১ বছরের কম ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা
১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৫:৫০
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: এক বছরের নিচে ও ৬৫ বছরের ওপরে সকল নাগরিককে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ স্লোগান নিয়ে নির্বাচনি ইশতেহার-২০১৮ ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এই ইশতেহারে ২১টি বিশেষ অঙ্গীকারকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সকলের জন্য স্বাস্থ্য, পুষ্টিসেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ঘোষিত নীতি। রূপকল্প-২০২১ ও রূপকল্প-২০৪১-এর মাধ্যমে আমরা দেশকে এমন এক জায়গায় নিতে চাই, যেখানে মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা এবং পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে সকল নাগরিক উন্নত জীবন উপভোগ করতে পারে।’
‘নৌকায় ভোট দিন, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি দেব’
টানা মেয়াদে সাফল্য ও অর্জনগুলো তুলে ধরে ইশতেহারে বলা হয়েছে, ১৯৯৬-২০০১ পর্বে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রতি ৬ হাজার জনসংখ্যার জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় এসে ৪ হাজার স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে গ্রামীণ জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা এবং ৪৫ প্রকার ঔষধ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি হাজার জীবিত জন্মে ৩.৪৮ থেকে ১.৭২ এবং শিশুমৃত্যুর হার ৪১ থেকে ২৪ জনে নামিয়ে আনা হয়েছে। মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ুষ্কাল এখন ৭২.৮ বছর, যা ২০০৯-এ ছিল ৬৬.৮ বছর। ৫৩টি উপজেলায় মাতৃ-ভাউচার কর্মসূচি চালু করা হয়েছে এবং পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি উপজেলায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি বীমা চালু করা হয়েছে। প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রসবকালীন সেবা প্রবর্তন করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মিডওয়াইফ পদায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সারাদেশে আধুনিক কল সেন্টার ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন’ চালু করা হয়েছে। মোবাইল ফোনে ও অনলাইনে চিকিৎসাসেবা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আরও উন্নত করার প্রচেষ্টা নেওয়া হচ্ছে।
৬০টি হাসপাতালে টেলিমেডিসিন সেবা চালু করা হয়েছে। অটিস্টিক শিশুদের সুরক্ষায় ২২টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে শিশু বিকাশ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্যসেবা প্রদান নিশ্চিত করার জন্য ২০৩টি অ্যাডলেসেন্ট ফ্রেন্ডলি হেলথ কর্নার স্থাপন এবং ১৪টি জেলায় ১৮৯টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা চালু করা হয়েছে। ৩ হাজার ১৩১টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মধ্যে ২ হাজার ২০০টিতে প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা নিরাপদ প্রসবসেবা চালু করা হয়েছে।
১ কোটি ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের অঙ্গীকার আ.লীগের
আন্তর্জাতিক মানের ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি অ্যান্ড হসপিটাল নির্মাণ করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নতুন করে মোট ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৪টি শয্যা স্থাপন করা হয়েছে। ১০ বছরে হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা দ্বিগুণের চেয়ে বেশি হয়েছে। বর্তমানে শয্যা ও রোগীর অনুপাত ১:১১৬৯, যা ২০০৬ সালে ছিল ১:২৬৬৫। ১০ বছরে ১০ হাজার ৮৮৮ চিকিৎসক এবং ২১ হাজার ৬৮৮ নার্স নিয়োগ করা হয়েছে। আরও ১ হাজার চিকিৎসক এবং প্রায় ৮ হাজার নার্সের নিয়োগ কার্যক্রম চূড়ান্তকরণের পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে দেশীয় চাহিদার ৯৮ শতাংশ ঔষধ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। পৃথিবীর ১৪৫টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করা হচ্ছে।
নির্বাচনি ইশতেহার-২০১৮ অঙ্গীকার তুলে ধরে বলা হয়েছে, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স অ্যান্ড হসপিটাল; জাতীয় নাক-কান-গলা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল; বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিকাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস অ্যান্ড হসপিটাল, চট্টগ্রাম; শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে স্পেশালাইজড হাসপাতাল ও নার্সিং ইনস্টিটিউট; বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, গোপালগঞ্জ; ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরো-ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা); শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হসপিটাল; ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন স্থাপন করা হয়েছে। ১১১টি নতুন সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়েছে। নার্সিংয়ে ডিগ্রি কোর্স চালু করা হয়েছে। চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেটে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে।
লক্ষ্য ও পরিকল্পনার অঙ্গীকারে বলা হয়েছে, দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসেবা প্রাপ্তি উন্নত করা হবে। এক বছরের নিচে ও ৬৫ বছরের ওপরে সকলকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হবে। সকল বিভাগীয় শহরে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে। প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হার্ট, ক্যানসার ও কিডনি চিকিৎসা-ব্যবস্থা চালু করা হবে। প্রতিটি বিভাগীয় শহরে অন্তত ১০০ শয্যার স্বয়ংসম্পূর্ণ ক্যানসার ও কিডনি চিকিৎসা-ব্যবস্থা চালু করা হবে। সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এবং হাসপাতালগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তি প্রচলন করে স্বাস্থ্যসেবা-ব্যবস্থাকে আরও নির্ভুল ও জনবান্ধব করা হবে। অনলাইনে দেশ-বিদেশ থেকে বিশেষায়িত চিকিৎসকের সেবা পাওয়া যাবে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর ভবনসহ সব সুবিধা পর্যায়ক্রমে আধুনিকীকরণ করা হবে। আয়ুর্বেদী, ইউনানী, দেশজ ও হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা ও শিক্ষা-ব্যবস্থার মানোন্নয়ন এবং আধুনিকায়ন অব্যাহত রাখা হবে। গ্রামাঞ্চলের চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসকের সংখ্যা বৃদ্ধি, সেবার মান বৃদ্ধি এবং উপস্থিতি নিশ্চিত করা হবে।
সারাবাংলা/এনআর/এসএমএন