‘প্রতিকারহীন সমস্যা’য় চুয়াডাঙ্গার ২ মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার
৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৯:০৩
।। রিফাত রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
চুয়াডাঙ্গা: প্রতিষ্ঠার পর থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় প্রতিকারহীন সমস্যা নিয়েই চলছে চুয়াডাঙ্গার ডিঙ্গেদহ ও জীবননগর মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার। বর্তমানে মাত্র দু’জন খামার ব্যবস্থাপক বাধ্যতামূলক লক্ষ্যমাত্রা পূরণের চাপ নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
চুয়াডাঙ্গা মৎস্য বীজ খামার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে ডিঙ্গেদহে অবস্থিত মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারটি। সরকারিভাবে ১৯৬২ সালে ১০ একর জমি অধিগ্রহণের পর ১৯৮২ সালে এ প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সে সময় ছিলো গার্ড সেড, কার্যালয়, হ্যাচারি ওভার হেড ট্যাঙ্ক, গাড়ি রাখার গ্যারেজ, ৮টি পুকুর ও সীমানা প্রাচীর।
প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে আর কোনো সংস্কার কাজ না হওয়ায় গার্ড সেড, কার্যালয় (কিছু অংশ বাদে), গ্যারেজ ও পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। হ্যাচারির ওভার হেড ট্যাঙ্কি ভেঙে গেছে নেই কোনো সেড, ১৯৯৪ সাল থেকে কুষ্টিয়া ক-১৮৩ জিপটিও অকেজো হয়ে পড়ে আছে। কার্যালয় থেকে জিপটি অকেজো প্রতিবেদনটি ঢাকায় পাঠানো হয়েছে, সেখান থেকে ওটা নিলামের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া শুরু থেকে কোনো সংস্কার করা না হওয়ায় ৮টি পুকুর ভরাট হয়ে গেছে।
ডিঙ্গেদহ মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের ব্যবস্থাপক তালেবুল ইসলাম জানান, ২০১৮ সালে এ খামারের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো রেণু ১০৫ কেজি ও পোনা ২ লাখ ২০ হাজার ও চিতলের পোনা ৩ হাজার। নানান প্রতিকূলতার মধ্যেও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। উৎপাদিত রেণু ১ হাজার ৬০০ টাকা, ৩ থেকে ৪ ইঞ্চি মাপের পোনা প্রতিটি ১ টাকা ও চিতলের ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি মাপের পোনার দাম ১২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘৮টি পুকুর সংস্কার না করার কারণে মৎস্য বীজ উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। এ খামার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় বছরে সব্বোর্চ উৎপাদনের সক্ষমতা ছিলো পোনা ৩ লাখ ও রেণু ২০০ কেজি, বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে পোনা ২.২০ কেজি ও রেণু ১০৫ কেজি।’
খামার ব্যবস্থাপক আরও জানান, গোটা চুয়াডাঙ্গা জেলায় ২ কোটি ৫০ লাখ পোনা ও ৪৫০ কেজি রেণুর চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে খামারে ১ জন হ্যাচারি সহকারী, ১ জন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, ১ জন স্টোর কিপার, ১ জন হ্যাচারি পরিচালক, ১ জন অফিস সহায়কের পদ শুন্য এবং গাড়িচালক প্রেষণে জেলা মৎস্য কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এটার উন্নয়নের ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নে্রয়া হয়নি। সে কারণে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেই উৎপাদন চালিয়ে যেতে হচ্ছে।
অন্যদিকে, চুয়াডাঙ্গা থেকে ৩৬ কিলোমিটার দূরে ১৯৮২ সালে ৬.৯৯ একর জমির ওপর নির্মিত হয় জীবননগরে মৎস্য বীজ উৎপাদন খামার। এখানে মৎস্য বীজ উৎপাদনের জন্য ৫টি পুকুর রয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় খামারের হ্যাচারি অংশটি সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে যাওয়ায় খামারে শুধুমাত্র পোনা উৎপাদন কার্যক্রম চলছিলো।
এরপর ২০০৮ সালে খামারটিতে ব্রুড ব্যাংক স্থাপন প্রকল্প (২য় পর্যায়) কার্যক্রম শুরু হয় এবং ২০১৩ সালের জুন মাসে কার্যক্রম শেষ হয়। বর্তমানে খামারটিতে বিভিন্ন প্রজাতির কার্পের রেণু , প্রাকৃতিক উৎসের পোনা উৎপাদন ও ব্রুড উৎপাদন কার্যক্রম চলছে। তবে পুকুরগুলো দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় উৎপাদন কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। ব্রুড ব্যাংক স্থাপন প্রকল্প (২য় পর্যায়) থেকে ২০০৮ সালে কার্যালয় ভবন, খামারের হ্যাচারি অংশ, গার্ডসেড এবং ওভারহেড ট্যাঙ্ক মেরামতের কাজ শেষ করা হয় এবং বর্তমানে খামারের সীমানা প্রাচীর মেরামত এবং গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়।
জীবননগরে মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের ব্যবস্থাপক আব্দুল কাদের জানান, উৎপাদন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য খামারের পুকুরগুলোর সংস্কার, পুকুরগুলোতে পানি সরবরাহ লাইন, খামারে বিদ্যুতায়ন, রিটেননিং ওয়াল নির্মাণ এবং খামারের অফিস কাম নিরীক্ষা ঘর মেরামত করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ‘এ প্রতিষ্ঠানে সিলভার কার্প মাছের রেণু, রুই ও মৃগেলের পোনা উৎপাদন করা হয়। জীবননগর থেকে ঝিনাইদহ জেলার কোর্টচাঁদপুর উপজেলায় বেসরকারিভাবে হ্যাচারি গড়ে ওঠায় সেখান থেকে কমদামে মৎস্যজীবীরা রেণু ও পোনা কিনছে। সে কারণে সরকারি হ্যাচারি এগুলো বেঁচতে সমস্যায় পড়েছে। বর্তমানে ২০১৮ সালে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো রেণু ৭০ কেজি ও পোনা ১.৮২ লাখ। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়াটা সম্ভব নয়।’
খামার ব্যবস্থাপক আব্দুল কাদের আরও জানান, বর্তমানে খামারের চারপাশে জঙ্গল থাকায় এবং ৫টি পুকুরের পাড় ভেঙে যাওয়ার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া এখানকার ১টি আবাসন ব্যবস্থা ব্যবহারের অনুপযোগী, অফিস ভবন, হ্যাচারি ভবন, গার্ড সেড, জাল শুকানো ঘর, ১টি ওভারহেড ও ২টি সার্কুলার ট্যাঙ্ক, ৫টি সিসর্টান, ৭টি হ্যাচিং জার কাজের উপযোগী নয়। এ খামারে ক্ষেত্র সহকারী ১ জন ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপরেটর ১ জন বদলি জনিত কারণে শুন্য রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা ছাড়া এ হ্যাচারির উৎপাদন গতিশীল করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের বাধ্যতামূলক উৎপাদন চালিয়ে যেতে হচ্ছে।’
সারাবাংলা/এমও