Monday 19 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

খুলনা বিভাগে ৬০ শতাংশ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ!


১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৭:৩৬ | আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৭:৪৮

।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

খুলনা: খুলনা বিভাগের ৩৬টি সংসদীয় আসনে চার হাজার ৫২৫টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে দুই হাজার ৭৪২টি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ! সে হিসাবে গোটা বিভাগে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা মোট ভোটকেন্দ্রের প্রায় ৬০ শতাংশ। কেবল খুলনা জেলাতে এর হার আরও বেশি; এই জেলার প্রায় ৭৬ শতাংশ ভোটকেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ।

সম্প্রতি খুলনা রেঞ্জ কার্যালয় থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ভোটকেন্দ্র ও ভোটার সম্পর্কে পুলিশ সদর দফতরে পাঠানো প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। যদিও এ তথ্যে প্রয়োজনে সংযোজন-বিয়োজন হতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ এসব কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কী পরিমাণ সদস্য মোতায়েন থাকবে, তা এখনও জানায়নি নির্বাচন কমিশন। তবে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে সাধারণ ভোটকেন্দ্রের তুলনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাড়তি সদস্য মোতায়েন রাখা হয়।

সর্বশেষ গত ১৫ মে কেসিসি নির্বাচনে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েনের পরও কেন্দ্র দখল ও জাল ভোটের অভিযোগ ওঠে। তার আগে, উপজেলা পরিষদ ও ইউপি পরিষদ নির্বাচনেও ব্যাপক অভিযোগ ছিল। এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে ১০ বছর পর অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে যাওয়ায় সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়েই ভাবছেন সবাই।

খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) তথ্য অনুযায়ী, কেসিসি নির্বাচনে ২৮৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২২৬টিকে ঝুঁকিপূর্ণ এবং ৬৩টিকে সাধারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে তাদের প্রতিবেদনটি পাওয়া যায়নি। প্রসঙ্গত, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ ও ঝুঁকিমুক্ত কেন্দ্রকে সাধারণ ভোটকেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করে থাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

বিজ্ঞাপন

খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের সূত্রমতে, খুলনা জেলার চারটি আসনে গড়ে প্রায় ৭০ শতাংশ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। এ চারটি আসনের মোট কেন্দ্রর ২৮৩টি ঝুঁকিপূর্ণ ও ১৯৩ কেন্দ্র সাধারণ। তার মধ্যে খুলনা-১ আসনের বটিয়াঘাটায় ৩৬ ও দাকোপে ২৯, খুলনা-৪ আসনের রূপসায় ৩৪, তেরখাদায় ২৪ ও দিঘলিয়ায় ২৪, খুলনা-৫ আসনের ফুলতলায় ৯ ও ডুমুরিয়ায় ৩৬টি, খুলনা-৬ আসনের পাইকগাছায় ৩৪ ও কয়রায় মাত্র পাঁচটি বাদে ৫৭টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ।

এছাড়া বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসনের ৪৬৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৫৮টিই ঝুঁকিপূর্ণ। তার মধ্যে বাগেরহাট-১ আসনের চিতলমারীতে ১৭, মোল্লাহাটে ২৪ ও ফকিরহাটে ৩৯টি, বাগেরহাট-২ আসনের সদরে ৭৩ ও কচুয়ায় ১৪টি; বাগেরহাট-৩ আসনের রামপালে ৪১ ও  মোংলায় ৩০টি; বাগেরহাট-৪ আসনের মোড়েলগঞ্জে ৯২ ও শরণখোলায় ২৮টি ঝুঁকিপূর্ণ ভোট কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে। সাতক্ষীরার চারটি আসনে ৫৯৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪৯০টিই ঝুঁকিপূর্ণ।

সাতক্ষীরা-১ আসনের তালায় ৪৭ ও কলারোয়ায় ৬৩টি, সাতক্ষীরা-২ আসনের সদরে ১০৭টি, সাতক্ষীরা-৩ আসনের আশাশুনিতে ৭৩, দেবহাটায় ৩০ এবং সাতক্ষীরা-৪ আসনের শ্যামনগরে ৭৬ ও কালীগঞ্জে ৬৩টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ।

যশোরের ছয়টি সংসদীয় আসনে ৭৯৯টি কেন্দ্রর মধ্যে ৩৬৩টিই ঝুঁকিপূর্ণ বা গুরুত্বপূর্ণ। তার মধ্যে যশোর-১ আসনের শার্শা উপজেলায় ৩২, যশোর-২ আসনের চৌগাছায় ৩৫ ও ঝিকরগাছায় ৪৬, যশোর-৩ আসনের সদরে ৯৩, যশোর-৪ আসনের বাঘারপাড়ায় ২৫ ও অভয়নগরে ৪৩, যশোর-৫ আসনের মণিরামপুর উপজেলায় ৩৫ এবং যশোর-৬ আসনে কেশবপুর উপজেলায় ৪০টি ভোট কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ। নড়াইলের দু’টি সংসদীয় আসনের ২৪২টি কেন্দ্রের ১৬৫টিই ঝুঁকিপূর্ণ। তারমধ্যে নড়াইল-১ আসনের সদরে ৬৮ ও কালিয়ায় ১৬ এবং নড়াইল-২ আসনের লোহাগড়ায় ৬৩ ও নড়াগাতিতে ১৮টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ। তাছাড়া ঝিনাইদহের ৫৭৮টির মধ্যে ২৫০টি, মাগুরার ২৭৭টির মধ্যে ১৮৭টি, কুষ্টিয়ার ৫৬৫টির মধ্যে ৩২৩, চুয়াডাঙ্গার ৩৩৪টির মধ্যে ১৭২টি, মেহেরপুরে ১৮৯টির মধ্যে ১৫১টি ভোট কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ।

বিজ্ঞাপন

খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি মো. দিদার আহমেদ বলেন, পুলিশ সদর দফতর থেকে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছিল, প্রয়োজনীয় তথ্য পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে শুধু ভোটের সময়ে নয়, নির্বাচনের আগ থেকেই বিশেষ নজরদারি রাখছে পুলিশ।

খুলনার রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোটদানে পর্যাপ্ত পরিমাণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্য মোতায়েন করা হবে। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশও দায়িত্ব পালন করবে। তাছাড়া র‌্যাব, বিজিবি এমনকি (খুলনা-২) ইভিএম পরিচালনায় অভিজ্ঞ সেনা সদস্যও থাকতে পারেন। তবে এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি। যথাসময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই খুদা বলেন, ‘আগে থেকেই যদি জানা থাকে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তথ্য, তাহলে পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে ঝুঁকি কাটিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা সম্ভব। নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ চাইলে এরকম নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টি করা কঠিন হবে না।’

সারাবাংলা/একে

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর