Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নির্বাচনে সর্বোচ্চ ধৈর্য ধরবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী


২৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ২১:৫৭

।। উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে যেকোনো ধরনের সহিংসতা বা নাশকতা মোকাবিলায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে যেকোনো পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ ধৈর্য ধরবেন তারা। তাদের ওপর হামলা হলে সে পরিস্থিতিও তারা আক্রমণাত্মক না হয়ে শান্তভাবে মোকাবিলা করবে। পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সেভাবেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

পুলিশের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, এর আগের নির্বাচনগুলোর মতো এবারও ব্যাপক সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে। কারা কী ধরনের সহিংসতা করতে পারে, সম্ভাব্য সে তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, কালো টাকা ও অবৈধ অস্ত্র কোথায় ব্যবহার হতে পারে, সেদিকেও বাড়ানো হয় নজরদারি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য আরও বলছে, ভোট ঘিরে মরণ কামড় দিতে পারে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরা। এসব তথ্য বিবেচনায় নিয়েই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কৌশল গ্রহণ করেছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে যে ধরনের সহিংসতা হয়েছিল, তার আলোকেই এবারের নির্বাচনি পরিস্থিতি মোকাবিলা করার প্রস্তুতি নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেবারের বিভিন্ন ধরনের হামলা-নাশকতার তথ্য পর্যালোচনা করেই নেওয়া হয়েছে এবারের কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে মানবিকতা, সাহসিকতা, ধৈর্য, ন্যায়পরায়ণতাসহ বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধারণা দেওয়া হয়েছে বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। এই প্রশিক্ষণে বিশেষভাবে বলা হয়েছে, নিতান্ত প্রয়োজন না হলে পুলিশ যেন বলপ্রয়োগ না করে।

বিজ্ঞাপন

পুলিশ বলছে, নির্বাচন মাথায় রেখে মাস দুয়েক আগে থেকেই বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় পুলিশের জন্য। এর আগে পুলিশের ঊর্ধ্বতন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে বিদেশে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরে সেসব কর্মকর্তারাই অন্য পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেন। পুলিশ সদর দফতরসহ বিভাগীয় ডিআইজি রেঞ্জ কার্যালয়, মেট্রোপলিটন পুলিশ কার্যালয়সহ জেলাভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় পুলিশ সদস্যদের।

এদিকে, এবারের নির্বাচনে যেন মাঠ পর্যায় থেকেই পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দিকনির্দেশনা দিতে পারেন, সেজন্য সারাদেশকে আটটি অঞ্চলে বিভিক্ত করে পুলিশের আট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। চারটি টিমে ভাগ হয়ে তারা নিজ নিজ দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় দিকনির্দেশনা দেবেন। এর বাইরে আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীকে প্রধান করে একটি মনিটরিং সেলও গঠন করা হয়েছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক সারাবাংলাকে বলেন, পুলিশকে আগের চেয়ে অনেক বেশি মোটিভেশন দেওয়া হয়েছে। এখন তারা অনেক বেশি ধৈর্যশীল ভূমিকা পালন করবেন। একেবারই দেওয়ালে পিঠ ঠেকে না যাওয়া পর্যন্ত তারা ধৈর্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে।

ফেনী জেলার পুলিশ সুপার এস এম জাহাঙ্গীর আলম সরকার সারাবাংলাকে বলেন, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী অংশে বেশকিছু গাড়িতে পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে অনেকে হতাহত হয়েছেন। এবার এ ধরনের হামলা প্রতিরোধ করতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের মাধ্যমে মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় পুলিশের প্রতিটি সদস্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এখন পুলিশ আগের চেয়ে অনেক বেশি কৌশলী, ধৈর্যশীল।

রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য বলেন, রংপুর অঞ্চলের নাশকতার সম্ভাব্য স্থানগুলোর পুরো চিত্র নিয়ে পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, কেউ কোথাও নাশকতা করতে পারবেন না। এরপরও নাশকতা হলে ওই সময় কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে, কার সহায়তা প্রয়োজন হবে, প্রাণহানি কীভাবে ঠেকানো যাবে— সেসব কৌশল নিয়ে পুলিশকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার টি এম মুজাহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, সম্ভাব্য সহিংস এলাকাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। পুলিশের ওপর কারা কোন ধরনের হামলা চালাতে পারে এবং ওইসব হামলা কিভাবে মোকাবেলা করা হবে, তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখতে নিয়মিত মোটিভেশন দেওয়া হচ্ছে। ধৈর্যের সঙ্গে যেন সবাই দায়িত্ব পালন করেন, সে বিষয়টিকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

কেবল পুলিশ নয়, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), নৌপুলিশ ও কোস্ট গার্ডকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে একইভাবে। র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার সহকারী কমিশনার এএসপি মিজানুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, নির্বাচনি মাঠে দায়িত্ব পালনের সময় আক্রান্ত হলেও যেন র‌্যাব সদস্যরা উত্তেজিত না হয়ে শান্তভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেন, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, যেকোনো পরিস্থিতিতে বলপ্রয়োগ না করে যেন মানুষের জানমালের নিরাপত্তার দিকে তারা বেশি মনোযোগী হন। এ বিষয়ে প্রয়োজনে জনপ্রতিনিধিদের সহায়তা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।

অন্যদিকে, বিজিবি সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মহসীন রেজা সারাবাংলাকে বলেন, অভ্যান্তরীণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশকে সহায়তা করতে সারাদেশে ১ হাজার ১৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। তারা ধৈর্যের সঙ্গে অন্যান্য বাহিনীর পরামর্শ অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করবে।

আর নৌপুলিশের ডিআইজি শেখ মারুফ হাসানও একই কথা বলেন। তিনি জানান, নৌপুলিশের দেড় হাজার সদস্য এবারের নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন।

সারাবাংলা/ইউজে/টিআর

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোস্ট গার্ড নৌপুলিশ পুলিশ বিজিবি র‍্যাব

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর