Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কী আছে ডাকসুর গঠনতন্ত্রে?


১০ জানুয়ারি ২০১৯ ১০:৪৮

।। কবির কানন, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও সাবেক লাখো শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসু নির্বাচন। ডাকসুকে বলা হয় নেতৃত্ব তৈরির আতুরঘর। ছাত্রদের অধিকার আদায় ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার হাতিয়ারও এই ডাকসু। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধন রচনাকারী সংগঠন ডাকসু নির্বাচন হয়নি গত ২৮ বছর।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, বিভিন্ন মন্ত্রী থেকে শুরু করে সুশীল সমাজের সদস্যরা প্রতিনিয়ত ডাকসু নির্বাচন না হওয়া নিয়ে আক্ষেপ করেন। অবশেষে ২৮ বছরের সেই অন্ধকার থেকে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে ডাকসু নির্বাচন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে।

এর অংশ হিসেবে কর্তৃপক্ষ গতবছর ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ১৩ টি ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে বৈঠক করে। সেই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (১০ জানুয়ারি) ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধনের লক্ষ্যে ওই ১৩টি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বসছে কর্তৃপক্ষ।

উপাচার্য কার্যালয় সংলগ্ন লাউঞ্জে বেলা ১১টায় এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মিটিংয়ে ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধন করতে হয়। কিন্তু যেহেতু সিন্ডিকেটে ২৮ বছর ধরে কোনো ছাত্র প্রতিনিধি নেই সুতরাং কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই ছাত্র সংগঠনগুলোর মতামত নিচ্ছে।

প্রশ্ন জাগতে পারে যে কী আছে ডাকসুর গঠনতন্ত্রে? যা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে?

নাম

গঠনতন্ত্রের এক নম্বর অধ্যায়ে বলা হয়েছে, ‘সংসদকে ঢাকা ইউনিভার্সিটি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ’ নামে ডাকা হবে।

বিজ্ঞাপন

লক্ষ্য-উদ্দেশ্য

দুই নম্বর অধ্যায়ে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের চারটি উপধারায় বলা হয়েছে, ‘বিভিন্ন হলের ছাত্রদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সহযোগিতা উৎসাহিত করা, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক বহির্ভূত সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়া, প্রকৃত নাগরিক এবং তাদের মধ্যে নেতৃত্ব গড়তে  বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও তার উপাদানকল্প কলেজসমূহ ও  দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সহযোগিতা উৎসাহিত করা।’

গঠনতন্ত্রের তৃতীয় অধ্যয়ে ডাকসুর ফাংশনে (কাজ) কয়েকটি উপধারায় বলা আছে, ‘সংসদ কমনরুম রক্ষণাবেক্ষণ করবে, বছরে অন্তত একবার জার্নাল ও অন্যান্য বুলেটিন প্রকাশ করবে, মাঝে মধ্যে বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করবে, বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজনের অংশ হিসেবে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিনিধি প্রেরণ অথবা প্রতিনিধিদের ডাকবে, সমাজ সেবা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সদস্যদের মাঝে সমাজসেবার চেতনা বৃদ্ধি করবে।’

কারা সদস্য হতে পারবে?

গঠনতন্ত্রের চতুর্থ অধ্যয়ে কারা সদস্য হতে পারবেন তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ছয়টি উপধারা আছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ববিদ্যলয়ের আবাসিক ও অনাবাসিক সব নিয়মিত শিক্ষার্থীই ডাকসুর সদস্য। তবে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আর্থিক প্রাপ্য পরিশোধ করতে হবে। অনিয়মিত শিক্ষার্থীরাও ডাকসুর সদস্য হতে পারেন, তবে তাদের ডাকসু নির্ধারিত নিবন্ধন ফি দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদেরও নিবন্ধন ফির বিনিময়ে ডাকসুর সদস্য হওয়ার সুযোগ রয়েছে।  এই প্রক্রিয়া দুই ধরনের। একটি হচ্ছে সাধারণ সদস্য ও আরেকটি আজীবন সদস্য। তবে তারা হল সংসদে ভোট দিতে পারবে না, কোনো পদে থাকতে পারবে না । ডাকসুর কার্যনির্বাহী সংসদ চাইলে দেশের যেকোনো বিশিষ্ট নাগরিককে ডাকসুর আজীবন সদস্য ঘোষণা করতে পারে।’

বিজ্ঞাপন

৪ ধারার ৬ উপধারায় বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব প্রিডিগ্রি, বিএফএ, এমফিল ও পিএইচডি শিক্ষার্থীরা ভোটার হতে পারবেন কিন্তু প্রার্থী হতে পারবেন না।

১৯৯১ সালের ১৭ জুন সিন্ডিকেটের সভায় একটি সংশোধনী আনা হয়। এতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক, স্নাতকোত্তর বা প্রিলিমিনারি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল আর্টসের ডিগ্রি পাস কোর্স, বিএফএ, বিবিএ, ডিপ্লোমা, পরিসংখ্যান ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র সার্টিফিকেট কোর্সের শিক্ষার্থীরা ভোটার হতে পারবেন। কিন্তু এদের মধ্যে যারা কোনো কোর্সে শিক্ষাবিরতি দিয়ে পুনর্ভর্তি হয়েছেন বা ফি দেওয়ার সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে, তারা সে সুযোগ পাবেন না।

ডাকসুতে উপাচার্যের ক্ষমতা

উপচার্য সংসদের সর্বোচ্চ স্বার্থে যেকোনো সময় যেকোনো কার্যনির্বাহীকে অথবা সদস্যকে অপসারণ করতে পারবেন। এছাড়া তিনি চাইলে নির্বাহী সংসদকেই বাতিল করতে পারবেন এবং নতুন নির্বাচন ঘোষণা করতে পারবেন অথবা সংসদ গতিশীল রাখার জন্য তিনি যা উপযুক্ত বলে মনে করেন তাই করতে পারবেন। এছাড়া উপাচার্য সিন্ডিকেটের অনুমোদনক্রমে যতকাল পর্যন্ত  ‍উপযুক্ত মনে করবেন সংসদকে  স্থগিত করার কর্তৃত্ব রাখবেন ।

গঠনতন্ত্রের পাঁচ নম্বর অধ্যায়ে আছে, পদাধিকারবলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সংসদের প্রেসিডেন্ট হবেন। ছাত্র সংসদের উদ্যোগে যতগুলো সভা হবে (নির্বাহী কমিটির সভসহ অন্যান্য) তিনি সেসব সভায় সভাপতিত্ব করবেন। এছাড়া তিনি নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে সংসদ চলছে কি না সেটা দেখবেন, জরুরি অবস্থায়,অচল অবস্থায় অথবা গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনে উপাচার্য সংসদের যথাযথ ভূমিকা বিবেচনা করে পদক্ষেপ নিতে পারবেন। এছাড়া উপাচার্য এসব নিয়মের ব্যাখা দিতে পারবেন এবং তার ব্যাখাই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।

ভিপি-জিএসের কাজ

ভাইস প্রেসিডেন্ট বা ডাকসুর ভিপি হবেন সংসদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। প্রেসিডেন্ট এবং কোষাধক্ষ্যের অনুপস্থিতিতে তিনি সকল সভায় সভাপতিত্ব করতে পারবেন। আর ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক বা জিএস সংসদের সকল সম্পত্তির ইনচার্জ থাকবেন। সংসদের পক্ষে তিনি প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। নির্বাহী  ও সংসদের সভা ডাকবেন এছাড়া নির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে সকল কর্মকাণ্ড সংগঠিত করবেন।

ডাকসুর বাকি ১০টি পদ কী কী?

ভিপি-জিএস ছাড়া সংসদের আরও ১০টি পদ আছে। সেগুলো হলো সহ- সাধারণ সম্পাদক, কমনরুম সম্পাদক, বিজ্ঞান কমন রুমের সম্পাদক, ছাত্রীকমন রুম সম্পাদক, সমাজ সেবা সম্পাদক, সাহিত্য সম্পাদক, ক্রিয়াবিষয়ক সম্পাদক, সামাজিক বিনোদন সম্পাদক, ছাত্র পরিবহণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে হতে উপাচার্য কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ করবেন। এইসব পদধারী ও সংসদের সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত নয়জন নির্বাহী নিয়ে নির্বাহী কমিটি গঠন হবে।

কারা প্রার্থী হতে পারবেন?

সংসদের নিয়মিত প্রত্যেক সদস্যই নিয়ম সাপেক্ষে নির্বাচন করতে পারবেন। কিন্তু কোনো প্রার্থীই একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ অথবা হল ছাত্র সংসদের একাধিক পদে নির্বাচন করতে পারবেন না।

সারাবাংলা/কেকে/এসএমএন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

দু’দিনে ভারতে ৯৯ টন ইলিশ রফতানি
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৩৪

সম্পর্কিত খবর