Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকা কাস্টমস হাউসে ভাঙচুরের নেপথ্যে


১৭ জানুয়ারি ২০১৯ ২১:১৩

।। শেখ জাহিদুজ্জামান,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রাধীন ঢাকা কাস্টমস হাউসের যুগ্ম-কমিশনারের হাতে গত সোমবার এক সিএন্ডএফ মালিক প্রহারের শিকার হন বলে গুঞ্জন ওঠে। আর এ ঘটনায় টানা ৫ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকতে হয় ঢাকা কাস্টমস হাউসের সকল কর্মকর্তাদের। ভাঙচুর করা হয় কাস্টমস হাউসের কয়েকটি কক্ষ। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকা কাস্টমস হাউসে মোতায়েন করা হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য।

বিজ্ঞাপন

অতঃপর ঘটনার মূলোৎপাটনে ওই দিন (সোমবার) ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত জরুরি আলোচনায় বসে ঢাকা কাস্টমস হাউসের কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ঢাকা কাস্টমসের সিএন্ডএফ এজেন্টের নেতাকর্মীরা। দীর্ঘ ৩ ঘণ্টার বৈঠকে মূল ঘটনা উৎঘাটনে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কাস্টমস। একইসঙ্গে ঢাকা কাস্টমস হাউসের কমিশনার মান্নান শিকদার দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে অবরুদ্ধ থেকে ‍মুক্তি পান কাস্টমস কর্মকর্তারা।

এদিকে সারাবাংলার অনুসন্ধানে জানা গেছে, জালিয়াতি করতে গিয়ে ধরা পড়ে বারি এন্টারপ্রাইজের মালিক আনিসুর রহমান। তিনি আশা ট্রেডিংয়ের নামে সাবমিট হওয়া বিল অব এন্ট্রির পণ্য খালাস করছিলেন। কিন্তু আশা ট্রেডিংয়ের নামে সাবমিট হওয়া বিল অব এন্ট্রির পণ্য শুধুমাত্র আশা ট্রেডিংই খালাস করতে পারবে। এমনকি আশা ট্রেডিংয়ের প্রতিনিধিও নন বারি এন্টারপ্রাইজ। সুতরাং এখানে অন্য প্রতিষ্ঠানের নামে বিল অব এন্ট্রি দাখিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে আশা ট্রেডিংয়ের নামে সাবমিট হওয়া বিল অব এন্ট্রিতে দেখানো হয়েছে, ব্যাংকের এটিএম কার্ড আমদানি করা হয়েছে। যেখানে ৫ হাজার কার্ড দেখানো হয়েছে। আর এই কার্ড বিল অব এন্ট্রিতে চিপ ছাড়া দেখিয়ে শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। যা কাস্টমসের তৎপরতায় ধরা পড়ে। যেখানে আমদানিকৃত কার্ডে চিপ রয়েছে। ফলে আমদানিকৃত ৫ হাজার কার্ডে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টাকার শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আর এই ফাঁকি উৎঘাটন করে ভুয়া আশা ট্রেডিংয়ের সিএন্ডএফ (আসলে বারি এন্টার প্রাইজের মালিক) আনিসুর রহমানকে তলব করে ঢাকা কাস্টমস হাউসের যুগ্ম-কমিশনার মাহবুবুর রহমান। এ সময় তিনি সিএন্ডএফ মালিককে প্রতারণার কারণ জানতে চান এবং তার আইডি কার্ড (নম্বর ০৩২৭৬৪) জব্দ করেন। এ সময় ভুয়া সিএন্ডএফ মালিক আনিসুর রহমান নিজের অপরাধ স্বীকার করে একটি লিখিত দেন। সেখানে বিবৃতিতে তিনি নিজের ভুল স্বীকার করেন এবং ফাঁকিকৃত রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

অনুসন্ধানে আরও জানা গিয়েছে, এর আগে ১০ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ডায়নামিক ট্রেডার্স একইভাবে পণ্যের নমুনা জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারের ৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়। সেই জালিয়াতি ১৩ জানুয়ারি রোববার যুগ্ম-কমিশনার মাহবুবুর রহমান ধরে ফেলেন। আর সেই দিনই ডায়নামিক ট্রেডার্সের মালিক ফাঁকিকৃত রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা দেন। একইভাবে গত সপ্তাহে পণ্যের নমুনা জালিয়াতির মাধ্যমে নূর কার্গো সরকারের প্রায় ১৫ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়। আর সেই ফাঁকিও উৎঘাটন করেন এই কাস্টমস কর্মকর্তা।

ঢাকা কাস্টমস হাউস বলছে, জালিয়াতির ঘটনায় ধরা পড়ে কতিপয় ব্যক্তি কাস্টমস কর্মকর্তা কর্তৃক লাঞ্ছিতের গুজব রটানো হয়েছে। এরপর ক্ষুব্ধ সিএন্ডএফ মালিক ও কর্মচারীরা মিলে কাস্টমস হাউসে ভাঙচুর করে এবং কাস্টমস কর্মকর্তাদের দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন।

সরকারের রাজস্ব ফাঁকি এবং কাস্টমস হাউসের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার বিষয়ে বারি এন্টারপ্রাইজের মালিক আনিসুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি ভুল করেছি। সেই হিসেবে আইন অনুযায়ী আমার লাইসেন্স বাতিল এবং জরিমানা হতে পারে। কিন্তু কোনো কাস্টমস কর্মকর্তার গায়ে হাত তোলার অধিকার নেই।’

আসলে কি আপনাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে নাকি গুজব রটানো হয়েছে এই প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এদিকে এই ঘটনায় ঢাকা কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশিনের বন্দর সম্পাদক আলমগীর হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘কেউ জালিয়াতি বা দুর্নীতি করলে কাস্টমস তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। তাই বলে লাঞ্ছিত করতে পারে না। তাই আমরা এই কর্মকর্তার অপসারণ চাই। আমরা সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা করতে চাই। এজন্য আমরা ঢাকা কাস্টমস হাউসের কমিশনারকে বিষয়টি অবহিত করেছি।’

কাস্টমস হাউসে ভাঙচুর এবং জালিয়াতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সেদিন কে বা কারা ভাঙচুর করেছে সেটি আমরা জানি না। তবে কয়েকটি কক্ষের গ্লাস ভাঙচুর করা হয়। আমরা পরবর্তীতে সেগুলো রিপিয়ারও করে দিয়েছি। এছাড়া এই হামলা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়, এ জন্য আমরা লজ্জিত। আর যিনি জালিয়াতি করেছেন অবশ্যই তার সাজা হবে।’

কাস্টমস হাউসের অপ্রীতিকর এই ঘটনার বিষয়ে ঢাকা কাস্টমস হাউসের কমিশনার আব্দুল মান্নান শিকদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘সেদিন জালিয়াতি ধরা পড়ায় তারা নিজেরা বাঁচতে গুজব রটিয়ে ছিল। আমরা যে তদন্ত কমিটি করেছি সেই তদন্ত প্রতিবেদনে জালিয়াতির বিষয়টি উঠে এসেছে। আর সিএন্ডএফ কর্মকর্তার লাঞ্ছিতের বিষয়টি মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। সেদিন সিএন্ডএফ কর্মকর্তার আইডি কার্ড জব্দ করা হয়েছিল তাকে লাঞ্ছিত করা হয়নি। ফলে জালিয়াতির ঘটনা এবং গুজব রটিয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য দোষীদের বিরুদ্ধে কাস্টমস আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।

এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা কাস্টমস হাউসের ঘটনাটির বিষয়ে আমি অবগত। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই তদন্তের প্রতিবেদন আমি পাওয়ার পর দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সারাবাংলা/এসজে/একে

ঢাকা কাস্টমস হাউস

বিজ্ঞাপন

মানুষের হিংস্রতা কেন বাড়ছে?
২৪ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:৪১

আরো

সম্পর্কিত খবর