সারাদেশে নির্বাচনি সহিংসতায় নিহত ১৬
৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৩:৫৯
।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।
নির্বাচনি সহিংসতায় সারাদেশে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে অধিকাংশই আওয়ামী লীগ-যুবলীগ নেতাকর্মী। তবে বেশ কয়েকটি হামলার ঘটনায় একজন আনসার সদস্য, কয়েকজন বিএনপি নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষও মারা গেছেন।
রোববার (৩০ ডিসেম্বর) বিকেল পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এসব তথ্য জানা গেছে।
সবশেষ রোববার বিকেলে সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলায় পুলিশের গুলিতে উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সায়েম আহমেদ সোহেলের মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে রোববার সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরুর কিছু পরেই রাঙ্গামাটি কাউখালী উপজেলার ঘাগড়ায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে বাছির উদ্দীন নামে এক যুবলীগ নেতার মৃত্যু হয়েছে। সকালে ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার আগে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। রাজশাহীতে বিএনপি সমর্থকদের লাঠির আঘাতে আওয়ামী লীগ কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া তানোরে ভোটকেন্দ্র দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে আরও এক আওয়ামী লীগ কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। নাটোরে বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলা ও ছুরিকাঘাতে এক আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত হয়েছেন।
দুপুরে নোয়াখালী ৩ আসনে বেগমগঞ্জের গোপালপুর ইউনিয়নের তুলারাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা ও ধানের শীষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে কর্তব্যরত আনসার সদস্য নুরনবী নিহত হন।
গাজীপুর শহরের হাড়িনাল এলাকায় আওয়ামীলীগ-বিএনপি সংঘর্ষে কাজী আজিমুদ্দিন কলেজের সাবেক ভিপি যুবলীগ নেতা লিয়াকতের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে কুমিল্লায় নির্বাচনি সহিংসতায় তিনজন নিহত হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের রাজঘর প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গুলিতে নিহত হয়েছে এক আওয়ামী লীগ কর্মী, আহত হয়েছে দুইজন। কক্সবাজারের পেকুয়া ও চট্টগ্রামের পটিয়ায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছে।
এছাড়া টাঙ্গাইলে এক ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বগুড়ার কাহালুতে আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র সংঘর্ষে নিহত হয়েছে একজন।
এদিকে নরসিংদির শিবপুরে একজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
সিলেট : বেলা ৩টার দিকে বালাগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম গৌরিপুর ইউনিয়নের আজিমপুর গ্রামের ভোটকেন্দ্রের ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সায়েম আহমেদ সোহেল। এসময় পুলিশ গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন সায়েম। তাকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতকালে নেওয়ার পথেই মারা যান তিনি।
বগুড়া : রোববার দুপুরে ভোট দেওয়া শেষে বগুড়ার বাঘুইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের কাছে একটি চায়ের দোকানে বসে গল্প গুজব করছিলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য সোহেলসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এসময় লাঠিসোটাসহ দুই তিনশ বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মী ওই কেন্দ্রে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তাদের বাধা দেন সোহেল। এতে তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে হামলা চালায় বিএনপি-জামায়াত সদস্যরা। এসময় ওই পথ দিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছিলেন স্থানীয় আজিজুল। তার ওপরেও হামলা করা হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার।
বাঘুইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আব্দুল কুদ্দুস জানান, কেন্দ্রের ভেতরে কোনো সমস্যা হয়নি। তবে বাইরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। এই আসনে মোট ভোটার প্রায় ২৩০০ জন। সকালে প্রচুর ভোটার আসলেও এই হত্যার ঘটনার পর ভোটার সংখ্যা কমতে শুরু করেছে।
রাজশাহী : রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে ভোটকেন্দ্র দখল নেয়াকে কেন্দ্র করে জামায়াত-বিএনপির হামলায় মোদাচ্ছের আলী (৪০) নামে এক আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু হয়েছে। রোববার দুপুর দেড়টার দিকে তানোর উপজেলার মোহাম্মদপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মোদাচ্ছের আলী পাঁচন্দর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
জেলা পুলিশের মুখপাত্র সহকারী পুলিশ সুপার আবদুর রাজ্জাক খান জানান, মোদাচ্ছের আলী ভোট দেয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ওই সময় হঠাৎ করেই জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীরা লাঠি ও হকিস্টিক নিয়ে হামলা চালায়। হামলাকারীরা ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত ভোটারদের এলোপাথাড়ি মারতে থাকে। এ সময় লাঠির আঘাতে মোদাচ্ছের আলী গুরুতর আহত হন। স্থানীয় লোকজন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়। ঘটনার পর ভোট গ্রহণ স্থগিত হরেও পরে আবারও ভোট গ্রহণ শুরু হয় বলে জানান তিনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
এর আগে সকালে রাজশাহীতে ভোট দেওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষে মেরাজুল ইসলাম নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। রাজশাহী-৩ আসনের মোহনপুরের পাকুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে এই ঘটনা ঘটে।
নোয়াখালী : দুপুরে নোয়াখালী-৩ আসনে বেগমগঞ্জের গোপালপুর ইউনিয়নের তুলারাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা ও ধানের শীষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এসময় ওই কেন্দ্রে কর্তব্যরত আনসার সদস্য নুরনবী নিহত হন। একই আসনে মধ্য নরত্তোপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা ও ধানের শীষের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে নির্বাচন কর্মকর্তাসহ অন্তত ৬ জন আহত হয়। সন্ত্রাসীরা নির্বাচনি কাজে ব্যবহৃত একটি মিনিবাসে আগুন দেয়। এ ঘটনায় ওই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হয়।
রাঙ্গামাটি : রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়ায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে বাছির উদ্দীন (৩৫) নামে এক যুবলীগ নেতার মৃত্যু হয়েছে। সকালে ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার আগে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহত বাছির উদ্দীন ঘাগড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এরশাদ মিয়া।
চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামের পটিয়া ও বাঁশখালী উপজেলায় দুটি আলাদা নির্বাচনি সংঘাতের ঘটনায় এক কিশোরসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
পটিয়া উপজেলার জিরি ইউনিয়নের পশ্চিম মালিয়ারা ভোটকেন্দ্রে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নৌকা এবং ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। এসময় দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আবু সাদেক (১৫) নামে এক কিশোরের মৃত্যু হয়। তবে সে রাজনৈতিক কর্মী নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। এর আগে শনিবার (২৯ ডিসেম্বর) রাত আড়াইটার দিকে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় ভোটকেন্দ্র দখল নিয়ে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন। নিহত আহমদ কবির (৪৫) কাথারিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কুমিল্লা : কুমিল্লায় নির্বাচনি সহিংসতায় দুইজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে চান্দিনা ও নাঙ্গলকোট এলাকায় এই দুটি ঘটনা ঘটে। এদের মধ্যে একজন বিএনপি কর্মী বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
কক্সবাজার : কক্সবাজারের পেকুয়ায় বিএনপি সমর্থকরা কুপিয়ে হত্যা করেছে আব্দুল্লাহ আল ফারুক নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে। বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের মাতব্বর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের পাশে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
এছাড়া নরসিংদী, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নাটোর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে নির্বাচনি সহিংসতায় একজন করে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
সারাবাংলা/এসএমএন/পিএম