নারায়ণগঞ্জে ফেরি চলাচলে অব্যবস্থাপনা, দুর্ভোগে বন্দরবাসী
১৭ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৫৪
।। আশিকুর রহমান হান্নান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট।।
নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর দুই ঘাটে ফেরি চালুর সংবাদ ছিল গত বছর শহর ও বন্দরবাসীর জন্য সবচেয়ে আনন্দের ও স্বস্তির। তবে বছরান্তে সেই আনন্দ অনেকটাই ফিকে হয়ে এসেছে। ফেরি থাকলেও তার ব্যবস্থাপনা নিয়ে এখনো ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।
হাজীগঞ্জ থেকে নবীগঞ্জ ফেরি ঘাট কিংবা নগরীর ৫নং ঘাটে ফেরি চলাচলের অব্যবস্থাপনায় ত্যক্ত-বিরক্ত দুই পাড়ের মানুষ। ফেরির জন্য অপেক্ষা করতে করতে কর্মঘণ্টা অপচয়ের ভয়ে অনেকেই বিকল্প পথে নৌকাযোগে নদী পারাপার হচ্ছেন।
তবে অনেকে ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়ে মালামাল এবং পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তীর্থের কাকের মত বসে থাকেন। ফেরি আসলেও বসে থাকতে হয় দীর্ঘক্ষণ।
হাজীগঞ্জ ঘাটে ফেরির জন্য অপেক্ষা করা যাত্রীরা জানান, হাজীগঞ্জ থেকে নবীগঞ্জ ঘাটে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য তিনটি ফেরি রাখা আছে। সংখ্যায় তিনটি হলেও কার্যত চলাচল করে একটি। তাও সেটিকে নানা অজুহাতে দীর্ঘক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখা হয়।
ভারি যানবাহন, মালামাল নিয়ে মানুষের দীর্ঘ লাইন থাকলেও সেটি ছাড়তে নানা তালবাহানা করা হয়। এপাড় থেকে ওপাড়ে গিয়ে আবারও সেই একই ঘটনা। মানুষের দুর্ভোগ এরা আমলেই নিতে চান না।
জানা গেছে, ফেরির টোল আদায়ের হার ট্রেইলার গাড়িতে ৩৭৫ টাকা, হেভি ট্রাক ৩০০ টাকা, মিডিয়াম ট্রাক ১৫ টাকা, বড় বাস ১৩৫ টাকা, মিনি বাস ১১৫ টাকা, কৃষি কাজে ব্যবহৃত যান ৯০ টাকা, মিনিবাস ৭৫ টাকা, মাইক্রোবাস ৬০ টাকা, ফোর হুইল চালিত যানবাহন ৬০ টাকা, সিডান কার ৪০ টাকা, ৩/৪ চাকার মোটরাইজড যান ১৫ টাকা, মটর সাইকেল ১০ টাকা, রিকশাভ্যান, রিকশা, বাইসাইকেল, ঠেলাগাড়ি ৫ টাকা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, হাজীগঞ্জ-নবীগঞ্জ ঘাটে দুই পাড়েই যানবাহন ও মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। প্রতিবার ফেরিতে ৬-৭টা বড় গাড়ি উঠে। সঙ্গে ভ্যান, রিকশা মোটরসাইকেল তো আছেই। প্রতিবারে পারাপারে ৭০০-৮০০ টাকা উপার্জন হচ্ছে।
একটি ফেরিতে দিনে উপার্জন প্রায় ২৬-২৮ হাজার টাকা। ফেরির একজন কর্মচারী জানান, ফেরিতে ১ দিনে তেল বাবদ খরচ হয় ৬ হাজার ৫০০ টাকা।
যাত্রীরা জানান, সকালের ৭ থেকে ৯টা পর্যন্ত অনেক যাত্রী যাতায়াত করে। কিন্তু সে সময় ফেরি চালু হয় না। যাতায়াত করার জন্য নৌকাই এখনো তাদের একমাত্র ভরসা।
ফেরির চালক বিল্লালের দাবি, দেরি করে ছাড়ার কারণ গাড়ি কম। ফেরি পরিপূর্ণ না হলে ফেরি চালানো যায় না। তেলের অনেক খরচ বেশি, পোষায় না। এই ফেরি দিনে ৩০-৩৫ বার পারাপার করে।
সুপারভাইজার হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, ফেরিতে গাড়ি হলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে ফেরি ছেড়ে দেই। আবার দেখা গেছে রোগী থাকলে আমরা ছেড়ে দেই।
তিনি জানান, নির্বাচনের দুই দিন আগে ও পরে দুইটি ফেরি চালু ছিল।
তবে ফেরির জন্য নবীগঞ্জ ঘাটে থাকা ওবায়দুল জানান, পৌনে একঘণ্টা পর ফেরি ঘাটে পৌঁছাল। ফেরির সামনের রাস্তাটা (র্যাম্প) ভাঙা থাকায় যানবাহন আসা কমে গেছে। তবে এগুলো দেখার লোক নেই। আর এর ছুতোয় সব মানুষের ভোগান্তি।
নগরীর ৫নং ঘাটে ফেরিতে চলাচলেও নানা দুর্ভোগ আর বিড়ম্বনায় নৌকাতে চলাচলই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন দুই পাড়ের মানুষ। দুই পাড়ের মানুষের ফেরিতে চলাচল সাবলীল করতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও বারবার উপেক্ষিতই থাকছেন যাত্রীরা।
সারাবাংলা/একে