রুল হলেও নির্বাচনে বাধা নেই ২৫ জামায়াত নেতার
২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ১২:৫৮
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: জামায়াতে ইসলামীর ২৫ প্রার্থীর নির্বাচনে অংশ নিতে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ হবে না জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। কিন্তু আদালত প্রার্থিতার বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা বা স্থগিতাদেশ না দেওয়ায় তাদের নির্বাচনে অংশ নিতে কোন বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
বৃহস্পতিবার (২৭ ডিসেম্বর ) বিচারপতি জে বিএম হাসান ও বিচারপতি খায়রুল আলমের অবকাশকালীন হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন।
এই আদেশের পর নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ ইয়াসিন খান বলেন, ‘আদালত তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রুল দিয়েছেন । তবে তাদের প্রার্থিতা স্থগিতে অন্তর্বর্তী কোনো আদেশ না দেওয়ায় নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা নেই জামায়াতের এই ২৫ নেতার।’
এ সময় রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বলেন, ‘জামায়াতের ২৫ নেতার প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছিলাম। পরে হাইকোর্ট আমাদের ওই আবেদনটি তিনদিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে ইসিকে আদেশ দিযেছিলেন। হাইকোর্টের আদেশের পরে আমাদের ওই আবেদন বিবেচনার কোনো অবকাশে নেই উল্লেখ করে জামায়াতের ২৫ প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। এর বিরুদ্ধে আমরা আবার হাইকোর্টে আসি। আজ এই শুনানি নিয়ে আদালত আমাদের একটি রুল দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে জামায়াতের ২৫ প্রার্থীর বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না।’
এ অবস্থায় জামায়াত নেতারা নির্বাচন করতে পারবেন কিনা জানতে চাইলে তানিয়া আমির বলেন, ‘অন্তর্বর্তী আদেশ না হওয়ায় আইন অনুয়ায়ী তারা নির্বাচন করতে পারবেন।’
আগে সকালে ইসির সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়। আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। জামায়াত নেতাদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল।
আরও পড়ুন: জামায়াতের ২৫ প্রার্থী, সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ রিটের শুনানি শুরু
শুনানিতে তানিয়া আমীর আদালতকে বলেন, জামায়াতের গঠনতন্ত্র গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের (আরপিও) সঙ্গে সাংঘর্ষিক, সংবিধানের ৮-১১ এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এ সংগঠনে অমুসলিমরা সদস্য হতে পারে না, এটাও আরপিওর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তারা সংসদে বিশ্বাস করে না, সংসদে আইন হতে পারে তারা তা বিশ্বাস করে না। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশন তাদের নির্বাচন করতে দিতে পারে না। এটি আরপিও অনুযায়ী হয়নি।
গত ২৩ ডিসেম্বর জামায়াতের ২৫ প্রার্থীর প্রার্থিতা বহাল রাখে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রার্থিতা বাতিলের সুযোগ ইসির হাতে নেই বলেই তাদের প্রার্থিতা বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর আগে, জামায়াতের ২৫ প্রার্থীর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিবসহ চার জন। তাদের আবেদন তিন দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতের সেই আদেশের চিঠি বৃহস্পতিবার (২০ ডিসেম্বর) ইসিতে পৌঁছায়।
আরও পড়ুন: জামায়াতের ২৫ নেতার প্রার্থিতা বহাল, ইসির হাতে সুযোগ নেই
প্রসঙ্গত, ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ২২ নেতাকে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। এছাড়া বাকি তিনজন জামায়াত নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
এবারের নির্বাচনে জামায়াত প্রার্থীরা হলেন— দিনাজপুর-১ আসনে মোহাম্মদ হানিফ, দিনাজপুর-৬ আসনে মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-২ আসনে মনিরুজ্জামান মন্টু, নীলফামারী-৩ আসনে মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, গাইবান্ধা-১ আসনে মাজেদুর রহমান সরকার, সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, পাবনা-৫ আসনে মাওলানা ইকবাল হুসাইন, ঝিনাইদহ-৩ আসনে অধ্যাপক মতিয়ার রহমান, যশোর-২ আসনে আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন, বাগেরহাট-৩ আসনে অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ, বাগেরহাট-৪ আসনে অধ্যাপক আবদুল আলীম, খুলনা-৫ আসনে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, খুলনা-৬ আসনে মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, সাতক্ষীরা-২ আসনে মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৩ আসনে মুফতি রবিউল বাশার, সাতক্ষীরা-৪ আসনে গাজী নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-১ আসনে শামীম সাঈদী, ঢাকা-১৫ আসনে ডা. শফিকুর রহমান, সিলেট-৬ আসনে মাওলানা হাবিবুর রহমান, কুমিল্লা-১১ আসনে ডা. আবদুল্লাহ মো. তাহের, চট্টগ্রাম-১৫ আসনে আ ন ম শামসুল ইসলাম ও কক্সবাজার-২ আসনে হামিদুর রহমান আযাদ।
চলতি বছরের ২৯ অক্টোবর রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর আগে ২০১৩ সালে হাইকোর্টের রায়ে দলটির নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয়।
সারাবাংলা/এজেডকে/একে