মিরপুর ও উত্তরায় পোশাক শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ
৮ জানুয়ারি ২০১৯ ১১:৩৫
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: সরকারি মজুরি কাঠামো বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের দাবিতে উত্তরায় তৃতীয় দিনের মতো সড়ক অবরোধ করেছেন পোশাক শ্রমিকরা। মিরপুর সাংবাদিক কলোনিসংলগ্ন ২২ তলা গার্মেন্টসের শ্রমিকরাও রাস্তা অবরোধ করেছেন।
মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারি) সকাল ১০টার পর থেকে উত্তরা চালাবন মাজার রোড চৈতি গার্মেন্টস সংলগ্ন সড়কে অবস্থান নেন বেশ কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।
তাদের সরিয়ে দিতে পুলিশ ধাওয়া দিলেও শ্রমিকরা রাস্তা না ছেড়ে ঐক্যবদ্ধভাবে উত্তরার আজমপুর রোডের দিকে যায়। এসময় তারা স্লোগান দিতে থাকে, ‘মালিকদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও।’
আন্দোলনরত চৈতি গার্মেন্টসের শ্রমিক রতন বলেন, ‘আমাদের মালিকরা আমাদের সঙ্গে নাটক করছে। আমাদের বেতন কাঠামোর বৃদ্ধির দাবি তারা মেনে নিয়েছে; এসব বুঝিয়ে আমাদের গত দুই দিন রাস্তা ছেড়ে গার্মেন্টসে নিয়ে গেছে। অথচ এখন এই দাবি আর বাস্তবায়ন করছে না। তাই আজও আমরা রাস্তায় নেমেছি।’
অপরদিকে, নাছিমা নামের অপর আরেক শ্রমিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘সরকার আমাদের বেতন বাড়িয়েছে, অথচ মালিক পক্ষ আমাদের দিচ্ছে না। আমরা যে বেতন পাই তা নিয়ে সংসার চালাতে পারি না। আমাদের মালিকরা গত দুই দিন আমাদের বলেছে বেতন বাড়াবে কিন্তু তারা বাড়াচ্ছে না, পুলিশ দিয়ে আমাদেরকে মারা হচ্ছে।’
দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তপন কুমার শাহা সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা অনেক ধৈর্য সহকারে শ্রমিকদের বুঝাচ্ছি, যাতে রাস্তা ছেড়ে দেয় তারা। কিন্তু শ্রমিকরা রাস্তা ছাড়ছেন না। আমরা মালিকপক্ষের সঙ্গেও কথা বলেছি, তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে বেতন বাড়ানো হবে। আমরা তারপরও রাস্তা ফাঁকা করার জন্য চেষ্টা করছি।’
বিমানবন্দর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার পর থেকে উত্তরখান ও দক্ষিণখান এলাকার বিভিন্ন গার্মেন্টের শ্রমিকরা জড়ো হয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে আসার চেষ্টা করছে। শ্রমিকরা বিভিন্ন গার্মেন্টে গিয়ে অপর শ্রমিকদের বের করে আনার চেষ্টা করছে। না আসলে কারখানায় ভাঙচুর করছে। দক্ষিণখান এলাকার নিপা এবং এপিএস ও চৈতি গার্মেন্টসে হামলার খবর পেয়েছি আমরা।’
তিনি আরও বলেন, ‘বেলা ১২টার দিকে উত্তরার আবদুল্লাহপুর এলাকায় গার্মেন্ট শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ টিয়ার শেল ছুড়ে তাদের সরিয়ে দেয়।’
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গত দুই দিনের তুলনায় পুলিশের সংখ্যা অনেক বেশি। ঘটনাস্থলে দাঙ্গা পুলিশ ও সাঁজোয়া যান আনা হয়েছে।এছারা পুলিশ সতর্ক অবস্থায় থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে।
এদিকে দুপুর ১১টা ৩০ মিনিটে শ্রমিকরা মিছিল নিয়ে উওরা আজমপুর রোড অবরুদ্ধ করতে গেলে পুলিশের ধাওয়ায় শ্রমিকদের আন্দোলন ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এদিন মিরপুরের কালশীসহ বেশ কিছু এলাকার পোশাক শ্রমিকরাও রাস্তায় নেমে আসে। এতে উত্তরা ও মিরপুরগামি যান চলাচল বেশ কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে।
পরে বেলা দেড়টায় উত্তরা ও মিরপুরে শ্রমিকদের সড়কে থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ। এর পরপরই স্বাভাবিক হয় এসব এলাকার যান চলাচল।
এর আগে, গত রোববার (৬ জানুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ, ন্যূনতম মজুরি কাঠামো বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নের দাবিতে এয়ারপোর্ট, উত্তরা, টঙ্গী, গাজীপুর সড়কে অবস্থান নেন শ্রমিকরা। অবরোধের ফলে উত্তরার জসীমউদ্দীন, আজমপুর থেকে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আন্দোলনের এক পর্যায়ে দুপুর দেড়টার দিকে ভার্সেটাইল অ্যাপারেল প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান এ কে ফজলুল হক আজমপুর চৌরাস্তায় এমে শ্রমিকদের কাজে ফেরার অনুরোধ করেন। পরে মালিকপক্ষ ও পুলিশের আশ্বাসে দুপুর পৌনে ২টার দিকে সড়ক থেকে সরে গিয়েছিলেন শ্রমিকরা।
সারাবাংলা/এমএমএইচ/এমও