হাইকোর্ট মাজারের টাকা লুট: অগ্রগতি নেই সিসিটিভি-নির্ভর তদন্তে
২১ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:০০
।। উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: একে একে ১২টি সিন্দুকের তালা ভেঙে হাইকোর্ট মাজারের টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও বিদেশি মুদ্রা লুটের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্তে কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি পুলিশ। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সিসিটিভি ফুটেজে শার্ট-প্যান্টপরা একজন লোককে দেখা গেছে। তাকে ধরতে দেশের সব থানায় ফুটেজের ছবি সরবরাহের মাধ্যমে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এমনকি ওই ফুটেজ তুলে ধরা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমেও। এর বাইরে মামলার তদন্তে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই বলেও জানানো হয়। মামলা তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপকালে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
রোববার (২০ জানুয়ারি) বিকেলে শাহবাগ থানায় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মনসুর আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘চুরির ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। ওই মামলায় হাইকোর্ট মাজারের চার নিরাপত্তাকর্মীকে (নাইট গার্ড) গ্রেফতার করা হয়। তারা বর্তমানে কারাগারে। গ্রেফতারের পর রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে চারজনের কাছ থেকে আলাদা তথ্য পাওয়া গেছে। ওইসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তবে তারা টাকা লুটের ঘটনায় জড়িত থানার কথা স্বীকার করেনি।’
চার নিরাপত্তাকর্মী যদি জড়িতই না থাকে, তবে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে কেন, এমন প্রশ্নের জাবে তদন্ত কর্মকর্তা মনসুর আহমেদ বলেন, ‘তাদের কারাগারে রাখা হয়েছে এইজন্য যে, সিসিটিভি ফুটেজে দেখতে পাওয়া ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পর যদি এই চারজনের নাম বেরিয়ে আসে। আর যদি এই চারজনকে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া না যায়, তবে তাদের ব্যাপারে আদালতে বলব। তখন জামিনে মুক্তি পেতে তাদের সমস্যা হবে না।’
আরও পড়ুন: হাইকোর্ট মাজারের ১২টি সিন্দুকের টাকা চুরি, আটক ২
এদিকে, মামলার তদারক কর্মকর্তা রমনা জোনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার এহসান ফেরদৌস বলেন, ‘হাইকোর্ট মাজারের সিন্দুক ভেঙে টাকা লুটের ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজে পাওয়া ব্যক্তিকে (নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি) ধরতে এরই মধ্যে রাজধানীসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে। তার ছবি গণমাধ্যমে দেওয়ার পর বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন পাওয়া যাচ্ছে। যেখানেই সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে, সেখানেই পুলিশ ছুটে যাচ্ছে। সব ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে ওই ছবি পাঠানো হয়েছে। ’
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘পুলিশের সব ইউনিটসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছেও একই ছবি সরবরাহ করা হয়েছে। জড়িতদের ধরতে ডিএমপির পক্ষ থেকে সবার সহযোগিতা চেয়ে গত ১৬ জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।’
পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাবের গোয়েন্দা শাখাও মামলাটির ছায়া তদন্ত করছে বলে জানা গেছে। এরপরও এতবড় চুরির ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত ও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি সম্ভব হচ্ছে না কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ‘কোনো কোনো মামলার ডিটেক্ট করা সহজেই হয়ে যায়। কিছু ঘটনা আছে, যেগুলোর দীর্ঘ তদন্তের প্রয়োজন হয়। মাজারের টাকা লুটের ঘটনাটির সঙ্গে জড়িত এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে না পারলেও তদন্ত কাজ চলছে। পুলিশ লেগে আছে। সময় লাগলেও নিশ্চয়ই জড়িত ব্যক্তি ধরা পড়বে।’
উল্লেখ্য, গত বছরের ২২ ডিসেম্বর রাতে হাইকোর্ট মাজারের ভেতরে থাকা ১২টি সিন্দুকের তালা ভেঙে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার ও বিদেশি মুদ্রা চুরি হয়। পরদিন টের পেয়ে পুলিশ মাজারের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। তারা হলো, শাহাজান মিয়া, আবদুর রাজ্জাক, মোতালেব হোসেন ও আলাউদ্দিন। জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হলেও গত ৪ জানুয়ারি শাহাজান, রাজ্জাক ও মোতালেবকে এবং ৭ জানুয়ারি আলাউদ্দিনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ড শেষে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। ওই চার জন এখন কারাগারে।
সারাবাংলা/ইউজে/এমএনএইচ