প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত
১৩ জানুয়ারি ২০১৯ ১৬:২৭
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শ্রমিকদের কয়েকটি গ্রেডে আশানুরূপ মজুরি না বাড়ায় পোশাক খাতে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার গ্রেডগুলোর সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুন্নজান সুফিয়ান। রোববার (১৩ জানুয়ারি) বিকেলে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রতিমন্ত্রী মুন্নজান সুফিয়ান এ ঘোষণা দেন।
এর আগে সেখানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশীসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভা শেষে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি গার্মেন্ট শিল্প। এ খাতে শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণের বিষয়ে বিবেচনা করতে সরকার দ্রুত ত্রিপক্ষীয় মজুরি সমন্বয় কমিটি গঠন করে। কমিটি পক্ষ থেকে সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে সবপক্ষের সুবিধাজনক অবস্থা বজায় রেখে উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজা হয়েছে।’
শ্রম প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে শ্রমিকদের স্বার্থে ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেডে মজুরি সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’ তিনি বলেন, ‘শ্রমিকবান্ধব সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেডের সঙ্গে ১ ও ২ নম্বর গ্রেডের মজুরি সমন্বয়ের নির্দেশ দেন। ফলে প্রতিটি গ্রেডেই মজুরি যৌক্তিকহারে বেড়েছে। সব পক্ষের সহযোগিতায় কমিটি সন্তোষজনক সমাধানের পথে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। দেশের তৈরি পোশাক শিল্পে উন্নয়নে শ্রমিকরা আজকের মধ্যেই কাজে যোগ দেবেন বলে আশা করছে সরকার।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘উদ্ভুত পরিস্থিতির জন্য বিজিএমইএ, বিকেএমইএ সদস্য ও এর বাইরে বন্ধ করে দেওয়া সব কারখানা খুলে দেওয়া হবে বলে মালিকপক্ষ ঘোষণা দিয়েছেন।’
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৬ নভেম্বর পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে সরকার।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ন্যূনতম মজুরি ১৬ হাজার টাকার দাবিতে দীর্ঘ পাঁচ বছর গার্মেন্ট শ্রমিকদের আন্দোলনের পর এই সেক্টরের শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোর যে ঘোষণা দেওয়া হয়। সেই অনুযয়ী ২০১৮ সালের নভেম্বরে বেতনের নতুন গ্রেড নির্ধারণ করা হয়। নতুন গ্রেডের ৩, ৪, ৫ এ বৈষম্য দেখা দেয়। এ নিয়ে দীর্ঘ এক মাস ধরে শ্রমিকরা আন্দোলন করে আসছেন। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি জানার পর এই ৩, ৪,ও ৫ গ্রেডের সঙ্গে ১, ২ গ্রেডও সমন্বয় করতে নির্দেশ দেন।
২০১৩ সালে নতুন মজুরি ঘোষণা হওয়ার পর তা কার্যকর হয় ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে। প্রজ্ঞাপনের শর্তানুযায়ী ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে প্রতিবছর ক্রমবর্ধমান হারে শ্রমিকরা ৫ শতাংশ বর্ধিত হারে মূল মজুরি পাওয়ার কথা। তখন ১ নং গ্রেডের শ্রমিকদের বেসিক মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮ হাজার ৫০০ টাকা।
সেই হিসাবে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত শ্রমিকরা পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ৫ শতাংশ বৃদ্ধিতে মূল মজুরি পাবেন। ২০১৫ সালে ৮ হাজার ৫০০ টাকার সঙ্গে ৫ শতাংশ যোগ করে মূল বেতন দাঁড়ায় ৮ হাজার ৯২৫ টাকা। ২০১৬ সালে ৮ হাজার ৯২৫ টাকার সঙ্গে ৫ শতাংশ যোগ করে বেসিক দাঁড়ায় ৯ হাজার ৩৭১ টাকা। ২০১৭ সালে ৯ হাজার ৩৭১ টাকার সঙ্গে ৫ শতাংশ যোগ করে মূল বেতন দাঁড়ায় ৯ হাজার ৮৩৯ টাকা।
২০১৮ সালে ৯ হাজার ৮৩৯ টাকার সঙ্গে ৫ শতাংশ যোগ করে মূল বেতন দাঁড়ায় ১০ হাজার ৩৩১ টাকা। ২০১৯ সালে ১০ হাজার ৩৩১ টাকার সঙ্গে ৫ শতাংশ যোগ করে মূল বেতন দাঁড়ায় ১০ হাজার ৮৪৮ টাকা।
এই হিসাবে দেখা যাচ্ছে, আগের কাঠামো অনুযায়ীই ১নং গ্রেডের প্রতি শ্রমিকের ২০১৯ সালে মূল মজুরি হওয়ার কথা ১০ হাজার ৮৪৮ টাকা। কিন্তু নতুন ঘোষিত মজুরি কাঠামোতে দেখা যাচ্ছে তাদের মূল বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হাজার ৪৪০ টাকা! সুতরাং প্রকৃতপক্ষে ৫ বছরের পুরনো শ্রমিক, যার মূল বেতনের ইনক্রিমেন্ট হয়েছিল তিনি এখন আগের কাঠামোতেই যে মূল বেতনটা পেতেন তার চেয়েও ৪০৮ টাকা কম পাবেন।
উল্লেখ্য, নতুন মজুরি কাঠামো অনুযায়ী বেতন পরিশোধের দাবিতে গত ৭ জানুয়ারি থেকে আন্দোলন করে আসছেন রাজধানী ঢাকা ও আশেপাশের এলাকার পোশাক শ্রমিকরা। এক সপ্তাহের টানা আন্দোলনের ফলে পোশাক শিল্পে অচলাবস্থা তৈরি হয়। কোথাও কোথাও পোশাক শ্রমিকদের পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি বিজিবিও মোতায়েন করা হয়।
শ্রমিকদের দাবি পূরণের বিষয়ে শ্রম মন্ত্রণালয়ে দফায় দফায় বৈঠক করা হয়।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/ইউজে/একে/ এমএনএইচ