‘টিসি দিক, নইলে ঢাকা শহর ছেড়ে চলে যাব’
১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ১৭:০০
।। উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: ‘সারাদেশে বই উৎসবের পর সবাই নিয়মিত ক্লাস করছে। অথচ আমার মেয়ে এখনো কোথাও ভর্তিই হতে পারল না। মেয়ের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাচ্ছে ,বুঝতে পারছি না। ওই স্কুল যদি না হয়, তাহলে কোন স্কুলে ভর্তি করার অনুমতি দেবে, সেটাই করুক। এভাবে ঝুলিয়ে রেখেছে কেন? এক মেয়েকে হারিয়েছি আরেকজনের শিক্ষাজীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। আমি এই স্কুলে মেয়েকে পড়াব না, টিসি দিয়ে দিক, মেয়েকে অন্য স্কুলে ভর্তি করাব। আর যদি টিসি দিতে না চায়, তাহলে ঢাকা শহর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হব। থাকব না এই শহরে।’ বুধবার (১৬ জানুয়ারি) সারাবাংলার এই প্রতিবেদকের কাছে এভাবেই আক্ষেপ-ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের আত্মহত্যাকারী শিক্ষার্থী অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী ।
ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার পর তার অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া ছোটবোন ঐন্দ্রিলা অধিকারীর শিক্ষাজীবন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন দিলীপ অধিকারী দম্পত্তি।
বাবা দিলীপ অধিকারী বলেন, ‘ঐন্দ্রিলা একই স্কুলে সপ্তম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু এখনো সে ভর্তি হতে পারেনি। সেও বোনের মতো মেধাবী। পঞ্চম শ্রেণিতে এ প্লাস পেয়েছে। ক্লাসেও সে অনেক ভালো করেছে। সে স্কুলে যেতে পারছে না। বাসায় বসে শুধুই কান্নাকাটি করছে। মনমরা হয়ে মায়ের সঙ্গে থাকছে। বড় মেয়েকে হারিয়ে আমরা সবাই এখনো নির্বাক। পরিবারে আনন্দ বলতে কিছু নেই। এখন এই মেয়েও যদি এ রকম একা মনমরা হয়ে থাকতে থাকতে কিছু করে বসে, দিনরাত এই দুশ্চিন্তাতেই আছি।’
আরও পড়ুন: আদরের বিড়াল, ভালোবাসার গিটার সবই আছে, ঘরজুড়ে তবুও শূন্যতা
দিলীপ অধিকারী বলেন, ‘অরিত্রী আত্মহত্যার পর আমরা সিদ্ধান্ত নেই ওই স্কুলে আর ছোট মেয়েকে পড়াব না। তাকে যেন কেউ বিরক্ত না করে। কারণ স্কুলের অনেকেই তাকে চেনে। তাকে চিনতে না পারে এমন কোনো স্কুলে তাকে ভর্তি করানোর সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্তের কথা মন্ত্রণালয় ও বোর্ড গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যদেরও বিষয়টি জানানো হয়।সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেয়েকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে টিসি নিয়ে ঢাকার অন্য কোনো স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য গত ৯ ডিসেম্বর ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চোয়ারম্যান বরাবর একটি আবেদন করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই আবেদনে লিখেছি, অরিত্রী আত্মহত্যার পর বাবা-মা ও ছোট মেয়ে সবাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি। মেয়েকে ভিকারুননিসা নূন স্কুলে আর পড়াব না সিদ্ধান্ত নেই। মেয়ে ঐন্দ্রিলাও আগের মতো ওই স্কুলে গিয়ে পড়তে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে না। ছোট মেয়ে বলে, সেখানে ভালো লাগবে না। আগে আপুর সঙ্গে একই সঙ্গে যাতায়াত করত। এখন তা হবে না। আবার অনেক বান্ধবী আপুর বিষয়ে সারাক্ষণ এটা-সেটা জানতে চাইবে। নানা দিক বিবেচনায় ভিকারুননিসা নূন স্কুলে তাকে অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি না করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
দিলীপ অধিকারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করার পর চেয়ারম্যান মহোদয় সেটি ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ বরাবর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাঠান। কিন্তু এক মাস পার হলেও এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আবেদনের পর মন্ত্রণালয়- শিক্ষা বোর্ড সবখানেই যাই । কিন্ত কোনো কাজ হয়নি।’ তিনি অভিযোগের সুরে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ে সব সময় যাওয়ার অনুমতি পাওয়া যায় না। আর ফোন করলে বলা হয়, এটা তো শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে বলে দেওয়া হয়েছে। আপনি সেখানে যোগাযোগ করুন। আবার শিক্ষা বোর্ডে গেলে বলা হয়, এ বিষয়ে তো অধ্যক্ষকে বলা হয়েছে। সবশেষ গত রোববার (১৩ জানুয়ারি) শিক্ষা বোর্ডে গেলে বলা হয়, যে স্কুল ভর্তি করাতে চেয়েছেন সেটি হবে না। ওখানে দেওয়া যাবে না। দেখি কোথায় দেওয়া যায়।’
অরিত্রীর বাবা বলেন, ‘আমি শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এই সমস্যা থেকে মুক্তি চাই।’
এ বিষয়ে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হকের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন ধরেননি।
একই বিষয়ে জানতে চাইলে বোর্ডের উপসচিব (প্রশাসন ও সংস্থাপন) খলিলুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আরেকটু চেয়ারম্যান স্যারের সঙ্গে কথা বলে নিতে হবে।’ আসলে কী অবস্থায় আছে ঠিক জানা নেই বলেও তিনি জানান।
সারাবাংলা/ইউজে/জেডএফ/এমএনএইচ
আরও পড়ুন-
ক্ষমা চাইলেন ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ
শান্তিনগরে ভিকারুননিসা শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে: শিক্ষামন্ত্রী
ভিকারুননিসার শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, তদন্তে ৩ কমিটি
ভিকারুননিসার প্রভাতী শাখার প্রধান শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত
শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ
বুধবার ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের
অরিত্রীকে আমরা ভুলে যাব
শিক্ষার্থীদের মানসিকতা আমরা বুঝছি না