Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আন্তর্জাতিক নদীর পানির হিস্যা আদায়ে ইশতেহারে দলগুলোর গুরুত্ব


১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৭:৫১

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: আন্তর্জাতিক নদী আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশে বহমান আন্তর্জাতিক নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে অঙ্গীকার করেছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রকাশ করা নির্বাচনি ইশতেহার থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এই ৩ দলের নির্বাচনি ইশতেহার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে অঙ্গীকারের পাশাপাশি ৩টি দলই প্রতিবেশি দেশ ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার কথা বলেছে।

পররাষ্ট্র নীতি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, অন্য দলগুলোর ইশতেহারে তেমন গুরুত্ব চোখে পড়েনি। আওয়ামী লীগ ইউরোপ, আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, ভারতসহ আঞ্চলিক জোট আসিয়ানসহ অন্য বৈশ্বিক জোটগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের যে অঙ্গীকার করেছে তা অন্য দলগুলোর বয়ানে অনুপস্থিত।

আবারও ক্ষমতায় গেলে আন্তর্জাতিক যে কোনো বিরোধ শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা রাখবে বলে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে বলা হয়েছে।

ভারত প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে বলা হয়েছে, ভারতের সঙ্গে তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন এবং দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য ও নিরাপত্তা সহযোগিতাসহ সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। ভারত-ভুটান-নেপালের সঙ্গে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তিতে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ও অভিন্ন নদীর অববাহিকাভিত্তিক যৌথ ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।

ভারত প্রসঙ্গে বিএনপির ইশতেহারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ত্রিপুরা, মেঘালয়, নেপাল, ভুটান ও য়ুন্নানের জনগণের সংযোগ সহজতর করা হবে। আন্তর্জাতিক নদী আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে বহমান আন্তর্জাতিক নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে আঞ্চলিক ও পারস্পারিক সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে আলাপ-আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে, ভারত প্রসঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বলেছে, সমতার ভিত্তিতে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সব ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করা হবে। তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানিবণ্টনসহ অন্য সমস্যা দ্বিপক্ষিয়ভাবে আলোচনা করে দ্রুত সমাধান করা হবে।

চীন ও রাশিয়া প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ বলেছে, রাশিয়া, চীন এবং আশিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও উন্নয়ন সহযোগিতার সম্পর্ক আরও জোরদার করা হবে।

তবে বিএনপর ইশতেহারে চীন ও রাশিয়া সম্পর্কে কিছু উল্লেখ নেই।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বলেছে, চীনের ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড-এর যে সব প্রকল্প দেশের জন্য লাভজনক বিবেচিত হবে সেগুলোতে বাংলাদেশ যুক্ত হবে।

মুসলিম দেশগুলো সম্পর্কে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোসহ বিশ্বের মুসলিম দেশসমূহের সঙ্গে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্ক এবং উন্নয়ন ও সহযোগিতা আরও জোরদার করা হবে। এ দেশগুলোর সঙ্গে নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ দমন প্রভৃতি বিষয়ে বাংলাদেশের জোরালো ভূমিকা থাকবে। মুসলিম উম্মাহর সংহতি এবং ইসলামি সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) কাঠামোয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও সহযোগিতা আরও জোরদার করা হবে।

বিএনপি বলেছে, মুসলিম দেশসমূহ ও প্রতিবেশি দেশসমূহের সঙ্গে বিশেষ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক জোরদার করা হবে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বলেছে, মুসলিম দেশগুলোসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের দেশের সঙ্গে আলাদা আলাদা নীতির ভিত্তিতে সম্পর্ক উন্নয়ন করা হবে।

আওয়ামী লীগের ইশতেহারে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ভূখণ্ডে জঙ্গিবাদ, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী কোনো শক্তিকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় দক্ষিণ এশীয় টাস্কফোর্স গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও কানাডাসহ উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগিতার সম্পর্ক আরও জোরদার ও ব্যাপক বিস্তৃত করা হবে। আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি করা হবে। অস্ট্রেলিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগর এলাকার সঙ্গে অধিকতর যোগাযোগ ও নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।

বিজ্ঞাপন

বিএনপির ইশতেহারে বলা হয়েছে, বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া হবে। বিএনপি অন্য কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না এবং অন্য কোনো রাষ্ট্রের জন্য নিরাপত্তা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো কর্মকাণ্ডকে কোনো স্পেস দেবে না। একইভাবে অন্য কোনো রাষ্ট্রও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করলে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্থা যেমন- সার্ক, বিমসটেক, বিসিআইএম, বিবিআইএন প্রভৃতি সংস্থাগুলোকে সুসংহত করা এবং কার্যকরভাবে গড়ে তোলার জন্য সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। বিআরআই, ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেসিক ইনসিয়েটিভসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বলেছে, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও কারও সঙ্গে বৈরিতা নয় নীতিতে পররাষ্ট্র নীতি চলবে। সার্কসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক এবং উপআঞ্চলিক জোটগুলো আরও শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখা হবে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট উভয়েই বলেছে, বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজ বাসভূমিতে নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের জন্য শক্তিশালী দ্বি-পাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক উদ্যোগ নেওয়া হবে।

সারাবাংলা/জেআইএল/এমআই

ইশতেহার নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর