বেরোবিতে দুইদিনে ১৩ শিক্ষার্থী আটক, সবাই মেধা তালিকার শীর্ষে
১০ জানুয়ারি ২০১৯ ২২:০৮
।। রাব্বী হাসান সবুজ, বেরোবি করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) ১ম বর্ষের পরীক্ষা, সাক্ষাৎকার এবং ভর্তি হতে এসে মোট ১৩ জন জালিয়াত শিক্ষার্থী আটক হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভর্তি হতে এসে চারজন, গত বুধবার সাক্ষাৎকার দিতে এসে ৮ জন এবং গত বছরের ২ ডিসেম্বর প্রক্সি পরীক্ষা দিতে এসে একজন আটক হয়।
আটককৃত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে পাবলিক পরীক্ষা আইনে মামলা করা হয়েছে। মামলা নম্বর ৭। সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান।
সারাবাংলার অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৩ জন আটক শিক্ষার্থীর সবাই মেধাতালিকার শীর্ষে। শিক্ষার্থীদের জালিয়াতি করার বিষয়টি শিক্ষকরা ধরে ফেলায় প্রশাসন তাদের সকলেরই ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে এবং পুলিশের হতে সোপর্দ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের দাবি ভর্তির পরেও যদি জালিয়াত শিক্ষার্থী থেকে থাকে তাহলে প্রশাসনের গোপন টিম তাদের বের করবে। এরইমধ্যে প্রশাসন জালিয়াত শিক্ষার্থী শনাক্তকরণের জন্য সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বুধবার কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সাক্ষাৎকার বোর্ড অনুষ্ঠিত হয় এবং ৮জন জালিয়াত শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ। আটককৃতদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার ভর্তি হতে এসে আরও ৪ জন শিক্ষার্থী আটক হয়। গত দুইদিনে আটককৃত ১২ জন জালিয়াত শিক্ষার্থী মেধাতালিকার একেবারেই শীর্ষে স্থান। তারা বিভিন্ন অনুষদের বিভিন্ন শিফটে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়সহ সকলেই ১ থেকে ১০ এর মধ্যে মেধা তালিকায় অবস্থান।
বুধবারের ৮জন আটককৃত শিক্ষার্থীদের তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার ৪ জন আটক শিক্ষার্থীরা হলেন, বি ইউনিটের দ্বিতীয় শিফটে মেধাতালিকায় ১ম স্থান অধিকারী চাঁপাইনবাবগঞ্জ শিবগঞ্জের আলতাফ হোসেনের ছেলে মাসুম হাসান (ইউনিট-বি, শিফট-২য়, রোল-২২০০১৭, মেধাক্রম- ১, বিভাগ- রাস্ট্রবিজ্ঞান), বিজ্ঞান অনুষদের ৪র্থ স্থান অধিকারী ময়মনসিংহ মুক্তাগাছার আবুল কাশেমের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান (ইউনিট- ডি, শিফট-২য়, রোল- ৪১৬৫২৪, মেধাক্রম ৪, রসায়ন বিভাগ), প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ১ম স্থান অধিকারী সিরাজগঞ্জ দেওরামারার সাইফুল ইসলামের ছেলের মাহিদুল ইসলাম মৃদুল (ইউনিট- ই, শিফট-৪র্থ, রোল- ৫১৫১৭১, মেধাক্রম ১, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ) এবং একই অনুষদের ৬ষ্ঠ স্থান অধিকারকারী টাঙ্গাইল বিশ্বাস বেতকার গ্রামের আব্দুস সোবহানের ছেলে রেজাউল করিম (ইউনিট- ই, শিফট-৪র্থ, রোল- ৫১৫১৭২, মেধাক্রম ৬, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ)। এদের চারজনকেই নিজ নিজ বিভাগে ভর্তির সময় জালিয়াত শিক্ষার্থী বলে চিহ্নিত করে প্রক্টরিয়্যাল বডির কাছে তুলে দেয় দায়িত্বরত শিক্ষকরা।
এছাড়া গত বুধবার প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদে ২য় স্থান অধিকারী নেত্রকোনার মোক্তারপাড়ার জুবায়ের আহমেদ রাকিন (ইউনিট- ই, শিফট-৪র্থ, রোল- ৫১৫১৯৭, মেধাক্রম ২, প্রাপ্ত নম্বর ৭৪.৪১), সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে নীলফামারী কিশোরগঞ্জের মারুফ হাসান নিথেল (ইউনিট- বি, শিফট-৪র্থ, রোল- ২৭১১৮৯, মেধাক্রম ১, প্রাপ্ত নম্বর ৭২.৭৮), গাজীপুর শ্রীপুরের রাকিবুল ইসলাম শান্ত (ইউনিট- বি, শিফট-২য়, রোল- ২১১৯৮৬, মেধাক্রম ২, প্রাপ্ত নম্বর ৭২.৮৭৫), গাজীপুর কাপাশিয়ার হাবিবুর রহমানের ছেলে এস.এম নাইম (ইউনিট- বি, শিফট ২য়, রোল- ২১৯৮৪৬, মেধাক্রম ৩, প্রাপ্ত নম্বর ৭২.৩২৫)। টাঙ্গাইল সদরের শোয়েব হাসান (ইউনিট- বি, শিফট-৪র্থ, রোল- ২৪৬৮৫০, মেধাক্রম ৬, প্রাপ্ত নম্বর ৬৯.৬৫৫), টাঙ্গাইলের গোডাউন বাজারের শাহরিয়ার ইসলাম স¤পদ (ইউনিট- বি, শিফট-২য়, রোল- ২২০২০০, মেধাক্রম ৯, প্রাপ্ত নম্বর ৬৭.৮), শেরপুরের মধ্য শ্রেরীর রাহাত মজুমদার রাফি (ইউনিট- বি, শিফট-৪র্থ, রোল- ২৪৭৬৬০, মেধাক্রম ৩৮, প্রাপ্ত নম্বর ৬৩.৯৮৫)। ঠাকুরগাঁও’র গোয়ালপাড়ার খাইরুল আহমেদের ছেলে শাফিন আহমেদ (ইউনিট- এফ, শিফট-৪, রোল- ৬৭০৩৮৪, মেধাক্রম ২, প্রাপ্ত নম্বর ৬৬.০২)।
এর আগে গত ২ ডিসেম্বর প্রক্সি পরীক্ষা দিতে এসে শরিয়তপুর জেলার ঘোষেরহাট থানার হাটরিয়া গ্রামের আব্দুল জলিলের পুত্র শফিকুল ইসলামকে আটক করে পুলিশ। আটককৃত শিক্ষার্থীকে এক বছরের কারাদন্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি প্রক্টর এইচ.এম. তারিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, আটককৃত সকলেই মেধাতালিকার শীর্ষে। আমরা আশঙ্কা করছি বড় একটি চক্র কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। বুধবারের আটককৃতদের তথ্য অনুযায়ী আরও ৪ জনকে আটক করেছি। আমরা আমাদের জালিয়াত ধরার কার্যক্রম চালিয়ে যাব।
প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, আটককৃত শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষায় সময় তারা কেউ অংশগ্রহণ করেনি। তাদের পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের বদল প্রক্সির মাধ্যমে মূল এক্সপার্ট পরীক্ষা দেয়। এতে করে তাঁরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেই মেধা তালিকার স্থান করে নেয় এসব শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক একে.এম ফরিদ-উল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, এবারের ভর্তি পরীক্ষায় খুব গুরুত্বের সাথে জালিয়াত ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে এরই ধারাবাহিকতায় গত দুই দিনে মোট ১২ জনকে আটক করা হয়েছে। অনেক বড় একটি চক্র এখানে কাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
সারাবাংলা/একে