ঢাকা-৪: প্রচারণায় লাঙ্গল-ধানের শীষ সমানে সমান
২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ ২০:১১
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: প্রচার-প্রচারণার দিক থেকে ঢাকা-৪ নির্বাচনি আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট মনোনীত লাঙ্গলের প্রার্থী আবু হোসেন বাবলা এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী সালাহ উদ্দিন আহমেদ সমানে সমান। আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর পর থেকেই ঢাকার শ্যামপুর, পোস্তগোলা, কদমতলী, জুরাইন এলাকার প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী সমানতালে প্রচারণার চালাচ্ছেন। দু’টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বড় ধরনের কোনো অঘটনের খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
প্রচারণার ১৫তম দিন সোমবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় শ্যামপুরের বাসা থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী সালাহ উদ্দিন আহমেদ প্রচারণা শুরু করেন। ৫০/৬০ জন কর্মী সমর্থক নিয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৫৯ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন তিনি।
প্রচারণা শুরুর আগের সংবাদ মাধ্যমের সামনে দেওয়া বক্তব্যে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাবলা (আবু হোসেন বাবলা) এলাকায় কোনো কাজ করেনি। বাবলা শুধু সন্ত্রাস করেছে। কাজেই জনগণ তাকে ভোট দেবে না। এলকার সব উন্নয়ন আমার আমলে হয়েছে। আমরা নিশ্চিত যে এলাকার জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেবে আমাকে।’
নির্বাচনের মাঠ সমতল নয় অভিযোগ করে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন সরকারের পক্ষে কাজ করছে। তারপরও সাধারণ মানুষকে নিয়ে আমরা ভোটের মাঠে আছি। ৩০ তারিখে মানুষ ভোট কেন্দ্রে যাবে এবং ধানের শীষে ভোট দিয়ে বিএনপিকে জয়যুক্ত করবে।’
পথচারীদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ, ভোট ও দোয়া প্রার্থনা করতে করতে সালাহ উদ্দিন আহমেদের মিছিল পাগলা পানির পাম্পের কাছে পৌঁছালে সেখানে লাঙ্গলের মিছিল এসে হাজির হয়। কিন্তু কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা সেখানে ঘটেনি।
তবে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১৫ দিনের প্রচারণায় দুই দিন ধানের শীষের মিছিলে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে একদিন ধোলাইপাড় মীর হাজিরবাগ, আরেকদিন ঘুণ্টিঘর এলাকায় বাধার মুখে পড়ে ধানের শীষের মিছিল। আর রোবাবার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে আবু হোসেন বাবলার একটি নির্বাচনি ক্যাম্পে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
এদিকে, সোমবার সালাহ উদ্দিন আহমেদ যখন শ্যামপুর, পাগলা, পূর্বকদমতলী এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছিলেন, ঠিক সেই সময় পোস্তগোলা এলাকায় লাঙ্গলের বিশাল এক মিছিল বের হয়। মিছিলে কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থক অংশ নেন।
ধানের শীষ ও লাঙ্গলের মিছিলে অংশগ্রহণকারীর এই বিশাল পার্থক্য সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানীয়রা বলেন, মূলত ভয়ে ধানের শীষের মিছিলে কেউ আসতে চায় না। মিছিল থেকে লোকজন গ্রেফতার হতে পারে— এই আশঙ্কায় মিছিল এড়িয়ে চলছেন ধানের শীষের কর্মী-সমর্থকরা।
তবে গত ১৫ দিনে সালাহ উদ্দিন আহমদের মিছিল থেকে কাউকে গ্রেফতার করা হয়েছে— এমন ঘটনা কারও চোখে পড়েনি বলে জানান স্থানীয়রা। অবশ্য বিএনপিকর্মী জাকির হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এমপি সাব (এমপি সালাহ উদ্দিন আহমেদ) মিছিলে থাকলে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করে না। কিন্তু ছবি তুলে নিয়ে যায়। পরে রাতে এসে গ্রেফতার করে।’
পোস্টার
ঢাকার অন্য আসনগুলোর মতো ঢাকা-৪ আসনেও ধানের শীষের কোনো পোস্টার চোখে পড়েনি। এমনকি সালাহ উদ্দিন আহমেদের বাড়ির সামনেও নেই ধানের শীষের পোস্টার। স্থানীয়রা বলছেন, গণসংযোগ, প্রচার-প্রচারণায় আবু হোসেন বাবলাকে টেক্কা দিলেও পোস্টার লাগানোর দিক থেকে পিছিয়ে আছেন সালাহ উদ্দিন আহমেদ।
শ্যামপুর লাল মসজিদ এলাকার মুদি দোকানি আনোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘পোস্টার লাগাতে এসে ধানের শীষের কর্মীরা বাধার মুখে পড়েছেন— এমন ঘটনা আমাদের চোখে পড়েনি। আবার রাতে লাগিয়ে যাওয়ার পর দিনে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে— এমন দৃশ্যও চোখে পড়েনি। মূলত, তারা পোস্টার লাগাতেই আসেনি। মাঝে মধ্যে এমপি সাব (সালাহ উদ্দিন আহমেদ) লোকজন নিয়ে প্রচারণা চালান। এ ছাড়া আর কোনো তৎপরতা চোখে পড়ে না।’
অবশ্য ট্রাক ড্রাইভার দেলোয়ার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘যেখানে এমপির সঙ্গেই কেউ বের হতে সাহস পায় না, সেখানে পোস্টার লাগাতে যাবে কে? পোস্টার-মোস্টার ছাড়াই ধানের শীষের নির্বাচনি প্রচারণা চলছে। মানুষ কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারলে বোঝা যাবে, কার ভোট বেশি।’
সারাবাংলা/এজেড/টিআর
আবু হোসেন বাবলা জাতীয় পার্টি ধানের শীষ বিএনপি লাঙ্গল সালাহ উদ্দিন আহমেদ