জনগণের এই রায় দুর্নীতি-মাদক-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে: প্রধানমন্ত্রী
১৯ জানুয়ারি ২০১৯ ১৯:৫১
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: বিজয় পাওয়া যত কঠিন, রক্ষা করে জনগণের সেবা করা আরও কঠিন বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সেই কঠিন দায়িত্ব আমরা পেয়েছি, এটা সর্বান্তকরণে পালন করতে হবে। জনগণ যে রায় দিয়েছে, সেই রায় হচ্ছে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রায়। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে।’ শরিবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের বিজয় সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অব্যাহত অগ্রযাত্রায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনন্য সাফল্যে বিশাল বিজয় সমাবেশের আয়োজন করে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন হয় দলটি।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে সংস্কৃতি অঙ্গনের জনপ্রিয় শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন। বিজয় সমাবেশে দলীয় নেতাকর্মীরা শিল্পীদের বিভিন্ন পরিবেশনায় নাচে-গানে আনন্দে মেতে ওঠেন। এছাড়া মহানগর যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা লাল-সবুজ রঙের ক্যাপ-গেঞ্জি ও দলীয় পতাকায় নতুন মাত্রা পায় বিজয় উৎসব।
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দেওয়ার কারণে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী, নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্টসহ দলের তৃণমূলের সব নেতাকর্মীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আরও পড়ুন: ‘বাংলার বাতিঘর আপনাকে অভিবাদন’
নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে নির্বাচনকে অর্থবহ করেছে। জয়-পরাজয় একটা নির্বাচনে স্বাভাবিক ব্যাপার। আমি এটুকুই তাদের বলতে চাই, আওয়ামী লীগ নৌকা মার্কায় ভোট পেয়ে জয় পেয়েছে, এটা সত্য কিন্তু যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতে এসেছে, যখন দায়িত্ব পেয়েছি জনগণের সেবা করার, যখন দায়িত্ব পেয়েছি মানুষের জন্য কাজ করার; তখন আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি, দল-মত নির্বিশেষে সবার জন্যই আমাদের সরকার কাজ করে যাবে। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আর্থসামাজিক উন্নয়নে কাজ করতে হবে। রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে। প্রতিটি মানুষের জীবনমান উন্নত করবো, সেখানে কোনো দল বা মত দেখা হবে না। প্রতিটি মানুষ আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সেবা করার দায়িত্ব জনগণ আমাদের দিয়েছে। কাজেই যারা ভোট দিয়েছেন বা যারা ভোট দেননি, সবার প্রতিই আমি ধন্যবাদ জানিয়ে এইটুকু বলবো, আমরা সকলের তরে, সকলের জন্য কাজ করবো।’
একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচনি ইশতেহারের অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই নির্বাচনি ইশতেহারের পক্ষে জনগণ রায় দিয়েছে। জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত ভোট দিয়েছে। সেই ভোটের সস্মান যেন থাকে, অবশ্যই আমরা সেই বিষয়টা সবসময় মাথায় রেখে সার্বিকভাবে সুষম উন্নয়ন করে যাব। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাই, জনগণ রায় দিয়েছে, তা শান্তি ও উন্নয়নের পক্ষে, তারা শান্তি চায়, উন্নয়ন চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচিত প্রতিনিধি যারা, দেশের মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা সে আকাঙ্ক্ষা পূরণ করা এটা আমাদের কর্তব্য।’
আওয়ামী লীগ ওয়াদা অনুযায়ী ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসাবে গড়ে তোলা হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণের এই রায় ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার রায়। অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রার রায়। ’
দেশ ও দেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন সমাজ গড়ে তুলতে চান দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলেছি। আরও আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। জনগণের এই রায় হচ্ছে, সেই আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার পক্ষে রায়। এই রায় হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পক্ষে রায়। কারণ মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রতি জনগণ এবার স্বতঃস্ফূর্তভাবে রায় দিয়েছে।’
আরও পড়ুন: জনগণ এবার স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলার মাটিতে স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের কোনো স্থান হবে না হুঁশিয়ারি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুর্নীতিবাজ, জঙ্গিবাদ, মাদক সন্ত্রাসের স্থান হবে না, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে উঠবে।’ তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়ে তেলার লক্ষ্যে মানুষ রায় দিয়েছে। আমরা এই দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে তুলব। এটাই হচ্ছে আমাদের অঙ্গীকার।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিজয় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। এতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সভাপতির উদ্দেশে তার বক্তব্যের আগে একটি অভিনন্দনপত্র পাঠ করেন। সমাবেশটি পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, বেগম মতিয়া চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, কার্যনির্বাহী সদস্য মির্জা আজম, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণ ও উত্তরের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ ও সাদেক খান, যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আকতার, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার, তাঁতী লীগের সাধারণ সম্পাদক খগেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল চৌধুরী শোভন।
সারাবাংলা/এনআর/এমএনএইচ