আদর্শে আপোস নয়, জনপ্রতিনিধি হিসেবে ‘সকলের’ হতে চান নওফেল
২০ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৮:০৯
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: দলের সাংগঠনিক হিসেবে আওয়ামী লীগের আদর্শ ও সভানেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আনুগত্যের প্রশ্নে বিন্দুমাত্র আপোস করবেন না মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তবে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলে বাবা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মতো ‘সকলের নেতা’ হয়ে এগিয়ে যেতে চান বলে জানিয়েছেন নওফেল।
বৃহস্পতিবার (২০ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
প্রয়াত সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে নওফেল বলেন, আমার বাবা আমাকে আজীবন, একেবারে ছোটবেলা থেকেই আওয়ামী লীগের আদর্শের দীক্ষা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ আমি ধারণ করি। সেখান থেকে একচুলও আমি নড়বো না। তবে যদি নির্বাচিত হই, একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে সর্বস্তরের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করাটা আমার দায়িত্ব এবং আমি সেটা পালনের অঙ্গীকার করছি।
নওফেল আরও বলেন, আমার বাবা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী যেভাবে চট্টগ্রামের অধিকার আদায়ের জন্য দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতেন, আমিও সেভাবেই কাজ করতে চাই। এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে, শেখ হাসিনার একজন কর্মী হিসেবে, বঙ্গবন্ধুর একজন একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। রাজনৈতিক প্রশ্নে কখনোই আপোস করেননি। কিন্তু নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে, সমাজসেবার ক্ষেত্রে সকলের নেতা ছিলেন। আমি চেষ্টা করব সকলকে নিয়ে এগিয়ে যেতে।
তিনি বলেন, অনেকেই বলেন আমি সবসময় দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কথা বলি। সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে অবশ্যই আমি দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই কথা বলব। আমি আমার রাজনৈতিক আদর্শ এবং বিশ্বাসের সাথে কোনো ধরনের কম্প্রোমাইজ করতে পারব না, করব না।
নির্বাচিত হলে চট্টগ্রামে ‘রাজনৈতিক ক্ষমতা’ দেখানোর কোন চেষ্টা করবেন না বলে জানিয়েছেন নওফেল।
তিনি আরও বলেন, আমি জনগণের কাছে একটি বার্তা দিতে চাই, সেটি হচ্ছে আমি এখানে কোনো ধরনের নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা কিংবা নিজের রাজনৈতিক ক্ষমতা দেখানোর কোনো ধরনের প্রচেষ্টা আমি কখনোই নেব না। আমার দায়িত্ব হবে, যারা এখানে আমাদের দলের অভিজ্ঞ নেতৃবৃন্দ আছেন, তাদের সবার সাথে আলোচনা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া।
‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের ইশতেহার বিলি করে মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, দলের ইশতেহারের বাইরে নিজের ইশতেহার দেওয়া সমীচীন নয়। তবে আমি নির্বাচিত হলে, একজন আইন প্রণেতা হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেসব কাজ করব, সেগুলো আমি তুলে ধরছি।
সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে সাধারণ নাগরিকদের প্রাপ্য সুবিধা নিশ্চিত করতে সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন ও জবাবদিহিতার আওতায় আনার চেষ্টা করবেন জানিয়েছেন নওফেল।
তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ যেন নাগরিক সুবিধাটা নিশ্চিতভাবে পেতে পারে, সেজন্য আমি কাজ করব। সাধারণ মানুষের নাগরিক সংকটগুলোর বিষয়ে আমাদের নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারীরা যেমন- জেলা প্রশাসক, মেয়র, সিডিএ চেয়ারম্যানসহ যারা আছেন, তারা যেন নিয়মিত অবগত হন এবং জোর দিয়ে সংকটের সমাধানটা করতে পারেন, সেটা আমি নিশ্চিত করব। আমি নির্বাচিত হলে সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন ও তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে, প্রয়োজনীয় আইনি কাঠামোয় আনার চেষ্টা করব।
সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জনগণকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা হবে বলেও জানান নওফেল। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামকে ঘিরে প্রধানমন্ত্রী অনেক পরিকল্পনা নিয়েছেন। সেই মহাপরিকল্পনাগুলোর কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। সেগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অবশ্যই জনগণের সংশ্লিষ্টতার প্রয়োজন আছে। যদি নির্বাচিত হয়, তাহলে এসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জনগণকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করব। জনগণ সম্পৃক্ত থাকলে সেই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন অনেক সহজ হয় এবং জনপ্রিয় হয়। মহাপরিকল্পনার কাজগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সহযোগিতার অঙ্গীকার করছি।
চট্টগ্রামে নারীর ক্ষমতায়ন, রাজনৈতিক-সামাজিক ক্ষেত্রে তাদের সমান অংশগ্রহণ থাকার বিষয়ে কাজ করার কথা বলেছেন নওফেল। এছাড়া চট্টগ্রামে সকল ধর্মের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কাজ করে যাবার অঙ্গীকারও করেছেন তিনি।
নওফেল বলেন, আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠনের জন্য চট্টগ্রামকে অগ্রণী ভূমিকায় রাখব। চট্টগ্রাম-৯ আসনে অনেক সনাতন ধর্মাবলম্বী আছেন। চট্টগ্রামের অন্যতম বড় বৌদ্ধবিহার এখানে আছে। বেশ কয়েকটি খ্রিস্টান উপাসনালয় আছে। ধর্মীয় বৈচিত্র্যের এই যে সৌন্দর্য্য, এটাকে ধরে রেখে আমরা অসাম্প্রদায়িক, নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল চট্টগ্রাম গড়বো।
এছাড়া বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলতে চট্টগ্রামকে নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গায় নিয়ে যাবার কথাও বলেছেন নওফেল।
প্রতিদ্বন্দ্বী কারাবন্দি শাহাদাতের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি
চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনে বিএনপির প্রার্থী ডা.শাহাদাত হোসেন কারাগারে থাকায় জনগণের সহানুভূতি পাচ্ছেন কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে নওফেল বলেন, উনার বিষয়ে পজিটিভ-নেগেটিভ কোন মন্তব্য করব না। কারণ উনি তো সাজাপ্রাপ্ত নন। উনার মামলা হয়ত তদন্তাধীন অথবা বিচারাধীন আছে। তাই এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করা যাবে না। উনি যদি উনার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মতো সাজাপ্রাপ্ত হতেন, তাহলে মন্তব্য করা যেত। তবে আমি উনার পরিবারের প্রতি সহানুভূতিশীল।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম-৯ আসনের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, সহ-সভাপতি সুনীল সরকার, নঈম উদ্দিন, জহিরুল আলম দোভাষ, আইন বিষয়ক সম্পাদক ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিক আদনান ও হাসান মাহমুদ হাসনী, উপ-দপ্তর সম্পাদক জহরলাল হাজারী, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা.ফয়সাল ইকবাল, কেন্দ্রীয় শ্রমিক লীগে নেতা শফর আলী এবং ১৪ দলের জসিম উদ্দিন বাবুল, মিটুল দাশগুপ্ত ও নজরুল ইসলাম আশরাফী উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/আরডি/এনএইচ