আ.লীগে দুশ্চিন্তা নেই, ভোটারদের দিকে তাকিয়ে বিএনপি
২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ১২:৫৩
।। সুমন মুহাম্মদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
রাজশাহী : ফুরিয়ে আসছে দিন। ভোটারও সেই মাহেন্দ্রক্ষনের অপেক্ষায়। নিজ পছন্দের প্রার্থীর প্রতীকে সিল মারার জন্য ঘড়ির কাঁটা ধরে ৯৬ ঘণ্টা। শেষ সময়ে প্রচারও তুঙ্গে উঠেছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সেনা সদস্যরাও নেমেছেন। ফলে নির্বাচনি প্রচারণায় এসেছে এক নতুন মাত্রা।
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দূর্গাপুর) ও রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) ছাড়া বাকি চারটি আসনে নৌকা আর ধানের শীষের চিত্র অনেকটাই এই রকম। তবে নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে নৌকার প্রচারণাতেও যেন অন্যরকম গতি মিলছে।
এবারের নির্বাচনে রাজশাহীর ৬টি আসনে কারা থাকছেন তাই এখন সাধারণ ভোটারদের আলোচনার মূল বিষয়। গেলো দুইবারের ধারাবাহিকতাই বজায় থাকছে নাকি পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগবে।
এবার ভোটারররা উন্নয়নের হিসাব নিকাশের সঙ্গে পর্যালোচনা করছেন বিভিন্ন বিষয়। জয়ের বিষয়ে আশাবাদী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই শিবির।
রাজশাহীর ছয়টি আসনে যারা এমপি প্রার্থী রয়েছেন দুই দলের অধিকাংশরই দীর্ঘ সময় রাজনৈতিক জীবনের ক্যারিয়ার রয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের যেমন উন্নয়ন ও বিএনপির প্রার্থীদেরও রয়েছে পুরাতন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। তাই দুই দলের প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে বড় ধরনের প্রতিযোগিতা। আওয়ামী লীগ চাচ্ছে আসন ধরে রাখতে আর বিএনপি চাচ্ছে আসন পুনরুদ্ধার করতে।
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে এবার রয়েছে আওয়ামী লীগ-বিএনপির দুই হেভি ওয়েট এমপি প্রার্থী। এরা হলেন বর্তমান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী ও বিএনপির ব্যারিষ্টার আমিনুল হক। এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ এই আসনে এমপির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি এরআগে শিল্প প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী ব্যারিস্টার আমিনুল হকও এই আসনে তিনবার এমপি ছিলেন। এর মধ্যে দুবার মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীও ছিলেন। এই আসনে এবার নির্বাচনে চারজন প্রার্থী হলেও ওমর ফারুক চৌধুরী ও ব্যারিস্টার আমিনুল হকের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
তবে টেনশন মুক্ত রয়েছেন নৌকা প্রাতীকের ওমর ফারুক চৌধুরী। কারণ এলাকায় বিএনপির প্রার্থীর দীর্ঘদিনের অনুপস্থিতি তাঁকে অনেকটাই পিছিয়ে দিয়েছে।
এ বিষয়ে ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, জঙ্গিবাদের মদদদাতা ব্যারিস্টার আমিনুল হককে ভোটাররা প্রত্যাখান করেছেন। দীর্ঘদিন থেকে তিনি সাধারণ মানুষের পাশে নেই। তাই এলাকার উন্নয়ন এগিয়ে নিতে এবারও নৌকায় ভোট দেবে।
ব্যরিস্টার আমিনুল হক বলেন, গোদাগাড়ী-তানোর এলাকার যা কিছু উন্নয়ন হয়েছে তার সময়ের করা। এই সকল উন্নয়ন দেখে ভোটাররা এবার ধানের শীষে ভোট দিয়ে তাকে আবার নির্বাচিত করবেন বলেই তিনি বিশ্বাস করেন।
রাজশাহী-২ (সদর) আসনে এবার হাড্ডাহাড্ডি লাড়াই হবে এমনটাই মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা। গত ১০বছর ধরে এই আসনটি নৌকা প্রতীক নিয়ে ধরে রেখেছেন ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান এমপি ফজলে হোসেন বাদশা। একই সাথে এই আসনে বিএনপি থেকে রয়েছেন সাবেক এমপি ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু। এ আসনের হেভিওয়েট প্রার্থী দুইজনকেই এলাকার মানুষ দীর্ঘ সময় পেয়েছেন। ফলে বিচার করছেন আসলে এলাকার উন্নয়নের জন্য কাকে দরকার। সেই সাথে নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় আসলে সাধারন মানুষ কাকে কতটা কাছে পেয়েছেন।
ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘রাজশাহীতে যারা জঙ্গিবাদে মদদ দিয়েছে, যারা আগুন সন্ত্রাস চালিয়েছে তাদের ভোটাররা প্রত্যাখান করেছে। মানুষ সন্ত্রাস চান না। এরাকার উন্নয়ন চান। গেলো দশ বছরে রাজশাহীর ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।’ তাই মানুষ নৌকার সঙ্গে রয়েছে বলে দাবি করছেন তিনি।
মিজানুর রহমান মিনু বলেন, রাজশাহীর সব উন্নয়ন বিএনপি সরকারের আমলে করা। তাই এবার ভোটাররা ধানের শীষে ভোট দিয়ে তাঁকেই এমপি করতে চান। তার দাবি, ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যেতে পারলে ধানের শীষের বিজয় হবে।
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনটিতে বিএনপির নতুন মুখ শফিকুল হক মিলন আর আওয়ামী লীগের এবারের এমপি আয়েন উদ্দিন। দুজনেই এলাকায় ব্যাপক প্রচার চালালেও পিছিয়ে আছেন মিলন। সেক্ষেত্রে এগিয়ে গেছেন আয়েন। তবে নানাভাবে প্রচারনায় আসছে যে বাইরের কোন ব্যক্তিকে এমপি হিসেবে চান না এই আসনের মানুষ। শফিকুল হক মিলনের মূল আবাসন রাজশাহী মহানগরীতে। আর আয়েন উদ্দিন স্থানীয়। ফলে সাধারণ মানুষের এই প্রচারনায় ধানের শীষের তুলনায় নৌকা এগিয়ে আছে।
আয়েন উদ্দিন এমপি বলেন, বহিরাগত কাউকে পবা-মোহনপুরের মানুষ ভোট দেবে না। স্থানীয় প্রার্থী হিসেবে ভোটাররা তার পক্ষে রয়েছে। তাছাড়াও পবা-মোহনপুরের পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলোতে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। ফলে নৌকায় ভোট দিয়ে আবারো তাকেই নির্বাচিত করবে জনগন।
শফিকুল হক মিলন বলেন, ধানের শীষের জোয়ার দেখে নৌকার প্রার্থী ও তার লোকজন বেপরোয়া হয়ে গেছে। বিএনপি সরকারের আমলে যে উন্নয়ন হয়েছে গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার এই এলাকার উন্নয়ন করতে পারেনি। আর কখনই বহিরাগত বলে এলাকার মানুষ বিএনপির প্রার্থীকে দেখেনি। কারন বিএনপির যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা বিজয়ী হয়ে এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছেন। ফলে এইধরনের কথা বলে ধানের শীষের জয় ঠোকানো যাবে না বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে রয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক এবং বিএনপি থেকে সাবেক এমপি আবু হেনা। এই এলাকার মানুষ জঙ্গি উত্থানের বিষয়টিকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারেন না। ঠিক তেমনি সর্বহারা বা চরমপন্থিদেরও মেনে নেন না। এর পরেও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় আবু হেনা অনেকটা পিছিয়ে আছে। এছাড়াও অগোছালো মাঠ ও বিচ্ছিন্ন নেতা কর্মীদের নিয়ে প্রচার চালাতে হচ্ছে আবু হেনাকে। এতে তিনি গণসংযোগে বের হলে সাধারণ ভোটারদের তোপের মুখে পড়ছেন। সেই দিক থেকে অনেকটাই ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এমপি এনামুল হক।
ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাগমারা এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এলাকায় জঙ্গি সংগঠনের তৎপরাতাও নেই। মানুষ এখন শান্তিতেই রয়েছেন। তিনি মনে করেন এলাকার মানুষ জঙ্গি মদদদাতাদের আর নির্বাচিত করতে চান না।
আবু হেনা বলেন, এলাকায় তাঁর প্রচারনা ঠিকমতন করতে দেয়া হচ্ছে না। বিভিন্নভাবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বাঁধা দিচ্ছে। এরপরেও তিনি বিশ্বাস করেন এলাকার মানুষ তাঁকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দূর্গাপুর) আসনে মহাজোটের প্রার্থী নতুন মুখ ডা. মনসুর রহমান। আর গত ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্ট তার প্রতীক বাতিল এবং ২০ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাতিল হয় বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী নাদিম মোস্তফার। আর প্রার্থীতা ফিরে পান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মন্ডল। তিনি ধানের শীষ প্রতীক পেয়েছেন। তবে এই আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয় অনেকটাই নিশ্চিত বলে মনে করছেন স্থানীয় ভোটররা।
রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনে ভোটের প্রচারনার মাঝপথে এসে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও চারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান কারাবন্দি আবু সাঈদ চাঁদের প্রার্থীতা বাতিল হয়ে যায়। গত ২০ ডিসেম্বর হাইকোর্ট তার প্রার্থীতা বাতিল করে। ফলে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী শূন্য এ আসনটিতে। এখন ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন মহাজোটের প্রার্থী দুই বারের এমপি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তবে এই আসনেও জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী ইকবাল হোসেন রয়েছেন। বিএনপি-জামায়াত সমর্থকরা লাঙ্গল মার্কায় ভোট দিলে কিছুটা বেকাদায় পড়তে হতে পারে দুবারের এমপি শাহরিয়ার আলমেক। এর পরেও নৌকা প্রার্থীর তেমন চিন্তা নেই। টেনশান ছাড়াই জয় পাবে নৌকা এমনটাই বলছেন ভোটাররা।
সারাবাংলা/এসএমএন