৩০ প্রার্থীর প্রার্থিতা উচ্চ আদালতে বাতিল
২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৪:২৬
।। আব্দুল জাব্বার খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক মনোনয়নপত্র বৈধতা পেলেও আইনি জটিলতায় উচ্চ আদালতের আদেশে এ পর্যন্ত বাতিল হয়েছে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৩০ প্রার্থীর মনোনয়ন। এর মধ্যে বিএনপি মনোনীত ২৩ প্রার্থী, আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের কোনো প্রার্থিতা বাতিল না হলেও স্বতন্ত্র তিনজনের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। অপরদিকে জাতীয় পার্টির দুই প্রার্থী, মুসলিম লীগের এক প্রার্থী ও বিএনপি (জামায়াত) এক প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে।
এর মধ্যে অধিকাংশ প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ না করা সংক্রান্ত জটিলতায়। এ ছাড়া দুজন ঋণখেলাপি, একজন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরি থেকে অবসরের পর নির্দিষ্ট সময়সীমা উত্তীর্ণ না করায় এবং দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় কয়েকজনের প্রার্থিতা বাতিল হয়।
নির্বাচন কমিশনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে পৃথক পৃথক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগ থেকে এসব প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিল করে আদেশ দেওয়া হয়।
তবে অধিকাংশ প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে নির্বাচনকালীন বিষয় নিষ্পত্তির এখতিয়ারসম্পন্ন বেঞ্চের বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি খায়রুল আলমের কোর্ট থেকে।
আইনি জটিলতায় এত বিপুল সংখ্যক প্রার্থিতা স্থগিত হওয়ার ঘটনা আগে কখনো দেখা যায়নি বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া পাঁচটি আসনে বিএনপির প্রস্তাব অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে যাদের ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, উচ্চ আদালতের নির্দেশে তা অন্যদের দেওয়া হয়েছে।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে প্রার্থিতা স্থগিত হওয়ায় অনেক আসনেই বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীশূন্য রয়েছে।
বিএনপির যেসব আসনে প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে– দুই মামলায় ১৭ বছর দণ্ডপ্রাপ্ত কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার তিনটি আসনের মনোনয়পত্র বাতিল হয়েছে। তার তিনটি আসন হলো- ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭। এছাড়া ঢাকা-১ আসনের খন্দকার আবু আশফাক, ঢাকা ২০-এ তমিজ উদ্দিন, বগুড়া ৭-এ মোর্শেদ মিল্টন ও সরকার বাদল, জামালপুর ৪-এ ফরিদুল কবির তালুকদার শামীম, জয়পুরহাট ১-এ মো. ফজলুর রহমান, ঝিনাইদহ-২ আসনের মো. আব্দুল মজিদ, রাজশাহী ৬-এ আবু সাঈদ চাঁদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৪-এ ইঞ্জিনিয়ার মোসলেম উদ্দিন, দিনাজপুর ৩-এ সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, নিলফামারী-৪ আসনে মো. আমজাদ হোসেন সরকার, নাটোর ৪-এ আব্দুল আজিজ, নরসিংদী ৩-এ মঞ্জুর এলাহী, গাইবান্ধা ৪-এ ফারুক কবির আহমেদ, জামালপুর ১-এ রশিদুজ্জামান মিল্লাত, সিলেট ২-এ তাহসিনা রুশদীর লুনা, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা খান রীতা, সিরাজগঞ্জ-২ সাবেক প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, নাটোর-২ আসনে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বগুড়া-৩ আসনে আবদুল মুহিত তালুকদার, ময়মনসিংহ-১ আলী আজগর, চাঁদপুর-৪ এম এ হান্নান, নরসিংদী-৩ আসনের মঞ্জুর এলাহীর প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে।
এ ছাড়া উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্বতন্ত্র প্রার্থী (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী) ময়মনসিংহ-৮ আসনের মাহমুদ হাসান সুমন, রংপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আসাদুজ্জামান বাবলু ও কিশোগঞ্জ-৩ আসনের মিজানুল হকের প্রার্থিতা স্থগিত রয়েছে।
জাতীয় পার্টির টাঙ্গাইল-৮ আবুল কাশেম ও নিলফামারী-৪ মো. রশিদুল ইসলাম।
এছাড়া ঢাকা-২ আসনে মুসলিম লীগ প্রার্থী মইনুদ্দিন রিপন ও রংপুর-৫ আসনে বিএনপি প্রার্থী জামায়াত নেতা গোলাম রব্বানীর প্রার্থিতা বাতিল করেছেন হাইকোর্ট।
ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী বদল হয়েছে যাদের: পাঁচটি আসনে দলের প্রস্তাব অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন থেকে যাদের ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, উচ্চ আদালতের নির্দেশে তাদের প্রতীক অন্যকে দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে মানিকগঞ্জ-১ আসনে এসএ জিন্নাহ কবিরের পরিবর্তে খন্দকার আব্দুল হামিদ ডাবলু, নাটোর ১-এ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মঞ্জুরুল ইসলাম বিমলের পরিবর্তে কামরুন্নাহার শিরিন, নওগাঁ ১-এ ডা. ছালেক চৌধুরীর পরিবর্তে মোস্তাফিজুর রহমান, বগুড়া ৩-এ আব্দুল মুহিত তালুকদারের পরিবর্তে মাসুদা মমিন ও রাজশাহী-৫ আসনে নাদিম মোস্তফার পরিবর্তে অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম ধানের শীষ প্রতীক পেয়েছেন।
এসব আসন ছাড়াও আরও বিপুল সংখ্যক প্রার্থীর বিরুদ্ধে আবেদন জমা পড়েছিল হাইকোর্টে। কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে সেগুলোর কোনো সমাধান হয়নি। যা গতকালও শুনানির অপেক্ষায় ছিল।
বেশ কয়েকটি আবেদন আদালতে উপস্থাপনও করা হয়। এ সময় হাইকোর্টের উপরোক্ত বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি জেবিএম হাসান বলেন, ‘আজ শেষ কার্যদিবস, এখন নির্বাচন কমিশনকে আর ডিস্টার্ব (বিরক্ত) করব না। ব্যালট পেপার পৌঁছে গেছে কেন্দ্রে কেন্দ্রে। নতুন মামলা আর নেব না।’
এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘পুরো দেশ আছে নির্বাচন নিয়ে, আজকে কোনো আদেশ দেওয়া যাবে না। আপনারা নির্বাচনের পরে নিয়মিত বেঞ্চে আবেদন করেন। সেখানেই নিষ্পত্তি করেন। পরে আদালত ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া জামায়াতের ২৫ প্রার্থীর প্রার্থিতা স্থগিত না করে শুধু রুল জারি করে আদেশ দেন। এর ফলে ওই ২৫ প্রার্থীর নির্বাচন করতে বাধা না থাকলেও রুল নিষ্পত্তির পরই তাদের বিষয়ে চূড়ান্ত ফায়সালা হবে।’
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী মুহাম্মদ ইয়াসিন খান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন বেআইনিভাবে কিছু করেনি। যা করেছে আইনগতভাবেই করেছে।’
সারাবাংলা/এজেডকে/একে