Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রাডো গাড়িতে চড়ে কাস্টমস কর্মকর্তা সেজে প্রতারণা করতো মবিন


১০ জানুয়ারি ২০১৯ ১৮:০৩

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: দামি পোশাক পরে প্রাডো গাড়িতে চড়ে নামি-দামি হোটেলে বসে ক্লায়েন্টদের সঙ্গে আলোচনা করতো প্রতারক খন্দকার মো. ফারুক ওরফে ওমর মবিন। নিজেকে কখনো কাস্টমস কর্মকর্তা, কখনো বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতো। ভুক্তভোগীদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে হাতিয়ে নিতো মোটা অঙ্কের টাকা। কাজ শেষে পরিবর্তন করতো সিম কার্ড ও মোবাইল ফোন। বৃহস্পতিবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে সিআইডির মালিবাগ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিরিয়াস অ্যান্ড হোমিসাইডাল স্কোয়াডের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) সৈয়দা জান্নাত আরা।

এর আগে, বুধবার (৯ জানুযারি) রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের নবাবী ভোজ রেস্টুরেন্টের সামনে থেকে প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি)।  গ্রেফতার প্রতারকরা হলো, খন্দকার মো. ফারুক ওরফে ওমর মবিন (৫২), তার পিএস মোহাম্মদ ইলিয়াস ওরফে নুর ইসলাম সরকার (৩৮) ও সাইফুল ইসলাম (৩০)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ওমর মবিনের নামে ছাপানো ভুয়া পরিচয়দানকারী কাস্টমস সহকারী কমিশনারের ১৮টি ভিজিটিং কার্ড, ৪টি ব্যাংকের চেকের পাতা, ৭টি মোবাইল ও ১৩টি বিভিন্ন অপারেটরের সিম কার্ড জব্দ করা হয়।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএসপি) সৈয়দা জান্নাত আরা বলেন, ‘প্রতারক চক্রের সদস্যরা কাস্টমস ইন্টেলিজেন্স ও কাস্টমস হাউজের জব্দকৃত স্বর্ণের বার নিলামের মাধ্যমে পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন ভুক্তভোগীর কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে আমরা জানতে পারি।’ তিনি  আরও বলেন, ‘প্রতারকদের মধ্যে খন্দকার ফারুক ওরফে ওমর মবিন নিজেকে কাস্টমস কমিশনার বলে পরিচয় দিতো। তার দুই সহযোগী ইলিয়াস ও সাইফুল কমিশনারের পিএস হিসেবে পরিচয় দিতো। তারা বিভিন্ন মানুষকে টার্গেট করে প্রথমে পিএসদের পাঠাতো। এরইমধ্যে কয়েকজন ভুক্তভোগী পাওয়া গেছে। যাদের কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা নিয়েছে এই চক্রটি।’

এসএসপি সৈয়দা জান্নাত আরা আরও বলেন, ‘গ্রেফতারের পর আসামি খন্দকার মো. ফারুক ওরফে মোবাইলে মৃণাল নামে এক ভুক্তভোগীর ফোন আসে। তাকে সিআইডি কার্যালয়ে ডাকলে তিনি প্রতারকদের শনাক্ত করেন। ভুক্তভোগী মৃণালের কাছ থেকেও প্রতারক ওমর মবিন কাস্টমস হাউজের স্বর্ণ কমদামে নিলামের মাধ্যমে পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ২৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।’

সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও  বলেন, ‘আসামির কাছ থেকে ৪০ কোটি টাকার চেক পাওয়া গেছে। জিজ্ঞাসাবাদে  ওমর মবিন জানায়, গত ৫ বছর আগে তিনি জামালপুরের এক এমপির পিএস হিসেবে কাজ করতো। সেখান থেকে চাকরি ছাড়ার পর প্রতারণার মাধ্যমে মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।’

কোন এমপির পিএস হিসেবে ছিল, জানতে চাইলে সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে ওই এমপির নাম বলা যাচ্ছে না। আমরা বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখছি। তবে ওই এমপি  এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত নন বলেও জানতে পেরেছি। এরপরও আমরা তদন্ত করে দেখব।’

ওমর মবিন কীভাবে ভুক্তভোগীদের বিশ্বাস অর্জন করতো, জানতে চাইলে সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতারক ওমর মবিন ভুক্তভোগীদের বলতো, আমরা কাস্টমসের লোক, স্বর্ণের বার আমরাই জব্দ করেছি, আমরা সব পারি। আমাদের অনেক ক্ষমতা। এসময় নিজের ভিজিটিং কার্ডও দিতো ভুক্তভোগীদের। সেখানে কাস্টমস কমিশনার ওমর মবিন নাম ব্যবহার করতো। এছাড়া তার পাসপোর্টে খন্দকার মো. ফারুক নাম দেওয়া আছে।’

আসামিদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় একটি মামলা করা হয়েছে জানিয়ে সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘মামলা (নম্বর-১৮)। ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।’ রিমান্ডের আদেশ পেলে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে আরও কিছু বের হয়ে আসবে বলেও জানান তিনি।

ভুক্তভোগী মৃণাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমাদের ৪০ লাখ টাকার সোনা আটক করে ঢাকা কাস্টমস হাউজ। সেই সোনা বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত আছে। তারা কীভাবে যেন সবকিছু জেনে যায়। এরপর প্রতারক ওমর মবিনের দুই পিএস আমার কাছে আসে। কাস্টমস হাউজের জব্দ সোনার বার নিলামের মাধ্যমে কমদামে দেওয়ার কথা বলে। মবিনের সঙ্গে কথা বলতে বলে। এরপর গত ৬ জানুয়ারি মবিন আমার কাছ থেকে ২৪ লাখ টাকা নেয়। সে আমাকে কাস্টমসের বেশ কিছু কাগজও দিয়েছিল। সিআইডি তাদের গ্রেফতার করে। আমি মবিনের মোবাইলে ফোন করলে সিআইডি আমাকে অফিসে ডাকে। পরে আমি সেখানে গিয়ে প্রতারকদের শনাক্ত করি।

সারাবাংলা/ইউজে/জেএএম/এমএন এইচ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর