গাজী-ই একমাত্র
৭ জানুয়ারি ২০১৯ ১৩:৫৫
।। সিনিয়র কসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: নতুন মন্ত্রিপরিষদে এবার একমাত্র খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ঠাঁই পেয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী (বীরপ্রতীক)। পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে তিনি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন।
আওয়ামী লীগের এ নেতা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে ক্র্যাক প্লাটুনের অন্যতম সদস্য ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত করে।
গতকাল রোববার (৬ জানুয়ারি) ২৪ মন্ত্রী, ১৯ প্রতিমন্ত্রী ও তিন উপমন্ত্রীর সমন্বয়ে নতুন মন্ত্রিদের নাম-দফতর বণ্টনের কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম। সোমবার (৭ জানুয়ারি) বিকেলে বঙ্গভবনে ডাক পাওয়া অন্যদের সঙ্গে মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন দস্তগীর গাজী।
খেতাবপ্রাপ্ত কোনো মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেই শুধু নয় স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ শাসনামলে নারায়ণগঞ্জ জেলা থেকে প্রথম মন্ত্রী হলেন তিনি।
মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে রোববার গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, ‘আশা করি, বস্ত্র ও পাটশিল্প অনেক এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো। আমি দেশের সম্পদ নিয়ে কাজ করব, দেশের ঐতিহ্য বিশ্ব দরবারে তুলে ধরব। আমি আমার সেরাটা দিয়ে দেশের জন্য কাজ করব।’
গোলাম দস্তগীর গাজীর জন্ম ১৯৪৮ সালের ১৪ আগস্ট। তার বাবা গোলাম কিবরিয়া গাজী, মা শামসুন্নেছা বেগম।
নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী দীর্ঘদিন রাজপথের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নিবার্চন, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, এরপর ৭৫-এর কালরাত্রি; এর সব ঘটনায় জীবনবাজি রেখে লড়াই করেছেন। তৃণমূলের নেতা হিসেবে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করতে কাজ করেছেন এবং করে যাচ্ছেন।
গোলাম দস্তগীর গাজী আওয়ামী লীগের নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সদস্য ও গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান। এছাড়া বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন জিটিভি, অনলাইন নিউজ পোর্টাল সারাবাংলা ডটনেট ও দৈনিক সারাবাংলার মালিক তিনি।
মেধাবী গোলাম দস্তগীর গাজী মাধ্যমিকের পর উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন নটরডেম কলেজ থেকে। পরে ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাস করেন। ১৯৬৬-তে ছয় দফা আন্দোলন ও ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে রাজপথে সক্রিয় ছিলেন গোলাম দস্তগীর গাজী। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে বীরত্বপূর্ণ। অবদান রাখেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ নম্বর সেক্টরে বীরত্বের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন দস্তগীর গাজী। বিখ্যাত ক্র্যাক প্লাটুনের একজন যোদ্ধা হিসেবে দুঃসাহসিকতার সঙ্গে বিভিন্ন সম্মুখ সমরে অংশ নেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত করে।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রাজনীতিতে থাকলেও গাজী দস্তগীর নিজ বুদ্ধিমত্তা, উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তি ও কর্মদক্ষতা কাজে লাগান যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অবকাঠামো পুনর্গঠনে। ১৯৭৪ সালে দেশের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ও দেশের শিল্প খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে প্লাস্টিক ও রাবারজাত পণ্য উৎপাদনকারী কারখানা স্থাপন করেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
গোলাম দস্তগীর গাজী ১৯৭৭ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচনে কাকরাইল, সিদ্ধেশ্বরী, মালিবাগ, মৌচাক, ইস্কাটন ও মগবাজার এলাকা থেকে কমিশনার নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক জীবনের বহু চড়াই-উৎরাই পার করা গোলাম দস্তগীর গাজী ৯০-এর দশক থেকে পৈতৃক ভূমি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকাবাসীর জন্য কাজ করতে শুরু করেন।
২০০৬ সালে ওয়ান-ইলেভেনের সময় বিভিন্ন মহলের চাপ উপেক্ষা করেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অটল ছিলেন গোলাম দস্তগীর গাজী। পরে ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য হওয়ার পর এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় তার নেতৃত্বে। সফল ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ পরিচয়ের বাইরে সমাজসেবক এবং বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট ক্রীড়া পৃষ্ঠপোষক ও ক্রীড়া অনুরাগীও।
২০০৮ সালের পর ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ এবং সদ্য ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি একই আসন থেকে জনরায় নিয়ে নির্বাচিত হয়ে আসেন। এ নিয়ে টানা তিন মেয়াদে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য হলেন গাজী দস্তগীর। এবারে পেলেন মন্ত্রিত্বও।
সমাজসেবামূলক কার্যক্রমে ভূমিকা রাখার জন্যে ২০১৮ সালে গোলাম দস্তগীর গাজী মাদার তেরেসা পদকে ভূষিত হন।
সারাবাংলা/একে/পিএম