পুলিশকে ‘জানোয়ার’ বললেন ড. কামাল, ক্ষুব্ধ সিইসি
২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৭:৪১
।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: কেবল লাঠিয়াল বাহিনী নয়, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বৈঠকে পুলিশকে ‘জানোয়ার’ বলে গালি দিয়েছিলেন ড. কামাল হোসেন। এ কারণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। আর এরই সূত্র ধরে ওই বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।
মঙ্গলবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুরে নির্বাচন কমিশন ভবনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে ইসি’র এই বৈঠকে এই বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে বলে জানা গেছে ইসি সূত্রে।
সূত্র জানায়, ওই বৈঠকে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘সারাদেশে পুলিশ ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের সঙ্গে জানোয়ার ও লাঠিয়াল বাহিনীর মতো আচরণ করছে। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের গুণ্ডা বাহিনী আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করছে। আমাদের নেতাকর্মীদের কোথাও দাঁড়াতে দিচ্ছে না।’
আরও পড়ুন: ‘পুলিশ লাঠিয়াল’ মন্তব্যে ড. কামাল-সিইসি মতবিরোধ, বৈঠক ত্যাগ
জবাবে সিইসি বলেন, ‘সরকারের একটি বাহিনীকে নিয়ে আপনি এভাবে বলতে পারেন না। নিজেকে আপনি কী মনে করেন?’ তিনি আরও বলেন, ‘কোথায় আপনাদের প্রার্থীদের দাঁড়াতে দিচ্ছে না? কারা দাঁড়াতে দিচ্ছে না? আমাকে দেখান, নাম বলেন।’
এরপর ড. কামাল হোসেন ও সিইসির মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এর এক পর্যায়ে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান। পরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিফ্রিং করেন।
সূত্র জানায়, বৈঠক শুরুর পর প্রায় দেড় এক ঘণ্টা তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্বাভাবিক আলোচনা হয়। এ সময় বিএনপির মহাসচিব ছাড়াও ঐক্যফ্রন্ট নেতারা বক্তব্য দেন। কিন্তু গোল বাঁধে ড. কামাল হোসেনের বক্তব্যের সময়। তিনি উত্তেজিত হয়ে পুলিশের নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন সিইসির উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি বর্তমানে প্রধান বিচারপতির চেয়েও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারেন। আপনি ইচ্ছা করলে জানোয়ার-লাঠিয়াল বাহিনীর মতো আচরণকারী পুলিশ বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। আপনার এই লাঠিয়াল পুলিশ বাহিনী আমাদের মিটিং-মিছিল কিছুই করতে দিচ্ছে না। এমনকি বেলা দুইটার পর মাইক ব্যবহারের জন্য আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ তার জোটেরা নিয়ম-কানুন না মেনে পুলিশের সহায়তায় প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।’
আরও পড়ুন: ইসির সঙ্গে বৈঠকে বসেছে ঐক্যফ্রন্ট
ড. কামাল হোসেন আরও বলেন, ‘পুলিশ ও আওয়ামী লীগের গুণ্ডা বাহিনী আমাদের ওপর হামলা করছে। আমাদের প্রার্থীদের জীবনের দাম না থাকলেও কর্মীদের জীবনের দাম রয়েছে। তাদের তো নিরাপত্তা দিতে হবে।’
এ সময় সিইসিও উত্তেজিত হয়ে পড়েন। ড. কামাল হোসেনকে তিনি বলেন, ‘আপনি এমন কী হয়েছেন যে পুলিশকে লাঠিয়াল-জানোয়ার বলছেন? নিজেকে কী মনে করেন?’
তখন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মঈন খান সিইসিকে বলেন, ‘নির্বাচনের কোনো পরিবেশ যদি তৈরি করতে না পারেন, তাহলে বলে দেন, আমরা আজকেই প্রেস ক্লাবে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেবো।’
এ সময় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সবাই বক্তব্য দিতে শুরু করেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম তাদের সামলানোর চেষ্টা করেন। এরপর ডা. কামাল সিইসি’র নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বৈঠক থেকে বেরিয়ে যান।
পরে প্রেস বিফ্রিংয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সিইসির আচরণ ভদ্রোচিত ছিল না। এ জন্য আমরা বৈঠক বয়কট করেছি।’
তিনি বলেন, ‘সরকার ও নির্বাচন কমিশন যৌথভাবে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে এবং নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে। ইসি সরকারের পক্ষ হয়ে গেছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘সিইসি কোনো ভদ্রতাসূচক আচরণ করেননি। আমরা পুলিশের দ্বারা নির্যাতিত হওয়ার কথা জানালে তিনি কোনো সহানুভূতি না জানিয়ে হঠাৎ করেই পুলিশের পক্ষেই অবস্থান নেন। তাই আমরা বৈঠক থেকে চলে এসেছি।’
সিইসির নেতৃত্বে কমিশনের পক্ষ থেকে কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম ও নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলাব/জিএস/একে