Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হলে বোরকা গায়ে দিয়ে পড়বে’


১৩ জানুয়ারি ২০১৯ ২১:২৯

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

চট্টগ্রাম ব্যুরো: নারীশিক্ষা নিয়ে দেওয়া বক্তব্য বিকৃতভাবে প্রচারের অভিযোগ এনে গণমাধ্যমে আরেকটি ব্যাখা পাঠিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমির আহমদ শফী। দ্বিতীয় দফায় পাঠানো এই ব্যাখায় তিনি বলেছেন, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হলে মেয়েরা বোরকা গায়ে দিয়ে পড়বে এবং তাদের শিক্ষক নারী হতে হবে।

রোববার (১৩ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় হেফাজত আমিরের সই করা ব্যাখা বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। হেফাজত আমির যে মাদ্রাসার পরিচালক, সেই মাদ্রাসার মুখপত্র হিসেবে পরিচিত মাসিক মুঈনুল ইসলাম পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সরওয়ার কামাল এই ব্যাখা পাঠানোর বিষয়টি সারাবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।

ব্যাখার শেষ অংশে এতদিন ধরে দেওয়া বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে আহমদ শফী বলেন, ‘আমার কথার সারাংশ হলো— উচ্চশিক্ষা কিংবা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়তে চাইলে বোরকা গায়ে দিয়ে পড়বে এবং তাদের শিক্ষকও মহিলা হবে।’

এর আগে, শুক্রবার জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার ১১৮তম মাহফিলে আহমদ শফীর দেওয়া একটি বক্তব্য ভিডিওসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সেখানে বলা হয়, মেয়েদের স্কুল-কলেজে না দিতে এবং দিলেও সর্বোচ্চ ক্লাস ফোর বা ফাইভ পর্যন্ত পড়ানোর জন্য ওয়াদা করিয়েছেন আহমদ শফী।

এই বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা শুরুর পর শনিবার গণমাধ্যমে একটি ব্যাখা পাঠান আহমদ শফী। এতে তিনি তার বক্তব্য বিভিন্ন মিডিয়ায় ভুল ও খণ্ডিতভাবে উপস্থাপনের দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘ইসলামের একটি মৌলিক বিধান হচ্ছে পর্দা। নারীদের পর্দার বিষয় ইসলামে সুস্পষ্ট নীতিমালা রয়েছে। আমি আমার বক্তব্যে বলতে চেয়েছি, শিক্ষা গ্রহণ করতে গিয়ে যেন পর্দার বিধান লঙ্ঘন করা না হয়। কারণ আমাদের দেশের বেশিরভাগ সাধারণ শিক্ষাকেন্দ্রে সহশিক্ষা দেওয়া হয়। অর্থাৎ ছেলে-মেয়ে একইসঙ্গে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে। এতে পর্দার লঙ্ঘন হয়। আমি মূলত এই সহশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রেই মানুষকে সতর্ক করতে চেয়েছি।’

এই বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশের পর আবারও সমালোচনা শুরু হলে রোববার সন্ধ্যায় আরেকটি ব্যাখা পাঠিয়ে কারও বক্তব্যকে বিকৃত করে প্রচার না করার অনুরোধ করেন হেফাজতে ইসলামের আমির আহমদ শফী। কেননা এতে সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয় এবং ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।

শফীর দাবি, একটি মহল তাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি লিখেছেন, ‘একটি মহল আমাকে বিতর্কিত করতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে। আমাকে নারীবিদ্বেষী, নারীশিক্ষাবিরোধী হিসেবে উপস্থাপন করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। আমি এসব কথার জবাব দিয়েছি। জবাবটি ভালোভাবে পড়ুন এবং বোঝার চেষ্টা করুন। মিথ্যাচার করবেন না।’

আহমদ শফী বলেন, কারও বক্তব্যের ব্যাখা দিতে হলে আপনাকে তার কথা বুঝতে হবে, অনুধাবন করতে হবে। না বুঝে নিজের মতো করে ব্যাখা দাঁড় করানো একধরনের অপরাধ। আর খণ্ডিত বক্তব্যকে নিজের মতো স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা আরও বড় অপরাধ। কোনো কিছু লিখতে চাইলে সুস্থ মস্তিস্কে চিন্তাশীল হয়ে সঠিক কথাটি লিখবেন।

তিনি বলেন, আমি আবারও বলছি, নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশে শিক্ষার ব্যবস্থা করুন এবং তাদের জীবন ও ইজ্জতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। কেউ কারও কন্যাকে অনিরাপদ পরিবেশের দিকে ঠেলে দিতে পারে না।

‘কারণ দৈনিক পত্রিকা খুললেই প্রতিদিন চোখে পড়ছে কোথাও না কোথাও কোনো নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে অথবা খুন করা হয়েছে। নৈতিকতা অর্জন না হলে ধর্ষণ, খুন ও উত্ত্যক্তকরণ বন্ধ হবে না। নারীর প্রতি বৈষম্য দূর হবে না। ইসলামই ফিরিয়ে দিয়েছে নারীর প্রকৃত সম্মান,’— বলেন আহমদ শফী।

তিনি আরও বলেন, কেউ কেউ আমার খণ্ডিত বক্তব্যকে ভুলভাবে প্রচার করে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা চালাচ্ছে। এসব হীন কাজ করবেন না। কারও বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করবেন না।

এর আগে, আহমদ শফী’র প্রথম দফা বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘এটা হেফাজত আমিরের ব্যক্তিগত অভিমত। তবে এই অভিমত রাষ্ট্রীয় নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’ হেফাজত আমীরের বক্তব্য রাষ্ট্রীয় নীতিতে অন্তর্ভুক্ত বা প্রতিফলিত হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এছাড়া, হেফাজত আমীরের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছেন দেশের নারীনেত্রীসহ বিশিষ্টজনেরাও। বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও প্রতিবাদ এসেছে।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

আহমদ শফী হেফাজতে ইসলাম হেফাজতে ইসলামের আমির


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর