Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার শপথ শেখ হাসিনার


১৯ জানুয়ারি ২০১৯ ২২:০৬

।। নৃপেন রায়, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ‘জয়বাংলা’র ঢেউয়ে-ঢেউয়ে বিশাল জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার শপথ নিলেন টানা তিনবারসহ মোট চারবার সরকার গঠন করা আওয়ামী লীগ সভাপতি  ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  একইসঙ্গে সদ্য অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে দলের নিরঙ্কুশ জয়কে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনরায় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।  এ সময় দলীয় নেতাকর্মীদের বিজয়যাত্রার দিক-নির্দেশনাও দেন শেখ হাসিনা।  শনিবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিজয় সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী সমৃদ্ধ দেশগড়ার শপথ নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে এই নির্দেশনা দেন।

বিজ্ঞাপন

বিজয় সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিজয় পাওয়া যত কঠিন, তা রক্ষা করে জনগণের সেবা করা আরও কঠিন। সেই কঠিন দায়িত্ব আমরা পেয়েছি, এটা সর্বান্তকরণে পালন করতে হবে। জনগণ যে রায় দিয়েছে, সেই রায় হচ্ছে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রায়। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে।’

নির্বাচনি ওয়াদা পূরণে কঠোর মনোভাবের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের ভোটের মর্যাদা রক্ষা করে তাদের জীবনমান উন্নত করার জন্য প্রয়োজনে বুকের রক্ত দিতেও আমি প্রস্তুত।’ তিনি বলেন, ‘সেই ওয়াদাই আজকে করে যেতে চাই।  তাই আসুন সবিই ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশকে গড়ে তুলি, আমাদের বর্তমানকে উৎসর্গ করি ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য।’

এই সময় সমাবেশস্থলে শোভা পাচ্ছিল বিশাল ফেস্টুনে তার উক্তি, ‘আমাদের বিজয় নয়, আাগামীর বাংলাদেশ নির্মাণে সেবকের দায়িত্ব পেয়েছি।’

আরও পড়ুন: জনগণের এই রায় দুর্নীতি-মাদক-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে: প্রধানমন্ত্রী

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অব্যাহত অগ্রযাত্রায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনন্য সাফল্যে বিশাল বিজয় সমাবেশের আয়োজন করে টানা মেয়াদে সরকার গঠন করা দলটি।  সমাবেশের অনুষ্ঠানটি দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম পর্বে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পীরা গান পরিবেশন করেন।  দলীয় নেতাকর্মীও শিল্পীদের বিভিন্ন পরিবেশনায় আনন্দ-উৎসবে নেচে-গেয়ে মাতিয়ে তোলেন বিজয় সমাবেশস্থল।  এ সময় পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পরিণত হয় জনসমুদ্রে। আবার ঢাকা মহানগর যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা লাল-সবুজ রঙয়ের ক্যাপ-গেঞ্জি পরে সমাবেশস্থলে আসায় লাল-সবুজের নতুন প্রাণে জেগে ওঠে জয় বাংলার জয়োৎসব।  দ্বিতীয় পর্বে বক্তব্য শুরু হয় ধর্মীয় গ্রন্থ  থেকে পাঠের মধ্য দিয়ে।

বিজ্ঞাপন

জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মমতাজ যখন মঞ্চে গান পরিবেশনের জন্য ওঠেন, তখনই সমাবেশ সঞ্চালক ড. হাছান মাহমুদ ঘোষণা করেন অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই সমাবেশ মঞ্চে উপস্থিত হবেন শেখ হাসিনা। এজন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মঞ্চে আসন গ্রহণ করার পর শিল্পীকে গান পরিবেশন করার আহ্বান জানান। আওয়ামী লীগ সভাপতি ৩টা ৫ মিনিটের দিকে মঞ্চে উঠে উপস্থিত জনতার প্রতি হাত নাড়িয়ে আসন গ্রহণ করেন। এরপর শিল্পী মমতাজ গান শুরু করেন। শিল্পী মমতাজ ‘শুকরিয়া রে শুকরিয়া’ এবং ওই আমার নানী গো… সব নেতার চাইতে আমার শেখ হাসিনাই ভালা, নৌকা মার্কাই ভালা’ গান দুটি পরপর পরিবেশন করেন।

এরপর সংসদ নির্বাচনের দলের নেতাকর্মীসহ আপামর মানুষের কাছে একটি ‘জয় বাংলা জিতবে এবার নৌকা’ গানটি  পরিবেশন করা হয়।

টানা তৃতীয় বারের বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখতে দলীয় প্রতীক নৌকার আদলে বিশাল মঞ্চ তৈরি করা হয়। মঞ্চে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকও উপস্থিত ছিলেন।  সমাবেশ মাঠে ছোট-বড় বৈঠাসহ নৌকা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত বিশাল ফেস্টুনে সুসজ্জিত করা হয়।

এরআগে ৩০ ডিসেম্বর টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের রেকর্ড করলেও বিজয় মিছিল না করার ঘোষণা দেয় দলটি। কিন্তু বিজয় আনন্দ থেকে নেতা-কর্মীদের বঞ্চিত না করার সিদ্ধান্ত নেয় দলের হাইকমান্ড। তাই শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিজয় সমাবেশে করার ঘোষণা দেয়।  আর টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের সুযোগ করে দেওয়ায় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের দুর্নীতি-মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার বার্তা দিলেন শেখ হাসিনা।

 আরও পড়ুন:  ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশ গড়ার আহ্বান শেখ হাসিনার

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিজয় সমাবেশকে বিজয় আনন্দে রূপ দিতে বরেণ্য শিল্পীদের বিভিন্ন পরিবেশনার অনুষ্ঠান রাখা হয়। এলক্ষ্যে মূল মঞ্চের সামনে পৃথকভাবে আরেকটি মঞ্চ করা হয়। ওই মঞ্চে একে একে শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন। মূল মঞ্চের ব্যাকগ্রাউন্ডে নির্বাচনি ইশহেতারের মলাটের আদলে করা হয়। যার দুই পাশে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার দুইটি বিশাল ছবি স্থান পায়। মঞ্চের সামনে দুই কর্নারে নির্বাচনি ইশতেহারের প্রতিশ্রুতির স্লোগানগুলো ঠাঁই পায়। এতে ‘মানসম্মত শিক্ষা, প্রবৃদ্ধির জন্য অবকাঠামো, জনগণের ক্ষমতায়ন, নিরাপদ ও শান্তির দেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই হবে সমৃদ্ধ, তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি, অর্থনীতির সমৃদ্ধি শীর্ষক স্লোগানগুলো স্থান দেওয়া হয়।

প্রথম পর্বে জনপ্রিয় শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। কয়েকজন জনপ্রিয় শিল্পীর পরিবেশনা বিজয় সমাবেশকে আনন্দ উৎসবের রঙে মাতিয়ে তোলে।  শিল্পীদের মধ্যে গান পরিবেশন করেন ফাহমিদা নবী, সালমা, আঁখি আলমগীর, রফিকুল আলম, জানে আলম, জলের গানের রাহুল আনন্দ, কণ্ঠশিল্পী মমতাজ, জয় বাংলা খ্যাত গানের তৌহিদ হোসেন।  ফাহমিদা নবী ‘লুকোচুরি গল্প’, ‘মন চায় উড়তে উড়তে’, আঁখি আলমগীর ‘বন্ধু আমার রসিয়া’, ‘জল পড়ে পাতা নড়ে তোমার কথা মনে পড়ে’ ও রাহুল আনন্দের ‘বকুল ফুল বকুল ফুল’ গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জয়োল্লাসে মেতে ওঠে লাখো জনতা।

সবশেষে জনতার জনসমুদ্রে মাতম তোলে ‘জয় বাংলা জিতবে এবার নৌকা’ গানটি।  গানটি পরিবেশনার সময় লাখো লাখো জনতা ‘জয় বাংলা’র ঢেউয়ে মেতে ওঠে। যা মঞ্চ থেকে হাসিহাসি মুখে দেখেন শেখ হাসিনা।

প্রসঙ্গত, ‘শেখ হাসিনার সালাম নিন/ নৌকা মার্কায় ভোট দিন/ জয় বাংলা/ জিতবে এবার নৌকা’ গানটি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের প্রচারণার জন্য নিজ তাগিদে তৈরি করেন একদল শিল্পী। গানটির রচয়িতা  তৌহিদ হোসেন।  এতে যৌথভাবে কণ্ঠে দিয়েছেন সরোয়ার ও জিএম আশরাফ।  সংগীতায়োজনে ছিল ডিজে তনু ও এলএমজি বিটস। সম্পাদনা ও কালার সমন্বয়ে ছিলেন মোহাম্মাদ হৃদয়।

এই বিজয় মহাসমাবেশকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাজধানীজুড়ে সতর্ক অবস্থান নেয়।

সারাবাংলা/এনআর/এমএনএইচ

দুর্নীতিমুক্ত শেখ হাসিনা সন্ত্রাসমুক্ত দেশ সরকার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর