্দীন সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশ থেকে স্বৈরতন্ত্রের আনুষ্ঠানিক বিদায় ঘণ্টা বাজে এবং শুরু হয় গণতন্ত্রের নতুন অভিযাত্রা।
সারাবাংলা/টিআর
গণতন্ত্র মুক্তি দিবস তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিবস স্বৈরাচার পতন দিবস