Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রাজশাহীর সোমা: নারীর জীবন কথা বলে যার তুলিতে


৫ জানুয়ারি ২০১৯ ২০:১৮

।। সুমন মুহাম্মদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

রাজশাহী: রাজশাহীর মেয়ে নারগিস পারভিন সোমা। নারীর জীবন সংগ্রাম নিয়ে ছবি এঁকে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অর্জন করেছেন একাধিক পুরস্কার। ষড়ং আর্ট গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে দেশে বিদেশে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজনও করেছেন তিনি।

শিশু কাল থেকেই রঙ পেন্সিল আর কাগজের সঙ্গে সম্পর্ক সোমার। দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় শিল্পকলা একাডেমিতে ভর্তি হওয়ার মধ্য দিয়ে তার ছবি আঁকা শুরু। বাবা চেয়েছিলেন সোমা ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটে পড়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হবেন। সেই অনুযায়ী ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটে ভর্তিও করা হয় তাকে।  কিন্তু মনিটর আর কি-বোর্ডের সঙ্গে সম্পর্কটা ঠিক জুতসই হয়নি তার। শেষ পর্যন্ত সোমার ইচ্ছাই পূরণ হয়। তিনি রাজশাহীর চারুকলা মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

পাখিডাকা ভোরে মা ঢোকেন চার দেয়ালে আটকানো ছোট্ট রান্না ঘরে। সারাদিন পর রান্নাঘর থেকে বের হন সেই রাতে। চিরচেনা এই জীবনটাই আজন্ম দেখে আসছেন সোমা। মাকে দেখেছেন পরিবার ছাড়া কখনোই নিজেকে নিয়ে ভাবেননি। মায়ের মনের ইচ্ছা, চাওয়া-পাওয়া নিয়ে কেউ কখনো ভাবে না। প্রতিটি পরিবারেই যেন এই চিত্র দেখা যায়। সোমা তার মায়ের এই প্রতিচ্ছবিকে ঘিরে নারী জাগরণের জন্য  জীবন সংগ্রামের ছবি আঁকার সিদ্ধান্ত নেন।

মূলত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সবুজ চত্বরে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মনের মধ্যে উঁকি দেয় নারীর জীবনসংগ্রাম নিয়ে ছবির আঁকার বিষয়টি। মায়ের জীবন সংগ্রাম দেখেই মূলত এই বিষয়ে ছবি আঁকতে শুরু করেন তিনি। শুরু করেন রঙের ছোঁয়ায় তুলির আঁচড়ে নতুন নতুন রূপে নারীর জীবনসংগ্রাম ফুটিয়ে তুলতে। এপর্যন্ত নারীর জীবন সংগ্রাম নিয়ে মোট ১৬টি ছবি এঁকেছেন।

বিজ্ঞাপন

ছবি আঁকার পাশাপাশি অংশ নিতে থাকেন বিভিন্ন প্রদর্শনীতে। আর অর্জন করতে থাকেন একের পর এক পুরস্কার। মোট ১৪ টি পুরস্কার জিতেছেন তিনি। যার মাঝে ১২টি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পুরস্কার।

অন্যদিকে দেশে ২০১৫ সাল থেকে জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন চিত্র প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া শুরু হলেও এখনপর্যন্ত তেমন সাফল্য নেই।  ২০১৬ সালে জাপানে আয়োজিত অষ্টম কাহাল আর্ট ফেয়ারে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে তার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পুরস্কার অর্জনের যাত্রা শুরু। প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েই অর্জন করেন গ্রান্ড হার্ড অ্যাওয়ার্ড। সর্বশেষ পুরস্কার অর্জন করেছেন এ বছরের ডিসেম্বরে নেপালে।

এখন পর্যন্ত ভারত, নেপাল, জাপান, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স ও ইতালিতে চিত্র প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। এ বছর ২৩ থেকে ২৫ জানুয়ারি ভারতের মেদিনীপুর ফাইন আর্ট অ্যান্ড কালচার আয়োজিত আর্ট ফেয়ারে অংশ নেওয়ার জন্য একমাত্র বাংলাদেশি চিত্রশিল্পী হিসেবে নারীর জীবন সংগ্রাম বিষয়ক ছবি মনোনীত হয়েছে তার। এছাড়াও ভারত, গ্রিস, জাপান, রাশিয়া ও নেপালের ৮০ জন শিল্পীর ছবি দেখানো হবে এই প্রদর্শনীতে।

ষড়ং আট গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এই শিল্পী মনে করেন, এখন সময় বদলেছে। নারীরা ধীরে ধীরে  সব ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই বদলের ধারায় রাজশাহীতে থেকেও তিনি একজন চিত্রশিল্পী হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পা রাখতে সক্ষম হয়েছেন। প্রত্যাশা করেন তার অনুজরা আগামীতে দেশের গণ্ডি  পেরিয়ে পৃথিবীজুড়ে চিত্র প্রদর্শনীতে অংশ নিয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবেন। আর বয়ে আনবেন গৌরব।

সোমা আরও বলেন, বিদেশের পত্রিকায় প্রথমেই বলা হয় তিনি বাংলাদেশের মেয়ে। এটাই তার কাছে সবচেয়ে গর্বের বিষয়। নিজের চিত্রকর্ম দিয়ে বিভিন্ন দেশের চিত্রশিল্পিদের আঁকা ছবির ভিড়ে নিজের দেশকে উপস্থাপন করতে পারছেন, এটা অনেক বড় বিষয় তার কাছে। তিনি মনে করেন, নিজ দেশের নারীর জীবন সংগ্রামের অঙ্কিত ছবি দিয়ে বিশ্বের সব চিত্রশিল্পীর সঙ্গে আরও সুবনিবিড়ভাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়াই মূল লক্ষ্য। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পুরস্কার অর্জন এর চেয়েও বড় প্রাপ্তি।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আরএফ/

তুলিতে নারীর জীবন নারগিস পারভিন সোমা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর