প্রবীণ-নবীনে লড়াই হবে রংপুরের ৬টি আসনে
১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৫:৪৮
।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
রংপুর: ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই প্রার্থী, দলীয় সমর্থক ও নেতাকর্মীরা শহর-গ্রাম, পাড়া-মহল্লার অলি-গলিতে প্রচারের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। বিভিন্ন গানের সুরে মাইকেও চলছে প্রচার। রংপুরে এবার নির্বাচনের মাঠে লড়াই হবে প্রবীণ-নবীনের।
রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ছয়টি আসনে প্রবীণ-নবীনের লড়াই হবে। এর মধ্যে রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া ও আংশিক সিটি) আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ, স্বতন্ত্র প্রার্থী আসাদুজ্জামান বাবলু, বিএনপির শাহ্ মো. রহমতুল্লাহ, স্বতন্ত্র প্রার্থী সিএম সাদিক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোক্তার হোসেন ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ইশা মোহাম্মদ সবুজসহ ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদের মধ্যে মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ ২০০১ সালে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়ে রংপুর-১ আসন থেকে প্রথম বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ জাতীয় পার্টির সদ্য মহাসচিব নির্বাচিত হয়েছেন। আসনটিতে অপর প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক ইউপি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবলুসহ আরও ৪ জন রয়েছেন। যাদের অধিকাংশই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নতুন মুখ।
রংপুর-২ (বদরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান এমপি আবুল কালাম আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক, বিএনপির মোহাম্মদ আলী সরকার, জাতীয় পার্টির আসাদুজ্জামান চৌধুরী সাবলু, স্বতন্ত্র প্রার্থী আনিছুল ইসলাম মণ্ডলসহ ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ আসনে ডিউক চৌধুরী, মোহাম্মদ আলী সরকার ও আনিছুল ইসলাম মণ্ডল এর আগেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তবে বাকি প্রার্থীরা এবারই প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
রংপুর-৩ (সদর ও সিটি) আসনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বর্তমান এমপি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, বিএনপির রিটা রহমান, জাসদের সাখাওয়াত রাঙ্গা, প্রগতিশীল ডেমোক্রেটিক পার্টির সাব্বির আহম্মেদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরুজ্জামান পিয়াল, বাসদের আনোয়ার হোসেন বাবলু, জাকের পার্টির আলমগীর হোসেন আলম, খেলাফত মজলিসের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ছামসুল হকসহ ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই আসনটি ১৯৯১ সাল থেকে জাতীয় পার্টির দখলে থাকলেও এবার প্রবীণ-নবীনের মধ্যে হবে লড়াই।
রংপুর-৪ (পীরগাছা ও কাউনিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের টিপু মুনশি, বিএনপির এমদাদুল হক ভরসা, জাতীয় পার্টির মোস্তফা সেলিম বেঙ্গলসহ ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। অন্যান্য প্রার্থীরা নবীন হলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রবীণ।
রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনে বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের এইচ এন আশিকুর রহমান, বিএনপির অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, জাতীয় পার্টির এসএম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীরসহ ছয়জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২০০১ সালে আশিকুর রহমান নির্বাচিত হন। এবার এই আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী জামায়াত নেতা গোলাম রব্বানী। গোলাম রাব্বানী এরইমধ্যে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবারই প্রথম অংশ নিয়েছেন।
রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ বিভিন্ন দলের আরও চারজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবার অধিকাংশ প্রার্থী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মত অংশগ্রহণ করছেন। ২০১৪ সালের উপ নির্বাচনে এ আসন থেকে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
রংপুর মুন্সীপাড়া এলাকার বাসিন্দা আবিদ মোহাম্মদ সালেহ বলেন, ‘এবার নির্বাচনে নতুন প্রার্থীদের সঙ্গে প্রবীণদের লড়াই হবে। নির্বাচনে অভিজ্ঞ বা পুরনোদের সঙ্গে নতুনদের লড়াইটা হবে খুবই কঠিন। নির্বাচনে পূর্ব পরিচিতির কারণে প্রবীণ প্রার্থীরা একটু এগিয়ে থাকেন। তবে ভোটাররা যদি মনে করেন যে, তারা নতুন বা তরুণ নেতৃত্বকে প্রাধান্য দেবেন তাহলে ফলাফল পাল্টে যাবে। আর এবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমনটা হওয়ার সম্ভবনাই বেশি। তাই প্রবীণ-নবীনের মধ্যে হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।’
রংপুর-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী রিটা রহমান বলেন, ‘নির্বাচনি প্রচার শুরু করেছি। রংপুর বিএনপি আমার পাশে আছে। ভোটারদের মাঝেও ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে এ আসনে আমিই নির্বাচিত হব। নির্বাচনে জয়ের জন্য প্রবীণ-নবীনের কোনো বিষয় নয়। নির্বাচনে কে জয়ী হবে তা নির্ভর করে জনগণের রায় ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর।’
রংপুর-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এইচএন আশিকুর রহমান এমপি বলেন, ‘জনগণের জন্য কাজ করেছি বলেই তাদের ভোটে এই আসনে চারবার এমপি নির্বাচিত হয়েছি। এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর এ আসনের সর্বোচ্চ উন্নয়নের চেষ্টা করেছি। আশা করি এবারও জনগণ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আমাকেই নির্বাচিত করবে।’
সারাবাংলা/একে/পিএ