Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা, নিজের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে ড. কামাল


২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৬:৩৭

।। আজমল হক হেলাল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: গৃহবন্দি হওয়া বা আটক হওয়ার আশঙ্কা না করলেও নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। পাশাপাশি নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে কি না, সে বিষয়েও গভীর আশঙ্কা জানিয়েছেন তিনি।

ড. কামাল বলেন, দলের নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়তই আমাকে সাবধানে চলাচল করতে বলেছেন। এতে করে স্বাভাবিকভাবেই আমার নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কে আছি।

তিনি আরও বলেন, যেভাবে সরকারি দলের প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো দলের প্রার্থীরা মাঠেই নামতে পারছেন না, তাতে নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।

বুধবার (২৬ ডিসেম্বর) মতিঝিলে নিজ চেম্বারে সারাবাংলার সঙ্গে এসব কথা বলেন ড. কামাল হোসেন।

এদিন, দুপুরে ড. কামালের মতিঝিলের চেম্বারে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা। এসময় তারা জানান, ড. কামাল হোসেনের নিরাপত্তার খোঁজখবর নিতেই তারা গিয়েছিলেন তার চেম্বারে। যদিও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, লন্ডন থেকে ড. কামালের প্রাণনাশের হুমকি রয়েছে বলেই তার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন পুলিশও।

বুধবার পুলিশের প্রতিনিধি দল যখন ড. কামাল হোসেনের নিরাপত্তার খোঁজখবর নিচ্ছে, তখন তার চেম্বারে বসে কথা হয় তার সঙ্গে। ড. কামাল হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, পুলিশ এসেছিল আমাকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। গ্রেফতার করতে আসেনি। কারণ আমি অপরাধী নই যে আমাকে গ্রেফতার করবে বা গৃহবন্দি করে রাখবে। তিনি বলেন, ‘তারপরও  প্রথমে পুলিশ দেখে একটু চমকে উঠেছি। পরে অবশ্য রিল্যাক্স মুডে বসেছিলাম।’

বিজ্ঞাপন

সাক্ষাৎকারে নির্বাচনি পরিবেশসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন। বর্তমানে যে পরিস্থিতি রয়েছে, তাকে কোনো ‘অশুভ শক্তি’র ক্ষমতায় আসার আশঙ্কা করছেন কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল বলেন, ‘সরকারি দল সারাদেশে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করে চলছে। এতে করে দেশে কোনো শুভ শক্তি ক্ষমতায় আসবে কি না, সে সর্ম্পকে আমি সরাসরি কিছু বলতে চাই না। সরকারের বা নির্বাচন কমিশিনের উচিত নির্বাচনি পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা। তা না রাখতে পারলে যদি কোনো ঘটনা ঘটে, তাহলে তার দায়িদায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।

তিনি বলেন, পরিস্থিত স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকারকে বারবার সর্তক করার পরও সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। যেভাবে প্রার্থীদের ওপর হামলা করা হচ্ছে, তাতে করে সরকারি দলের সমর্থক ছাড়া অন্য কোনো দলের প্রার্থীরা মাঠেই নামতে পারছে না। এতে করে আমি গভীরভাবে আশঙ্কা করছি, দেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না।

১৯৮৬, ১৯৮৮, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনগুলোতেও এমন ধরনের পরিস্থিতি ছিল বলেও জানান তিনি।

নিরাপত্তা বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন পুরো ঘটনার ব্যাখা দিয়ে বলেন, ‘পুলিশ কমিশনার সাহেব প্রথমে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছিলেন। তারা এসে আমাকে জানালেন, পুলিশ কমিশনার সাহেব আমার সঙ্গে দেখা করবেন। আমি তাকে আসতে বলি। কিছুক্ষণ পর পুলিশ কমিশনার ফোনে জানান, নির্বাচন কমিশনার তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন, তাকে সেখানে যেতে হচ্ছে। ফলে তিনি আসতে পারছিন না। পরে অন্য পুলিশ অফিসাররা আমার কাছে আসে।

ড. কামাল বলেন, পুলিশ অফিসাররা আমাকে বলেন, সরকার আপনাকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে চাচ্ছে। আমি তাদের কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলেছি, আমাকে নিরাপত্তা দেওয়ার আগে দেশের জনগণকে নিরাপত্তা দিন। তারা যেন ভোটকেন্দ্রে র্নিবিঘ্নে যেতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করুন। আমার এখানে তো সবসময় এসবিসহ (পুলিশের বিশেষ শাখা) অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা থাকেন। পরে পুলিশ সদস্যরা জানালেন, আপনার নিরাপত্তার প্রয়োজন রয়েছে। আপনার কর্মকাণ্ডের শিডিউল আমাদের জানাবেন, আমরা আপনাকে নিরাপত্তা দেওয়ার  ব্যবস্থা নেবো। পুলিশ এস্কর্ট দেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

নিরপেক্ষ নির্বাচন না হওয়ার আশঙ্কার মধ্যে ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন নিয়ে কী ভাবছে— এমন প্রশ্নের জবাবে ঐক্যফ্রন্টের এই নেতা বলেন, গভীরভাবে আশঙ্কা করছি, নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে না। নির্বাচনে বাধা-বিঘ্ন তৈরি করা হবে। তারপরও আমরা মাঠ ছাড়ব না। সব ধরনের বাধা রুখে দিয়ে সামনে এগিয়ে যাব। দেশের প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ ও ভোট গণনা নিশ্চিত করা হবে। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।  সুষ্ঠু ও অবাধভাবে সবকিছু করতে বাধ্য করা হবে।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

ড. কামাল ড. কামাল হোসেন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর